ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেমের টানে নারায়ণগঞ্জ থেকে গলাচিপা, অতঃপর!

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ৩ জুন ২০১৯

 প্রেমের টানে নারায়ণগঞ্জ থেকে গলাচিপা, অতঃপর!

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ প্রেমের টানে নারায়াণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে পটুয়াখালীর গলাচিপায় ছুটে এলেও ঘর সংসার কিছুই হলো না সাথী নামের এক তরুণীর। উপরন্তু তাকে তার প্রাণটাই হারাতে হলো। এর আগে তাকে দফায় দফায় নিঃগৃহীত ও নির্যাতিত হতে হয়েছে। একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছে। পুলিশের কাছেও মেলেনি সুবিচার। এমনকি তার প্রকৃত পরিচয়টাও পুলিশ উদ্ধার করেেত পারেনি। বরং পুলিশের ঢিলেমির সুযোগে প্রতারক প্রেমিকসহ সাঙ্গোপাঙ্গরা গা ঢাকা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, চাষাঢ়া থেকে মাসখানেক আগে ২২ বছর বয়সী সাথী নামের ওই তরুণী প্রেমের টানে গলাচিপা আসে। গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের বাঁশতলা গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে মিরাজের সঙ্গে একই গার্মেন্টসে কাজের সুবাদে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মিরাজ তরুণীকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে। দিন কয়েক পর প্রেমিক মিরাজ কৌশলে তরুণীর কাছ থেকে টাকা পয়সা ও মোবাইল হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়ে। উপায়ন্তর না পেয়ে তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বিষয়টি গ্রামের মানুষের নজরে এলে তারা তরুণীকে আত্মহত্যা থেকে নিবৃত্ত করে এবং বুঝিয়ে শুনিয়ে রতনদী-তালতলী ইউনিয়নের দেওয়ান বাজার এলাকায় আবদুল্লাহ ওরফে সজল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তরুণীর বিয়ে দেয়। অন্যের সন্তান গর্ভে রয়েছে, আখ্যা দিয়ে সালিশ বসিয়ে আবদুল্লাহ তরুণীকে দিন কয়েক আগে তালাক দেয়। এ অপমান সইতে না পেরে দ্বিতীয় দফায় তরুণী কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বুধবার ২৯ মে সকালের দিকে কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তি তরুণীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেখে সটকে পড়ে। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করে আশঙ্কামুক্ত করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে বিউটি বেগম নামের এক নারী তরুণীকে নিয়ে যায়। বিকেলের দিকে ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে তরুণীকে আবার গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। শনিবার সন্ধ্যায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ওই তরুণী। পুলিশ নিহতের লাশ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। এর আগে জীবিত অবস্থায় পুলিশ তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ আখতার মোর্শেদ গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছিলেন, তরুণী এতটাই অসুস্থ যে কথা বলতে পারছে না। তবুও অস্ফুটভাবে জানিয়েছে তার বাড়ি দিনাজপুর। নাম জানিয়েছে সাথী। সে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকার একটি গার্মেন্টসে কাজ করে। তবে এসব তথ্য পুলিশ যাচাই করেনি বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। মৃত্যুর পরে অফিসার ইনচার্জ এবার জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে সাথীর মৃত্যু সম্পর্কে গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মোঃ রাজিব বিশ্বাস বলেন, বিষ খাওয়া অবস্থায় সাথীকে হাসপাতালে আনা হলে আমরা তার চিকিৎসা করে কিছুটা আশঙ্কামুক্ত করি। এরপর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিউটি বেগম ও ওই এলাকার এক ইউপি মেম্বার এসে সাথীকে বাড়ি নিয়ে যায়। আবার অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। এ সময় তার অবস্থার অবনতি ঘটে। সাথী অন্তঃসত্ত্বা ছিল। শনিবার বিকেলে তার মৃত্যু হয়। প্রেমের টানে ছুটে এসে এভাবেই অকালমৃত্যুর শিকার হতে হলো হতভাগা এক তরুণীর।
×