ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খাদ্যগুদামে নিম্নমানের চাল, তবুও বহাল কর্মকর্তা

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ৩ জুন ২০১৯

  খাদ্যগুদামে নিম্নমানের চাল, তবুও বহাল কর্মকর্তা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ সদর খাদ্যগুদামে নিম্নমানের চাল কেনার প্রমাণ পাওয়ার পরেও এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে গুদাম কর্মকর্তা। আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা শুধু তদন্ত কমিটি গঠন করেই দায় সেরেছেন আর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা তদন্তে গড়িমসি করছেন। অভিযোগ উঠেছে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে জেলা ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক গুদাম কর্মকর্তা মাজেদুর ইসলামের অবৈধ কাজকে বৈধ করতে নানা ফন্দি-ফিকির করছেন। জানা গেছে, চলতি বছর বোরো সংগ্রহের মৌসুমে মেসার্স শাহ মখদুম মর্ডান চালকলের অনুকূলে ৪০১ দশমিক ৯৪০ টন চালের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সংগ্রহ নীতিমালা অনুযায়ী মিলার সদ্য উৎপাদিত বোরো ধান ক্রয় করে নিজ মিলে চাল প্রস্তুত করে সেই চাল গুদামে সরবরাহ করবেন। কিন্তু মিলটি প্রায় ২ মাস যাবত চাল প্রস্তুত বিরত থাকায় তার পক্ষে চাল প্রস্তুত করে গুদামে সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। তবে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ওই মিলারের যোগসাজশে বাইরে থেকে ১৮ কেজি মূল্যের নিম্নমানের চাল ক্রয় করে গুদামে ঢুকান। ইতোমধ্যে ওই চালের দামও পরিশোধ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে গত ১৭ মে গুদাম কর্মকর্তা মাজেদুল ১২০ টন নিম্নমানের চাল গুদামে ঢুকিয়ে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা নাজমুল হক ভূইয়ার স্বাক্ষরে ৩৬ টাকা হিসাবে গ্রহণ করেছেন। পরে চালের গুণগতমান নিয়ে অভিযোগ উঠলে ২১ মে নাজমুল হক ভূইয়া, কেমিস্ট মমিনুল হক ও কারিগরি পরিদর্শক আল-সিহাবুল ইসলাম রাজশাহী খাদ্য গুদাম তদন্ত করেন। তারা চার নম্বর গুদামের মাঝে ৫২ নম্বর খামাল ভেঙ্গে ১ বছর আগের নিম্নমানের বোরো চাল কেনার সত্যতা পান। প্রেক্ষিতে মাজেদুল ইসলাম ও মিলারের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। তবে নিম্নমানের চাল পাওয়ার পরেও মাজেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তদন্তে আসার আগেই তার অফিসের ২০ মে তারিখের ১৭৩৭নং স্মারকে মূল্য পরিশোধ কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে নিজে অব্যাহতি নিয়ে তার অফিসের খাদ্য পরিদর্শক মোঃ আবদুর রহিমকে দায়িত্বভার অর্পণ করেন। আবদুর রহিম দায়িত্বপ্রাপ্তির পরে অধিকাংশ মিল পরিদর্শক করেন এবং শাহ মখদুম মিলটি বন্ধ দেখতে পান। ফলে সংগ্রহ নীতিমালা অনুযায়ী তিনি বাইরে হতে গ্রহণকৃত নিম্নমানের চাল ফেরত দিয়ে সংশ্লিষ্ট মিল হতে প্রস্তুতকৃত ভাল মানের চাল গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিতপত্র দেন। এতে গুদাম কর্মকর্তা মাজেদুল বিপাকে পড়েন। তার গুদামে বাইরে থেকে গ্রহণ করা প্রায় ১০০ টন চাল আটকা পড়ে যায়। তিনি দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। শুধু তাই নয়, কোন কারণ ছাড়াই ২৬ মে ১৮১৮নং স্মরকে আবদুর রহিমকে বাদ দিয়ে নীতিমালা পরিপন্থ’ী পাশের পবা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকির হোসেনকে মূল্য পরিশোধ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে বাধ্য করেন। এদিকে গুদাম কর্মকর্তা মাজেদুল তার কাছ থেকেও কোন অবৈধ সুবিধা হাসিল করতে না পারায় পরবর্তীতে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে ২৯ তারিখ দুপুরে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষর করিয়ে ব্যাংক থেকে প্র্রায় ২৯ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় এখন তারা ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গুদাম কর্মকর্তা মাজেদুর রহমান বলেন, তার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। তবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন বিষয়টি তদন্ত চলছে। যোগাযোগ করা হলে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন, রাজশাহী সদর খাদ্য গুদাম নিয়ে তারা বিপদে রয়েছেন। তিনি বলেন, সার্বিক বিষয়টি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তদন্ত করছেন। তিনি এখনও প্রতিবেদন দেননি। প্রতিবেদনের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×