ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিব-তাহির আর মুস্তাফিজ-রাবাদা লড়াই

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ২ জুন ২০১৯

 সাকিব-তাহির আর মুস্তাফিজ-রাবাদা লড়াই

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বিশ্বকাপে চতুর্থবারের মতো সাক্ষাত। তবে এর আগে যে তিনবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের মঞ্চে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ দল, তখন কাগিসো রাবাদা কিংবা মুস্তাফিজুর রহমান ছিলেন না। শুধু সাকিব আল হাসানই দুই বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে খেলেছেন। আর এই বিরাট মঞ্চে সাকিবের সঙ্গে একবারই সাক্ষাত হয়েছে ৪০ বছর বয়সী ইমরান তাহিরের। ২০১১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেয়া সাকিব সেবার ক্যারিয়ারের তিক্ততম হার দেখেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। যদিও ব্যাটে-বলে সেই ম্যাচে যথেষ্ট উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে তাহিরকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন সাকিব। এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ মঞ্চে ৮ বছর পর সাকিব-তাহির মুখোমুখি হচ্ছেন। আর পেস বোলিংয়ে বাংলাদেশের স্তম্ভ মুস্তাফিজুর রহমানের সমসাময়িক দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদা ক্যারিয়ারের শুরুতে ২০১৫ সালে পরস্পরের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলাদেশের মাটিতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে। এর মধ্যে রাবাদা অনেকখানি এগিয়ে গেছেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে, কিন্তু মুস্তাফিজ পিছিয়েছেন! এবার ৪ বছর পর আবার সাক্ষাত হবে দু’জনের। এবারের লড়াইয়ে উভয় দলের মূল ভরসা এই চার ক্রিকেটার। বিশ্বকাপ মঞ্চে নামার আগে সাকিব আবার ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হিসেবে তার জায়গা ফিরে পেয়েছেন। আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে তিনি ব্যাটে-বলে বেশ ভালই মেলে ধরতে পেরেছিলেন নিজেকে। তবে প্রায় দেড় মাস ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করে সেরে ওঠা সাকিব মাঝে মাত্র ৩টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল)। বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় সিরিজ তাই দারুণ উপযোগী হয়েছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের জন্য। এবার প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে আজ দ্য ওভালে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে তার ওপরই সব ভরসা ও আস্থা থাকবে। কারণ একাধারে ওয়ানডাউন ব্যাটসম্যান হিসেবে এবং দলের স্পিন বিভাগের মূল অস্ত্র সাকিব। অধিকাংশ দেশের বিপক্ষেই তিনি তার বাঁহাতি স্পিনে যেমন দেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক, তেমনি ব্যাট হাতেও শীর্ষস্থানীয়। অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কখনই বল হাতে ওয়ানডেতে তেমন সুবিধা করতে পারেননি সাকিব। সর্বশেষবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনি খেলেছেন ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। সেবার ৩ ম্যাচে ২৮ ওভার বোলিং করে ১৬৪ রান খরচায় মাত্র ২ উইকেট নিতে পেরেছিলেন। আর সার্বিকভাবে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ১৩ ম্যাচে ১১৭.১ ওভার বোলিং করে ১২ উইকেট নিতে পেরেছেন মাত্র। গড় ৪৭.৩৩ হলেও ওভারপ্রতি রান দেয়ার দিক থেকে বেশ মিতব্যয়িতা দেখিয়েছেন ৪.৮৪ ইকোনমিতে। এবার সেই পরিসংখ্যানে সাকিব কিছুটা কি উন্নতি করতে সক্ষম হবেন? প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় দুঃখটা আছে তার। ২০১১ বিশ্বকাপে সাকিবের নেতৃত্বে প্রোটিয়াদের কাছে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২০৬ রানের বিশাল ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেই ম্যাচে সাকিব বল হাতে ১০ ওভারে মাত্র ৪৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নেয়ার পর ব্যাট হাতে একাই লড়ে করেছিলেন সর্বোচ্চ ৩০। সেবারই প্রথম বিশ্বমঞ্চে প্রোটিয়া লেগস্পিনার ইমরান তাহিরের সঙ্গে মুখোমুখি হয়েছিলেন। তাহির সেই ম্যাচে ৫ ওভার বোলিং করে ২০ রানে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। ২০০৭ বিশ্বকাপে প্রথমবার সাকিব খেলেছিলেন প্রোটিয়াদের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে অবিস্মরণীয় জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ ৬৭ রানের। ব্যাট হাতে ৯ রান করলেও সাকিব বল হাতে ১০ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে রেখেছিলেন ভূমিকা। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সাকিবের এমন ভাল সময় খুব কমই এসেছে বল হাতে। যে ১৩ ম্যাচে বোলিং করেছেন তার মধ্যে সেরা নৈপুণ্য ৩৩ রানে ৩ উইকেট। তবে ব্যাট হাতে বাংলাদেশের পক্ষে অন্যতম সেরা পারফর্মার তিনি। ১২ ইনিংসে নেমে ৩ ফিফটিসহ ২৯.২৭ গড়ে সর্বাধিক ৩২২ রান করেছেন সাকিব। আর এই মুহূর্তে তিন নম্বর পজিশনে বেশ রানের মধ্যেই আছেন তিনি। তাই বাংলাদেশ দলের যেমন তিনি অন্যতম ভরসা, তেমনি প্রোটিয়াদের জন্য সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ। তাহির চলতি বিশ্বকাপে অন্যতম ভয়ঙ্কর ও সমীহ করার মতো লেগস্পিনারদের মধ্যে একজন। ইতোমধ্যে চলতি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে প্রথম ওভারেই বোলিং করে ইতিহাস গড়েছেন এবং দ্রুততম সময়ে উইকেটও শিকার করেছেন। তাই তাহিরকে নিয়ে বাংলাদেশের বোলিং বিভাগকে অবশ্যই পরিকল্পনা করতে হবে। প্রোটিয়াদের হয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে বিশ্বকাপ খেলার রেকর্ড গড়া তাহির আজ বাংলাদেশকে ভোগাতে পারেন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৭ ম্যাচ খেলে ৯ উইকেট শিকার করা তাহির অবশ্য তেমন সুবিধা করতে পারেননি। সেরা বোলিং নৈপুণ্য ৫০ রানে ৩ উইকেট শিকার। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার মূল বোলিং অস্ত্র রাবাদা। ডানহাতি এ পেসার ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করলেও প্রথমদিকে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। কিন্তু ঠিক একই সময়ে শুরু করা মুস্তাফিজ প্রথমেই সারাবিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন এবং ‘গ্লোবাল স্টারে’ পরিণত হয়েছিলেন। ‘অফ কাটার’ আর ‘ভয়ানক স্লোয়ার’ দেয়াতে অসম্ভব পটু মুস্তাফিজ ভয়ঙ্করতম বোলার হিসেবে আবির্ভূত হলেও টানা দুটি বড় ইনজুরিতে এখনও নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াই করছেন। তবে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ ও বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে নিজের হারিয়ে ফেলা রূপ ফিরে পাওয়ার যথেষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন। রাবাদার মুখোমুখি হয়েছিলেন একবারই ২০১৫ সালের জুলাইয়ে। সেবার ৩ ম্যাচের সিরিজে মুস্তাফিজ ৫টি আর রাবাদা ৮টি উইকেট নিয়েছিলেন। এর পেছনে মূল কারণ প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে যতটা পারদর্শী, বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা ততখানি নয়। এরপর আর প্রোটিয়াদের বিপক্ষে খেলা হয়নি মুস্তাফিজের। ২০১৫ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশের লড়াই হয়নি। এবারই প্রথম বিশ্বমঞ্চে খেলছেন মুস্তাফিজ ও রাবাদা। আজই প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবেন ফিজ, কিন্তু ২৪ বছর বয়সী রাবাদা খেলেছেন উদ্বোধনী ম্যাচ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৬ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন তিনি। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে মিরপুরে ২০১৫ সালের ১০ জুলাই অভিষেক হওয়া রাবাদা ১৬ রানেই ৬ উইকেট নিয়ে চমকে দিয়েছিলেন বিশ্বকে। কিন্তু পরে কিছুদিন সংগ্রাম করতে হয়েছে ধারাবাহিকতা রাখতে। এখন তিনি বিশ্বের ৫ নম্বর র‌্যাঙ্কিংধারী বোলার। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬ ম্যাচে ১৩ উইকেট শিকার করেছেন এবং আজও বড় ভোগান্তির কারণ হবেন তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। আর পুরো বিশ্বও তাকিয়ে থাকবে বিশ্বমঞ্চে প্রথমবার মুস্তাফিজ-রাবাদা লড়াই দেখতে। বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা চার তারকার বোলিং নৈপুণ্য বোলার ম্যাচ ওভার রান উইকেট সেরা গড় ইকোনমি সাকিব আল হাসান ১৩ ১১৭.১ ৫৬৮ ১২ ৩/৩৩ ৪৭.৩৩ ৪.৮৪ মুস্তাফিজুর রহমান ৩ ২৪.০ ৭৭ ৫ ৩/৩৮ ১৫.৪০ ৩.২০ কাগিসো রাবাদা ৬ ৪৮.০ ২১৮ ১৩ ৬/১৬ ১৬.৭৬ ৪.৫৪ ইমরান তাহির ৭ ৫৬.৩ ২৫৭ ৯ ৩/৫০ ২৮.৫৫ ৪.৫৪
×