ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রূপগঞ্জে দু’ শ’ স্পটে ক্রিকেট জুয়া ॥ সর্বস্বান্ত যুব সমাজ

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ৩ জুন ২০১৯

 রূপগঞ্জে দু’ শ’ স্পটে ক্রিকেট জুয়া ॥  সর্বস্বান্ত যুব সমাজ

মীর আবদুল আলীম ॥ বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হয়েছে সবেমাত্র চারদিন। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে ক্রিকেট জুয়া। বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জুয়াড়ি সিন্ডিকেট। বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে উপজেলার গ্রামে-গ্রামে, মহল্লায়-মহল্লায় শুরু হয়েছে জুয়ার আসর। জুয়াবাজির ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে রূপগঞ্জের যুবসমাজ। এ জুয়ায় কেউ কেউ কোটিপতি হলেও এর ফাঁদে পড়ে হাজারও মানুষ নিঃস্ব হয়। খেলা শুরু হলে ক্লাবগুলোতে এ জুয়াবাজিতে মত্ত থাকে রূপগঞ্জের স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্র ও বেকার যুবসমাজ। একেকটি আসরে আইপিএল, বিপিএল নিয়ে কম করে হলেও ১০ হাজার টাকার বাজি হয়। এসব খেলা নিয়ে হত্যাকা-ের ঘটনা ও অহরহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। রূপগঞ্জে চলতি বিশ্বকাপের ক্রিকেট জুয়ায় প্রায় কোটি টাকা হাতবদল হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ইতিপূর্বে ক্রিকেট জুয়ায় অনেক যুবক ও তরুণ নিঃস্ব হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এসব রোধে পুলিশ কিংবা প্রশাসনের কারও কোন মাথাব্যথা নেই। জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ বিপিএল, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ আইপিএল, অস্ট্রেলিয়ান প্রিমিয়ার লীগ বিগব্যাশ ঘিরে হাজার হাজার টাকার ফলাফল বাজি, ওভার বাজি, রান বাজিসহ বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলছে। তবে এবার চলতি বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে ঘিরে রূপগঞ্জের বিভিন্ন ক্লাব ও চায়ের দোকানের প্রায় ২০০ স্থানে এসব জুয়া খেলা চলছে। একেকটি স্পটে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকার বাজি চলছে। সে হিসেবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলাকালে প্রায় কোটি টাকার খেলা হয় বলে জানা গেছে। প্রতিটা চায়ের দোকানদার এ আসরের প্রধান কর্তা। তবে কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বসায় এ আসর। এসব আসরে স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা সময় কাটায়। তেমনি একটি আসর কায়েতপাড়া ইউনিয়নের মাইলাব এলাকার আবু বক্করের চায়ের দোকান। এ দোকানে দিন-রাত সমানতালে চলছে ক্রিকেট জুয়া। আবু বক্করের বক্তব্য, চা বেইচ্যা কয় টাকা পাই। তাই জুয়া খেলাইলে অনেক টাকা আহে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিপূর্বে এসব জুয়ায় ছনেরটেক এলাকার লিটন, কায়েমশাইর এলাকার সাত্তার, রুহুল খাঁ, মাস্টার শহিদুল, মিশুসহ হাজারো তরুণ, যুবক নিঃস্ব হয়েছে। জুয়ায় বাজি ধরাকে কেন্দ্র করে গত বছর মুড়াপাড়া এলাকায় রুবেল নামে এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। দাউদপুর এলাকায় কথা হয় হাশেম আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, রোজ সন্ধ্যায় বেলদী, কাজীরবাগসহ সব এলাকায়ই দোকানে দোকানে অনেক লোক একসঙ্গে টিভিতে খেলা দেখে। আসলে সবই জুয়ার আসর। তার মারফত এক জুয়াড়ির সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐ জুয়াড়ি বলেন, এ খেলায় ছাত্র, বেকার, ব্যবসায়ী সবাই জড়িত। এক হাজার থেকে ৫ লাখ সব অঙ্কের জুয়া হয়। ব্যক্তিগত পর্যায়েও জুয়া হয়। আবার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জুয়া কেনাবেচাও হয়। রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুল হাসান বলেন, এখন মনে মনে যদি কেউ জুয়া খেলে সেক্ষেত্রে কি করতে পারি। খেলা চলাকালে অভিযান চালাব। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। জুয়া সবকিছু ধ্বংস করে দেয়। সুতরাং এ বিষয়ে ছাড় নেই।
×