স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদে ঘরমুখো যাত্রী ঢলে রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণিত হয়েছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। তিল ধারণের ঠাঁই নাই কোথাও। লঞ্চের ডেকে, ছাদে কার্নিসে, সামনে-পেছনে তিন চার গুণের বেশি যাত্রী বহন করছে প্রতিটি লঞ্চ। ২২১ লঞ্চে যাত্রী ধারণক্ষমতার প্রায় ১০ গুণ বেশি যাত্রী টার্মিনালে সমাগম হওয়ায় এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ছেন বলে লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন। ঈদের শেষ কর্মদিবসে তৈরি পোশাক কারখানার কর্মীদের বড় অংশের ছুটি হওয়ায় এমন আকস্মিক যাত্রী ঢল নামছে বলে ধারণা করছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিটিএ)। সোমবার বেলা ১১টায় রায়সাহেব বাজার থেকেই চোখে পড়ে নৌপথ যাত্রীদের টার্মিনালের দিকে ধাবিত হতে। এর কিছু সময় পরই যাত্রী ঢল নামতে থাকে। বেলা বেড়ে দুপুর না হতেই ঘাটে থাকা কয়েকটি লঞ্চের ডেক যাত্রীতে প্রায় পূর্ণ হয়ে যায়। দুপুর না গড়াতেই ¯্রােতের মতো আসতে থাকে যাত্রীরা। মাথায়, হাতে, কোমরে, কাঁধে একাধিক তল্পিতল্পা নিয়ে নাড়ির টানে মরিয়া হয়ে ছুটছে সবাই। মালামাল নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ চলছেন লঞ্চের দিকে। বাংলাবাজার মোড় পর্যন্ত যাত্রী জোয়ার চলে আসে। পরিবার পরিজন নিয়ে টার্মিনালে পৌঁছাতেই হিমশিম খায় অনেকে। এতে ওই এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই এলাকায় বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনার সংবাদ না পেলেও বিছিন্নভাবে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সুন্দরবন ৭ লঞ্চের সিঁড়ি থেকে নদীতে পড়ে প্রায় ১০-১২ জন যাত্রী আহতের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট সঙ্গে সঙ্গে তাদের উদ্ধার করে। এছাড়া যাত্রীর ধাক্কায় অন্য এক যাত্রীর পা ভেঙ্গে ব্যাপক আহত হলে তাকে মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।
নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরিদা পারভিন বলেন, আমার দুইটি লঞ্চ অনিয়মের কারণে তিন জনকে আটক করেছি। লঞ্চগুলো যাতে ঠিকমতো পন্টুনে বার্দিং করে এবং অন্যকে বের হতে ও ঢোকার সুযোগ দেয় সে বিষয়ে পরিদর্শন করছি। ওভার লোড হলেই ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছি। এছাড়া আমরা সোমবার আরও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করছি।
দুপুরের মধ্যেই সদরঘাটের মূল ঘাটে থাকা ঢাকা-কালাইয়া রুটে চলাচলকারী বন্ধন-৫, ঢাকা-চরফ্যাশন রুটের কর্ণফুলী-১৩, ঢাকা-হাতিয়া রুটের ফারহান-৪, ঢাকা-বোরহানউদ্দিন রুটের প্রিন্স আওলাদ-৭, ঢাকা-ভোলা রুটের কর্ণফুলী-৪, ঢাকা রাঙ্গাবালী রুটের জাহিদ-৪ লঞ্চ যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায়। এময় তাদের ছেড়ে যেতে দেখা যায়।
এদিকে সরজমিনে দেখা যায়, টার্মিনাল থেকে পন্টুনে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিটিএ। পন্টুনে থেমে থেমে যাত্রী প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। যাত্রীদের প্রথমে টার্মিনালে প্রবেশ পথ আটকিয়ে অপেক্ষমাণ রাখা হচ্ছে। পরে টার্মিনাল থেকে গ্যাংওয়ে প্রবেশ পথ আটকানো হচ্ছে। এভাবে যাত্রীদের স্তরে স্তরে ভাগ করে লঞ্চে উঠার ব্যবস্থা করছে বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষ। এতে তাদের সহযোগিতা করছে পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিএনসিসি, রোভার, নৌ-পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্ট গার্ডের কর্মীরা। তবে এমন ব্যবস্থাপনায় যাত্রীদের বেপরোয় হয়ে উঠতে দেখা গেছে। তারা বলছে অগ্রিম টিকেট কাটে কেবিন ভাড়া নেয়ার সত্ত্বেও আমাদের লঞ্চে যেতে দেয়া হচ্ছে না। পরিবার পরিজন নিয়ে লঞ্চে উঠা দুষ্কর হয়ে পড়ছে অনেকের। তল্পিতল্পা নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে তারা। কে কার আগে যেতে পারে এ নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ লেগে যায় যাত্রীদের মধ্যে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিটিএ’র সহকারী পরিচালক মোঃ মীজানুর রহমান বলেন, আমরা যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে এমন ব্যবস্থা করেছি। সব যাত্রী যদি একবরে পন্টুনে প্রবেশ করে তাহলে পন্টুন নদীতে তলিয়ে যাবে। তাছাড়া আমরা সব যাত্রী একবারে ছাড়লে অনেক বৃদ্ধ, শিশু, মহিলা রয়েছে যাদের যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার মধ্যে পড়তে পারে। এজন্য আমারা থেমে থেমে যাত্রী প্রবেশের ব্যবস্থা করছি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: