ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকিতে গলাচিপার জয়বাংলার চর

থামছে না বালু উত্তোলন

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ৩ জুন ২০১৯

থামছে না বালু উত্তোলন

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার রামনাবাদ চ্যানেল থেকে বালু উত্তোলন থামছেই না। যখনই ভাটার টান লাগছে, তখনই একসঙ্গে গর্জন করে উঠছে ডজনেরও বেশি ড্রেজার মেশিন। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে জয়বাংলার চর ও রামনাবাদ চ্যানেলের দুই পাড়ের ফসলি জমিসহ শত শত বাড়িঘর। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধও পড়েছে ভাঙ্গনের হুমকির মুখে। এ বিষয়ে এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। উপরন্তু স্থানীয় প্রশাসনও বালুদস্যুদের দাপটের কাছে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে পটুয়াখালী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের সাংগঠনিক কমান্ডার ও কেন্দ্রীয় জয়বাংলা মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সভাপতি মোঃ নিজামউদ্দিন তালুকদার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে দেয় অভিযোগে উল্লেখ করেন, গত বেশ কিছু দিন ধরে একটি প্রভাবশালী মহল রামনাবাদ চ্যানেলের বুকে জেগে ওঠা জয়বাংলা চর সংলগ্ন এলাকা থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছে। প্রভাবশালীরা বালু উত্তোলনে এক ডজনেরও বেশি ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করছে। রাতদিন চলছে ড্রেজার মেশিন। বালু উত্তোলনকারীরা এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের দেয়া ইজারার চুক্তিপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ইজারা চুক্তিপত্রে গোলখালী নদী উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে রামনাবাদ চ্যানেল থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনে ১২ ফুটের অধিক গভীর করা যাবে না। ১৩ ফুট ঢাল সংরক্ষণ করতে হবে। নির্ধারিত স্থানের বাইরে বালু উত্তোলন করা যাবে না। বালু উত্তোলনে ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি ক্ষতি হয়, তা করা যাবে না। নোঙর নিষিদ্ধ স্থানে বালু উত্তোলন করা যাবে না। ইজারা চুক্তিপত্রে এমন আরও বেশ কয়েকটি শর্ত থাকলেও তার সবই উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত কয়েক বছরে রামনাবাদ চ্যানেলের পক্ষিয়া ও নলুয়াবাগী গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে একটি বিশাল চর জেগে উঠেছে। মুক্তিযোদ্ধারা ওই চরটি জয়বাংলার চর নামে নামকরণ করেন। পটুয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে চরটির এ নামকরণের ঘোষণা দেন। কিন্তু অবাধ বালু উত্তোলনের কারণে পুরো চরটিই এখন হুমকির মুখে পড়েছে। নিজামউদ্দিন তালুকদারের অভিযোগ, তিনি এমপি ও জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয় নি। এদিকে, সরেজমিনেও দেখা গেছে, একাধিক ড্রেজার মেশিন বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর পক্ষে পক্ষিয়া গ্রামের কৃষক মোঃ হানিফ হাওলাদার, আনোয়ার হোসেন, মোঃ তালেব, সাবেক ইউপি মেম্বার মোঃ কালু হাওলাদারসহ কয়েকজন জানান, চ্যানেলে ভাটার টান লাগলে তখন ডজনেরও বেশি ড্রেজার মেশিন একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে রাতে সবচেয়ে বেশি বালু উত্তোলন করা হয়। জোয়ারের সময়ে ড্রেজার মেশিনগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ এভাবে জয়বাংলার চর এবং সংলগ্ন এলাকায় বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে চ্যানেলের দুই পাড়ের ফসলি জমি ও বাড়িঘর ভাঙ্গনের মুখে পড়বে। এমনকি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধও হুমকিতে পড়বে। এতে এলাকার বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুহৃদ সালেহীন বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকেও তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, দিনের বেলা নির্ধারিত গোলখালী এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করা হলেও রাতে জয়বাংলার চরসহ আশপাশ থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। রাতে অভিযান পরিচালনায় নানা সমস্যা দেখা দেয়। তারপরেও ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে পাঁচটি ড্রেজার মেশিন জব্দ করা হয়েছে। আবার অভিযানের উদ্যোগ নেয়া হবে। উল্লেখ্য, গত ১৮ মার্চ দৈনিক জনকণ্ঠে এ বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে তা তদন্তের জন্য গলাচিপা উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে তিনি জানান, শীঘ্রই পুরো বিষয়টি তদন্ত করে কর্তৃপক্ষ বরাবরে জমা দেয়া হবে।
×