ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আফগানদের হার ৭ উইকেটে

ওয়ার্নারের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয়

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ২ জুন ২০১৯

 ওয়ার্নারের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয়

রুমেল খান ॥ একদিকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আগের ১১ আসরের প্রতিটিতেই অংশ নিয়ে সাতবার ফাইনাল খেলে হ্যাটট্রিকসহ মোট পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন পরাক্রম অস্ট্রেলিয়া, অন্যদিকে মাত্র এক আসরে অংশ নিয়ে (২০১৫) গ্রুপ পর্বেই বিদায় নেয়া ওয়ানডে ক্রিকেটের নবীন-আন্ডারডগ দল আফগানিস্তান। এই দুই দলের আগের দু’বারের মোকাবেলায় প্রতিবারই জিতেছিল অসিরা। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়েও এগিয়ে তারা (পঞ্চম, আফগানিস্তান দশম)। এই যদি হয় পরিসংখ্যান, তাহলে আবারও নতুন করে মোকাবেলায় যে কোন্ দল জিততে পারে, সে নিশ্চয়ই অনুমেয়। হ্যাঁ, আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের ব্রিস্টলে অনুষ্ঠিত চতুর্থ ম্যাচে শনিবার (এবারের বিশ্বকাপে এটিই প্রথম দিবা-রাত্রির ম্যাচ) যথারীতি জিতেছে অস্ট্রেলিয়াই, ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে। আফগানিস্তানের ২০৭ (অলআউট, ৩৮.২ ওভারে) রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া করে ৩/২০৯ রান (৩৪.৫ ওভারে)। গত বিশ্বকাপেও গ্রুপ পর্বে এই আফগানিস্তানকে হারিয়েছিল অসিরা। পার্থে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ৬/৪১৭ রান এবং ২৭৫ রানের জয় ... দুটিই ছিল বিশ্বকাপ-রেকর্ড। শনিবারের খেলায় তেমন কোন রেকর্ড অবশ্য হয়নি। তবে সবার দৃষ্টি ছিল দুই উইলোবাজের দিকে। গত বছর বহুল আলোচিত বল টেম্পারিং ইস্যুতে দুজন নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। এই বিশ্বকাপ দিয়েই কামব্যাক করেন তারা। ফলে এই ম্যাচে তাদের পারফরম্যান্স নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের কৌতূহল থাকাটাই স্বাভাবিক। একজন ডেভিড ওয়ার্নার, অন্যজন স্টিভেন স্মিথ। শনিবারের খেলায় ফিল্ডিংয়ে স্মিথ ১টি ক্যাচ লোফেন। ব্যাটিংয়ে তেমন রান পাননি। তবে ওয়ার্নার পেয়েছেন ধীর-স্থির-সংগ্রামী অথচ দুর্দান্ত অপরাজিত অর্ধশতক। শতকের কাছাকাছিও চলে গিয়েছিলেন প্রায়। ওয়ার্নার অবশ্য আক্ষেপ করতেই পারেন- প্রতিপক্ষের রানটা আরেকটু সামান্য বেশি হলেই শতকটি পেতে পারতেন তিনি! সবমিলিয়ে চোখ ধাঁধানো না হলেও মোটামুটি ভালই খেলেছেন দুজন। মজার ব্যাপারÑ ২০১৫ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে হারানোর সেই ম্যাচে ব্যাট হাতে উদ্ভাসিত নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন ওয়ার্নার-স্মিথ। ওয়ার্নার হাঁকিয়েছিলেন ১৭৮ রানের দুর্ধর্ষ সেঞ্চুরি, আর মাত্র ৫ রানের জন্য শতকবঞ্চিত হয়েছিলেন স্মিথ (৯৫)। এবারের আসর শুরুর আগে এশিয়ান ক্রিকেটের উদীয়মান দল আফগানিস্তান বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানকে হারানোর কারণে অনেকেই ভেবেছিলেন অস্ট্রেলিয়াকেও হারিয়ে অঘটন ঘটাতে পারবে তারা। কিন্তু মাঠের খেলায় আফগানদের সেভাবে পাত্তাই দেয়নি অসিরা। কুড়িয়ে নেয় অনায়াস জয়। ম্যাচে হারলেও আফগানিস্তান অবশ্য টসে জিতেছিল। মুদ্রা নিক্ষেপের লড়াইয়ে জিতে তারা ব্যাটিং বেছে নেয়। কিন্তু তাতে তেমন লাভ হয়নি। পুরো ৫০ ওভার তো দূরের কথা, ন্যূনতম ৪০ ওভারও খেলতে পারেনি অসি বোলারদের তোপে। অলআউট হয়ে যায় মাত্র ৩৮.২ ওভারেই। সংগ্রহ করে ‘কিঞ্চিৎ ভদ্রস্থ’ ২০৭ রান, যা এশিয়ার দুই সাবেক বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার চেয়ে তো অনেক বেশিই! যাহোক, অনেক কষ্টে-সৃষ্টে দু’শো পার করা ইনিংসে দলের টপ স্কোরার হন সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা নজিবুল্লাহ্ জারদান। ৪৯ বলে ৭টি বাউন্ডারি এবং ২টি ছক্কায় তার ৫১ রানের আক্রমণাতœক হাফ সেঞ্চুরিটি ছিল অনেক প্রশংসনীয়। এছাড়া ওয়ানডাউনে নামা রহমত শাহ করেন ৪৩ রান। অধিনায়ক গুলবদিন নাইবের ৩১, রশিদ খানের ২৭, হাশমতউল্লাহ্ শহীদীর ১৮ ও মুজিব উর রহমানের ১৩ রান ছিল উল্লেখযোগ্য। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন পেসার প্যাট কামিংস (৩/৪০) এবং লেগস্পিনার এ্যাডাম যাম্পা (৩/৬০)। এছাড়া মার্কোস স্টইন্স পান জোড়া উইকেট (২/৩৭)। মিচেল স্টার্ক পান ১টি উইকেট। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৬.২ ওভারেই স্কোরবোর্ডে ৯৬ রান জমা করে ফেলে অসিরা। আগ্রাসী স্টাইলে খেলা ওপেনার এ্যারন ফিঞ্চকে (৬৬ রান, ৪টি করে বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি মারেন তিনি) রানে ফিরিয়ে দেন আফগান বোলার-অধিনায়ক গুলবদিন নাইব। অপর প্রান্তে তখন স্বভাববিরুদ্ধ শ্লথ উইলোবাজি করছেন ওয়ার্নার, স্ট্রাইক রেট ৫০! ফিঞ্চ প্যাভলিয়নে ফিরলে ওয়ার্নারের সঙ্গে যোগ দেন ন্যাটা ব্যাটসম্যান উসমান খাজা। ভালই খেলছিলেন তিনি (২০ বলে ১৫ রান, ১টি বাউন্ডারি)। কিন্তু আফগান লেগস্পিনার রশিদ খানের দুর্দান্ত এক গুগলিতে বিভ্রান্ত হয়ে লেগ বিফোর উইকেট আউট হয়ে যান। দলের রান তখন ২৫ ওভারে ২/১৫৬। এরপর ওয়ার্নারকে নিয়ে ৪৯ রানের জুটি গড়েন তারই বল-টেম্পারিং কা-ের সেই সঙ্গী স্টিভেন স্মিথ (২৭ বলে ১৮ রান)। স্মিথকে আউট করেন স্পিনার মুজিব। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ক্রিজে এসেই বাউন্ডারি মেরে দলের পূর্ণ দুই পয়েন্ট পাওয়া নিশ্চিত করেন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের মতো অস্ট্রেলিয়ারও সমান ২ পয়েন্ট। কিন্তু রানরেটে পিছিয়ে থাকায় পয়েন্ট টেবিলে অসিদের অবস্থান চার নম্বরে।) নাইব, রশিদ ও মুজিব ১টি করে উইকেট লাভ করেন। এর অনেক আগেই অবশ্য হাফ সেঞ্চুরি করে প্রত্যাবর্তনটা স্মরণীয় করে রেখেছেন ওয়ার্নার। ৭৪ বলে আফগান লেগস্পিনার রশিদ খানের বলে স্কয়ার কাট করে বাউন্ডারি মেরে অর্ধশতকের মাইলফলকে পৌঁছান এই ন্যাটা ওপেনার। একদিবসীয় ক্রিকেটে এটা তার অষ্টাদশ হাফ সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৮টি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনিই, ঠিক চার বছর আগের বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে হারানোর ম্যাচের মতোই! তার মানে বিষয়টি কি দাঁড়াল- বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া বনাম আফগানিস্তান ম্যাচ হলে তাতে অস্ট্রেলিয়া জিতবে এবং টপ স্কোরার হয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কারটা বগলদাবা করবেন ডেভিড ওয়ার্নারই! হ্যাঁ, শনিবারের ম্যাচে অপরাজিত ৮৯ রান (বল ১১৪) করে ম্যাচসেরা যে তিনিই, এটা নিশ্চয়ই না লিখলেও পাঠকরা বুঝে ফেলেছেন। স্কোর ॥ আফগানিস্তান ৩৮.২ ওভারে ১০/২০৭ রান (নজিবুল্লাহ জারদান ৪৯, রহমত শাহ করেন ৪৩, গুলবদিন নাইব ৩১, রশিদ খান ২৭, হাশমতউল্লাহ
×