ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন

প্রকাশিত: ১০:৫০, ২ জুন ২০১৯

 ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন

সৌদি আরব আয়োজিত ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে শনিবার ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন নেতৃবৃন্দ। যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনা ইসরাইলের পক্ষে যাবে বলে ধারণা করছেন নেতৃবৃন্দ। এদিকে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই সৌদি আরবের পাশে দাঁড়িয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের আরব মিত্ররা। মক্কায় অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) শীর্ষ সম্মেলনে আরব ও উপসাগরীয় নেতারা জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার মতো যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত কর্মকা-ের নিন্দা জানিয়েছেন। গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের দখল দারিত্বের মার্কিন স্বীকৃতিরও নিন্দা জানানো হয় ওই বৈঠকে। এছাড়া যেসব দেশ জেরুজালেমে দূতাবাস খুলেছে সম্মেলন থেকে সেসব দেশকে বয়কট করার আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকের উল্লেখযোগ্য দিক হলো আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোর এই শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না ইরান ও তুরস্কের নেতারা। কয়েক দশকের মার্কিন নীতি উপেক্ষা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এই মাসের শেষের দিকে বাহরাইনে অনুষ্ঠেয় এক সম্মেলনে ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনার অর্থনৈতিক দিক নিয়ে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই প্রেক্ষাপটে ওআইসির শীর্ষ সম্মেলন থেকে এ বিবৃতি দেয়া হলো। এই পরিকল্পনাকে ‘শতাব্দীর চুক্তি’ বলে অভিহিত করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এই পরিকল্পনাকে ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছেন ফিলিস্তিনের জনগণ। তারা বলেন, ট্রাম্পের নীতি দেখে মনে হচ্ছে তিনি অন্ধভাবে ইসরাইলের পক্ষপাতিত্ব করছেন। খবর এএফপির। সৌদি বাদশাহ সালমান সতর্ক করে বলেন, উপসাগরীয় অঞ্চলে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহে ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এরই প্রেক্ষাপটে ইরানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে সৌদি আরবকে সমর্থন করল ৫৭ সদস্যের ওআইসি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলে ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীদের অন্তর্ঘাতমূলক ড্রোন হামলায় চারটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে দুটি সৌদি আরবের তেলবাহী জাহাজ। হামলায় সৌদি আরবের একটি তেলের পাইপলাইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি বাদশাহ সালমান এ মন্তব্য করেন। ওআইসি সদস্যদের উদ্দেশে বাদশাহ সালমান বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে, শুধু উপসাগরীয় অঞ্চল ও সৌদি আরবকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হচ্ছে না, জাহাজ চলাচল ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ নিরাপত্তাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে।’ তবে এসব অন্তর্ঘাতমূলক হামলায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে তেহরান। শীর্ষ সম্মেলন শুরুর অল্পকিছুক্ষণ আগে এক টুইটে বাদশাহ সালমান ‘আগ্রাসনমূলক হুমকি ও অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ’ মোকাবেলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ওআইসির মহাসচিব ইউসুফ বিন আহমেদ আল-ওদায়মিন বলেন, ‘সৌদি আরবের নিরাপত্তাকে খাটো করে দেখা মানে আরব ও ইসলামী বিশ্বের নিরাপত্তাকে কার্যত খাটো করে দেখা।’ ইরানের বিরুদ্ধে বিভেদের বীজ বপন করার অভিযোগ করে সৌদি আরব। শুক্রবার পর পর অনুষ্ঠিত দুটি সম্মেলনে উপসাগরীয় ও আরব নেতারা এ বিষয়ে সৌদি আরবের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। গত বুধবার ট্রাম্পের যুদ্ধংদেহী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলে গত ১২ মে সৌদি জাহাজে হামলার জন্য ইরানের নৌবাহিনীর মাইন দায়ী এটা অনেকটাই নিশ্চিত। এরপরই এসব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। পাঁচ দেশের সমন্বয়ে গঠিত তদন্তের ফল এখনও প্রকাশ করা হয়নি। বোল্টনের এই অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দেয় তেহরান। ইরান অভিযোগ করে, বোল্টন এ অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অশুভ ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে চান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে করা আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়ে ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তবে পরে ট্রাম্পের সুর কিছুটা নরম হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, তার সরকার ‘শাসনের পরিবর্তন’ চায় না। এএফপির এক চিত্রসাংবাদিক জানান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান গুরুত্বপূর্ণ ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না। আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি তুরস্ক ইরানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। দেশটি সম্মেলনে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভাসোগলুকে পাঠায়। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিও সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন না। গতবছরের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা করা হয়। এর ফলে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সুনাম আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়। এরদোগান সৌদি আরবে এলে এটা হতো জামাল খাশোগি হত্যার পর তার প্রথম সৌদি সফর।
×