সংবাদপত্রে আমরা যারা কলাম লিখি, তাদের একটা সাধারণ অভ্যাস হলো সেদিনের ডেইলি ফাইল হাতের কাছে রাখা। কারও কারও কোন বিশেষ পত্রিকার মাসিক ফাইল টেবিলে রাখার প্রয়োজনও পড়ে, কারও বা সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত রচনার ঢাউস ফাইল। ঢাকার দিনরাত লেখার সময় অবশ্য হাতের কাছে কিছু না রাখলেও চলে, কেননা কম্পিউটার হলো এমন এক জাদুর বাক্স যা প্রয়োজনীয় রসদ কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজির করে আনে। ‘গুগল মামা’ আপন মামার চাইতেও অনেক ভাল। সে যাক, আজ দিনের বিভিন্ন পত্রিকার গোছা নিয়ে বসেছি। আর দেখছি প্রথম পাতা ও শেষ পাতা। সংবাদপত্রের রিপোর্ট সত্য প্রকাশ করে, এটিই সাধারণভাবে প্রতিষ্ঠিত সত্য। পাঠকদের উদ্দেশে কয়েকটি শিরোনাম তুলে দিচ্ছি, যার ভেতর দিয়ে ঈদমুখী বাস্তব পরিস্থিতিই উপস্থাপিত হবে। জনকণ্ঠ দিয়েই শুরু করি।
প্রথম পাতার একটি শিরোনাম- ‘এবার ঈদযাত্রা ইতিহাসের সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক হবে- কাদের।’ জনকণ্ঠেরই এ পাতার আরেকটি শিরোনাম- ‘ঈদে প্রযুক্তিপণ্যও বিক্রি হচ্ছে দেদার।’ তার মানে মোবাইল সেট, ল্যাপটপ, কম্পিউটারও বিক্রি হচ্ছে জামা-জুতো-শাড়ি-কাপড়ের সমান্তরালে। ইত্তেফাকের প্রথম পাতার একটি খবর- সড়কে স্বস্তি থাকলেও বিলম্বে ছাড়ছে ট্রেন, রেলমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বাহ, দুঃখ প্রকাশের সৌজন্য করছেন আমাদের দেশের একজন মন্ত্রী! ভাল লাগল। কিন্তু এরপরই যে খবরে চোখ আটকে গেল, তাতে শঙ্কিত না হয়ে পারা গেল না। শিরোনাম- ‘ঈদের পর জঙ্গী হামলার আশঙ্কা।’ সমকালের বিরাট হেডিং- ‘ কেনাকাটার ধুম রাজধানীতে।’ হ্যাঁ, এই কেনাকাটা একেবারে চাঁনরাত পর্যন্ত চলবে। আর সেই রাতে দোকানপাট কয়টায় বন্ধ হবে আল্লামালুম। এই কেনাকাটার আনন্দের তুলনাই হয় না।
একেবারে দোরগোড়ায় এসে পড়েছে ঈদ। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে চারদিক খুশিতে ঝলমল করছে, মানুষ সাগ্রহে সাড়ম্বরে প্রতীক্ষা করছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের, কখন শুরু হবে ঈদ। অনেকে বলবেন, তার ঈদের খুশি শুরু হয় ঈদের নামাজ পড়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় থেকেই। ঈদ-উল- ফিতরে আনুষ্ঠানিক ঈদের শুরু নিশ্চয়ই ঈদগাহে বা কাছের মসজিদে নামাজ পড়ার মধ্য দিয়ে, আর গৃহিণীরা ঈদে অতিথি আপ্যায়নের যোগাড়যন্ত্রে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন সাতসকাল থেকেই, অনেকে আবার আগের রাতেই কাজ শুরু করে দেন। শিশুরা গোসল সেরে নতুন পাশাক পরার অপেক্ষায়। কিন্তু অনেকের কাছেই ঈদের খুশি শুরু হয় প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে দেশের বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করার ক্ষণটি থেকেই। একজন বললেন, প্রথম রোজা থেকেই তার শুরু হয় ঈদের প্রতীক্ষা, একই সঙ্গে টের পান আনন্দও। সব রোজা রাখেন তিনি, রাতে তারাবি পড়তে মসজিদে যান। ধর্মপালনে নিষ্ঠাবান এই ভদ্রলোকের ঈদের আনন্দের সঙ্গে তুলনীয় আর কী হতে পারে, এভাবেও ভাবা যেতে পারে। প্রচন্ড গরমের ভেতর সারামাস প্রতিদিন পনেরো ঘণ্টা করে খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা- এ এক কঠিন প্রতিজ্ঞা, সংযম ও অঙ্গীকার। যিনি রোজা রাখেননি, তিনি কি বুঝবেন তার কষ্ট ও আনন্দের তাৎপর্য? ওই রোজাদার ব্যক্তির ঈদ অন্যরকম আনন্দ নিয়ে আসে নিশ্চয়ই। কিন্তু যিনি নিয়মনিষ্ঠভাবে ধর্মাচার পালন করেন না, কিন্তু ঈদের জন্য তার ত্যাগ ও প্রস্তুতি থাকে অনেক, থাকে পরিকল্পনা। এই ব্যক্তির ঈদের খুশির ধরন কি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হতে পারে না? আসলে ঈদ সবার জন্যই আনন্দ বয়ে আনে। মুসলিম নয়, অন্য ধর্মাবলম্বী, তারাও কি ঈদের আনন্দে যুক্ত হন না? অবশ্যই হন। তারাও পাঠান ঈদের শুভেচ্ছা অন্তর্জালে কিংবা মোবাইলের ক্ষুদে বার্তায়। আমন্ত্রণের অপেক্ষা না করে চলে যান বন্ধুর বাড়ি। তার এই আনন্দ উৎসবে যুক্ত হওয়া দেখে মুসলিম বন্ধুটিরও কি আনন্দের ভাগ বেড়ে যায় না? বাংলাদেশের মানুষ যথেষ্ট অসাম্প্রদায়িক। অন্যের ধর্মপালনের প্রতি প্রত্যাশিত সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করে থাকেন। ফলে পরোক্ষভাবে হলেও পুজোর উৎসবে যোগ দেন বহু মুসলিম নাগরিক।
শিশু-কিশোর বয়সে ঈদের যে আনন্দ তার সঙ্গে আর কিসেরই বা তুলনা হতে পারে। ব্যক্তির যত বয়স বাড়ে, সেই আনন্দের তাগিদ ও উপভোগ ফিকে হতে থাকে। তখন আবার শিশু-কিশোরদের আনন্দ দেখেই ভিন্নতর এক খুশি ছলকে ওঠে হৃদয়ে। ছেলেবেলায় নতুন জামা-জুতো পরে আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি ঘুরে বেড়ানো আর নানা পদের লোভনীয় সব খাবার খাওয়ার মধ্যে যে মজা থাকে, তা চিরকালীন স্মৃতির সঞ্চয়। বাবা-মা রোজা রাখতে দিতে চান না, তবু কান্নাকাটি করে একটা-দুটো রোজা রাখা, পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে ঈদের দিন বাবা কিংবা বাড়ির মুরব্বিদের সঙ্গে ঈদগাহে যাওয়া বালক কিংবা কিশোরের মনে এক অনির্বচনীয় আনন্দ এনে দেয়। বলাবাহুল্য, বালিকা-কিশোরীদের মনেও সেই আনন্দের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে। একটু যারা বেশি সংবেদনশীল, তারা অনুভব করে এ মহাউৎসবে কোন কোন বন্ধু কিংবা সহপাঠীর অনুপস্থিতি। আবার পুজোর উৎসবে বা বড়দিনের ব্যতিক্রমী আনন্দ আয়োজনে যোগ দেয়ার সুযোগ মিললে ভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে সমাজের বিচিত্র উৎসব ও বিবিধ সংস্কৃতির অন্তর্গত সারসত্যটুকু জেনে ওঠা যায়।
শিশু-কিশোররাই কি কেবল ঈদের আনন্দে মশগুল হয়? ঠিক তা নয়, ঈদে সব বয়সীরই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আনন্দ আহরণ। গিন্নিরা ফিরনি-পায়েস আর পোলাও-কোর্মা ইত্যাদি উপাদেয় খাবার রান্না করে সুখ পান। এখনও এই কাজ তাদের একচ্ছত্র অধিকার বলে গণ্য করেন। বাড়ির আর দশটা নেমন্ত্রণের সঙ্গে ঈদের রাঁধাবাড়া আর খাওয়ানোর তৃপ্তিকর আনন্দ সমতুল্য হতে পারে না। সময় বদলালেও এখনও অনেক মা, এমনকি বড় বোনেরাও পরিবারের সদস্যদের জন্য নিজ হাতে পোশাক তৈরি করেন। প্রতিটি সেলাইয়ের ফোঁড়ে যেমন থাকে মমতা আর ভালবাসা, তেমনি প্রতিটি বুননে প্রাপ্তি ঘটে চলে অসাধারণ এক সুখ। ঈদের বহু আগে থেকেই এই সুখের সূচনা; এও ঈদেরই আনন্দ।
এতক্ষণ যা বললাম, তাকে সাবেক আমলের ঈদের বৈশিষ্ট্য বলে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইবেন আজকের শহুরে মধ্যবিত্ত তরুণ কিংবা তরুণী। কারণ তারা অভাগা; বৃহৎ পরিবারের বহুধাবিভক্ত এক ক্ষুদ্রাংশের বাসিন্দা, স্কয়ার ফিট মাপের ফ্ল্যাটের বিচ্ছিন্ন কক্ষে যার পৃথিবী পুরে রাখা। তার কাছে ঈদ কিছুটা বোরিং, কিছুটা ফাঁকা ঢাকায় হৈহুল্লার সুবর্ণ সুযোগ। ঈদের পোশাক হিসেবে পাঞ্জাবি তার তেমন পছন্দের নয়, তবু দু-চারটে গড়াগড়ি খায় ওয়ার্ড্রবে। নিতান্ত অনিচ্ছায় তার একটি বেছে নেয়া। যদিও তারও আছে কিছুটা নিকট অতীতের ঈদ-স্মৃতি। ঢাকার বাইরে ‘গরিব-গুর্বো’ শেকড়ে ফেরার অনিবার্যতা এবং সেইসঙ্গে এই হৃদয়হীন শহরে অভিভাবকের কোন স্বজন বা বন্ধুর বাসায় কিছুটা স্বতঃস্ফূর্ত কিছুটা আরোপিত আনন্দ সন্ধানের অভিজ্ঞতা। এই বাস্তবতাকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না, তবে এটি আমাদের সমর্থনও পায় না।
তারপরও বলব, প্রায় প্রতিটি মুসলিম পরিবারেই এমন একজন অন্তত ব্যক্তি থাকেন যিনি রমজান মাসের প্রতিটি রোজা পালন করেন, তারাবি পড়েন। এই যে একমাসের নামাজ রোজা পালন শেষে ঈদের দিনটি আসে, সে দিনটি ওই ব্যক্তির জন্য এক অসামান্য ভাললাগা বয়ে আনে। তার আনন্দের প্রকৃতি ও ধরন নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী। ঈদের দিন সকালে ঈদগাহে নামাজ পড়ে আসার পর সারাটা দিন হয়তো তিনি গৃহেই থাকেন, কোন আনন্দস্থলে যোগ দিতে যান না, কিংবা আনন্দের সন্ধানে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন না। তবু ঈদের দিন তার হৃদয় গভীরে যে আনন্দের সুর অনুরণিত হয়, তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আমার আব্বার কথাই বলি, আমাদের বহুজনের আব্বাও এমনই, নব্বুই ছুঁইছুঁই বয়সেও একটি রোজাও কামাই করেন না তারা। আব্বা শেষ দশ রোজায় মসজিদে অবস্থান করে মৌনব্রত পালন (এত্তেকাফ) করেছেন ইন্তেকালের ক’বছর আগেও। দশ গ্রামের এক সম্মানিত ধর্মভীরু ও ধর্ম-অভিভাবকের সন্তান হিসেবে আব্বা যতটা পেরেছেন ধর্মকর্মে নিয়োজিত থেকেছেন। তাঁর ঈদের দিনের খুশির সঙ্গে আমাদের ভাইবোনের ঈদ-আনন্দের কি তুলনা দেয়া সাজে?
মানি বা না মানি, ইন্টারনেটের ব্যাপকতা, সেলুলার ফোনের দাপট এবং আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনের আগের ও পরের ঈদের ভেতর এক বিপুল ব্যবধান রচিত হয়ে গেছে। সশরীরে নিকটাত্মীয়ের বাড়ি উপস্থিতির বদল ভার্চুয়াল দেখাসাক্ষাত কি ‘কোলাকুলি’ সেরে নেয়ার সুবিধা জনপ্রিয় হচ্ছে। ম্যাসেঞ্জারের ঝলসে ওঠা ইমেজ কিংবা ফোনের গ্রুপ টেক্সট হটিয়ে দিয়েছে রঙিন ঈদকার্ড পাওয়ার সূক্ষ্ম সুখ। চ্যানেলগুলো সাত দিন- দশ দিনের আনন্দ-পসরা সাজিয়ে বসছে। (এবার নিঃসন্দেহে তাতে বাগড়া দেবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সরাসরি সম্প্রচার) ঈদের অবকাশ যাপন অলিখিতভাবে দীর্ঘই ছিল, হয়তো এ বছর তা বিরাট অংশের জন্য নয়দিন পর্যন্ত প্রলম্বিত হচ্ছে। এ থেকে বিনোদন উৎপাদকেরা আরও উৎসাহিত হবে ধারণা করা যায়। নিজেকে গৃহবন্দী করে, অর্থাৎ কিছুটা সমাজবিচ্ছিন্ন অবস্থানে রেখে, উপভোগ-সর্বস্বতায় মজে ঈদ নামের আশ্চর্য সামাজিক, সাম্যবাদী ও ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল পরম সুযোগটি মানবিক বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। এই হারানোর ক্ষতি নিয়ে মোটেই ভাবিত নয় অধিকাংশ নাগরিক শিক্ষিত মন। এক আত্মঘাতী আত্মপরতা ও উদাসীনতার জালে জড়িয়ে ভোজনসুখ, পোশাকের ঝলক, আর বিনোদনের গ্রাহক হিসেবে মানবসত্তার সকরুণ পরিবর্তনে নিশ্চয়ই তবু কোথাও বিবেকবোধ জেগে উঠছে। ঈদে শত বিড়ম্বনা ও ভোগান্তি সহ্য করে রাজধানী থেকে কোটি মানুষ তার শেকড়ের কাছে ফেরেন। দেশের বাড়িতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার মধ্যে যে স্বস্তি ও শান্তি, তার ছিটেফোঁটাও কি থাকে মহানগরীর ফ্ল্যাটে বন্দী বিচ্ছিন্ন ঈদ উদযাপনে?
আপনি নিকটজনের সান্নিধ্যে মহানন্দে ঈদ করছেন। অথচ অনেকেরই ঢাকা ছেড়ে যাওয়া হয়নি নানা কারণে। তার ঈদ নিরানন্দে-মেশা; এমন বন্ধু কিংবা পরিচিতজনের কাছে আপনার একটি টেলিফোনই হয়ে উঠতে পারে মহা খুশির ব্যাপার। আমার পরিবারের সবার জন্য নতুন পোশাক হয়েছে। খুব কাছেরই কোন বস্তিতে ঈদ এসেছে বছরের বাকি ৩৬৪ দিনের মতোই। হঠাৎ আপনি সেখানে গেলেন কয়েকটা নতুন পোশাক নিয়ে। অচেনা বালক কিংবা মধ্যবয়সী কোন নারীর হাতে তুলে দিলেন তার কাছাকাছি মাপের কোন পোশাক। কেমন হবে? দেখুন ট্রাই করে তাদের আনন্দ আর হাসি দেখে আপনার নিশ্চয়ই মনে হবে, অপরকে সুখ দিতে পারলে এক ধরনের তৃপ্তি আর সুখ নিজের মনে এসেও ধরা দেয়।
হাসপাতালে দুস্থদের ওয়ার্ডে যান দোকান থেকে দু’তিন পদের কেনা খাবার নিয়ে। কুড়িজনের জন্যই নিন খাবারটা। ঈদের দিন অনেক রোগীরই কাটে স্বজনদের মুখ দেখার আশায়। অথচ তার সেই আশা পূরণ হয় না। না, আমি কোন মানবিক গল্প ফাঁদার চেষ্টা করছি না। বিশ্বাস না হয়, একবার গিয়েই দেখুন হাসপাতালে। দু’হাতে কয়েকটা খাবারের প্যাকেট নিয়ে। ঈদের দিন আপনার এই ‘বেড়ানোটি’ কিছুটা অস্বস্তিকর ও বেহুদা মনে হলেও আমার আবেদনে সাড়া দিয়ে যদি কাজটি আপনি করেন তাহলে আপনার অন্য ধরনের একটি অভিজ্ঞতা হবে- সেটা জোর দিয়েই বলতে পারি। মানুষ মানুষের জন্য। ঈদের আনন্দ যদি কিছুটা বাড়িয়ে নেয়া যায় অন্যকে আনন্দ দিয়ে তাহলে সেটা তো আপনি করতেই পারেন।
শত্রু“মিত্র ভেদাভেদ ভুলে সবার সঙ্গে মিলে মহান হয়ে ওঠার, বলা ভাল মানুষ হয়ে ওঠার বড় সুযোগ সামনে এনে দেয় ঈদ। অথচ আমরা এদিকটিতে কী সহজে উপেক্ষা করে যাই। নিজেকে বিলিয়ে দেবার গভীর আনন্দ-আহ্বান এড়িয়ে যাই। যদি তা না যেতাম, তাহলে আমরা নিশ্চয়ই ঈদের দিনটিকে পরমানন্দের দিবস করে তুলতে পারতাম। এবারের ঈদে কি আমরা এদিকটি বিবেচনা করে দেখব?
ঈদ মোবারক।
ঈদের ছুটিতে নিরাপদে থাকুন।
.
মন টানা নজর কাড়া জমজমাট বিশ্বকাপ ক্রিকেট
প্রথম দিন যথাসময়ে টিভিসেটের সামনে বসে পড়ি উদ্বোধনী ম্যাচ দেখব বলে। প্রতিটা বলই দেখতে চাই। মানে শতভাগ মনোযোগ দিয়ে। ইংল্যান্ডে হচ্ছে বিশ্বকাপ, প্রথম ম্যাচেই মাঠে নেমেছে স্বাগতিকরা। খেললও দারুণ। অন্তত মান রক্ষা হলো ৩০০ রান ছাড়িয়ে যাওয়ায়। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকাকেও বেশ লড়াকু মনে হচ্ছিল প্রথমে। কিন্তু ধীরে ধীরে তারা আত্মসমর্পণ করল অধিকতর শক্তিশালী টিমের কাছে। তারপরও বলব দুই দলই অনবদ্য ক্রিকেট উপহার দিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে এটা কী হলো? শুধু কি দ্বিতীয় ম্যাচ? তৃতীয় চতুর্থ প্রতিটি ম্যাচেই প্রথমে ব্যাটিং করা দল কুপোকাৎ হলো। লো-স্কোরিং ম্যাচ সবগুলোই। পাকিস্তান কোনমতে শতরানের সীমানা পেরুল। টি-টোয়েন্টি ম্যাচের চাইতে তারা আর মাত্র ১০টা বল বেশি খেতে পারল। যারা টিকেট কেটে মাঠে যান খেলা দেখতে তাদের মনের অবস্থার কথা ভাবি। ৫০ ওভারের খেলা যদি কুড়ি-বাইশ ওভারে শেষ হয়ে যায় তাহলে পয়সা উশুল হবে কী করে!
বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার, রবিবার প্রথম ম্যাচ খেলল বাংলাদেশ শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। প্রত্যাশা পূরণ হয়ে উপচে পড়লো যেন। অবিশ্বাস্য অবিস্মরণীয় রেকর্ড-গড়া এক ম্যাচ। একদিনের ক্রিকেটে টাইগারদের রেকর্ড-গড়া ৩৩০ রান সংগ্রহ। স্বপ্নের মতোই মনে হচ্ছে। এক খেলাতেই তো সব শেষ হয়ে যাচ্ছে না। সামনের আরও আটখানা ম্যাচ বাকি আছে। আনন্দে আটখানা হওয়ার মতো বিশেষ কিছু কি ঘটবে না আবার?
এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে মানুষের আশা-ভরসা একটু বেশি। ফলে আবেগও খানিকটা উর্ধমুখী। ইতোমধ্যে অধিনায়ক মাশরাফিকে নিয়ে গান বাঁধা সারা। গানের কথাগুলো এমন : ‘তুমি একই সুতোয় গাঁথতে পার, বাঁধতে পার একই বন্ধনে/সতেরো কোটির শিরায় শিরায় আছ তুমি প্রাণে স্পন্দনে।’ মাত্র দুই দশকের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতায় আজ বাংলাদেশ দল পরিণত লড়াকু এক অভিজ্ঞ টিম। এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেটশিকারি হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশের দু’-দু’জন বোলার- অধিনায়ক মাশরাফি (২৬৫ উইকেট) ও অলরাউন্ডার সাকিব (২৪৯ উইকেট)। এবারে এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ১০ দলের মধ্যে উইকেট নেয়ার অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। দলের ঝুলিতে রয়েছে ৮৫৫ উইকেট। ফলে উইকেটশিকারি দল হিসেবে এক ধরনের সাফল্য ধরে রেখেই ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ খেলতে গেছে বাংলাদেশ দল। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো এখন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা কোন দলের সঙ্গেই খেলতে সামান্যতম অস্বস্তি বোধ করে না। বিশ্বসেরাদের সমকক্ষই মনে করে দলের প্রতিটি খেলোয়াড়। ফলে মাঠের লড়াই যে হবে অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ তাতে কোন সন্দেহ নেই। অবশ্য সারা দেশের মানুষ টাইগারদের কাছে একটু বেশিই প্রত্যাশা করছে। বিশ্বকাপ যদি নাও জেতে বাংলাদেশ, তবু যেন সেমিফাইনাল খেলে আসে- এমন প্রত্যাশাই বেশি মানুষের। এই প্রত্যাশার চাপ কি এড়াতে পারবে টাইগাররা? দশের মধ্যে সেরা চার হতে হলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে ধারাবাহিকভাবে ভাল ফল করেই যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে হবে। সেটি অত সহজ নয়। কেননা বিশ্বের ক্রিকেট পরাশক্তিরাও নতুন নতুন কৌশল যোগ করবে। উপভোগ্য হয়ে উঠুক বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচ।
[email protected]
শীর্ষ সংবাদ: