ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে ভুল স্বীকার করলেন এ কে খন্দকার

অসত্য তথ্যের দায় আমার- ৭ মার্চের ভাষণে ‘জয় পাকিস্তান’ ছিল না

প্রকাশিত: ১০:২৬, ২ জুন ২০১৯

 অসত্য তথ্যের দায় আমার-  ৭ মার্চের ভাষণে ‘জয়  পাকিস্তান’ ছিল না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেন এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) এ কে খন্দকার। ২০১৪ সালে তার রচিত ‘১৯৭১ : ভেতর বাইরে’ গ্রন্থটির ৩২ পৃষ্ঠায় তিনি উল্লেখ করেন, ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের শেষে বঙ্গবন্ধু ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছিলেন। সেই সময়ই প্রকাশনা সংস্থা প্রথমা থেকে প্রকাশিত বইটির বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক তথ্য বিভ্রান্তির অভিযোগ ওঠে। দেশজুড়ে বয়ে যায় সমালোচনার ঝড়। সমালোচনার জের ধরে তিনি সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যানের পদ থেকেও পদত্যাগ করেন। সে ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর পর ঐতিহাসিক তথ্য বিভ্রান্তির অভিযোগ স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন মুক্তিযুদ্ধের এই উপসেনাপতি। সে সঙ্গে অসত্য তথ্যের দায়ভার নিয়ে বইটির বিতর্কিত অনুচ্ছেদটি প্রত্যাহারও করে নিয়েছেন তিনি। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ক্ষমা চান। বইটির ৩২ নম্বর পৃষ্ঠার ‘বিভ্রান্তিমূলক’ অংশটুকু পাঠ করে লিখিত বক্তব্যে এ কে খন্দকার বলেন, এই অংশটুকুর জন্য দেশপ্রেমিক অনেকেই কষ্ট পেয়েছেন বলে আমি বিশ্বাস করি। এই তথ্যটুকু যেভাবেই আমার বইতে আসুক না কেন, এই অসত্য তথ্যের দায়ভার আমার এবং বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণে কখনই ‘জয় পাকিস্তান’ শব্দ দুটি বলেননি। আমি তাই, আমার বইয়ের ৩২ নম্বর পৃষ্ঠার উল্লেখিত বিশেষ অংশ সংবলিত পুরো অনুচ্ছেদটুকু প্রত্যাহার করে নিচ্ছি এবং একই সঙ্গে আমি জাতির কাছে ও বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আমার বয়স এখন ৯০ বছর। আমার সমগ্র জীবনে করা কোন ভুলের মধ্যে এটিকেই আমি একটি বড় ভুল বলে মনে করি। গোধূলিবেলায় দাঁড়িয়ে পড়া সূর্যের মতো আমি আজ বিবেকের তাড়নায় দহন হয়ে, বঙ্গবন্ধুর আত্মার কাছে ও জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আশা করি, প্রথমা প্রকাশনী আমার বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠার বিতর্কিত অংশটুকু বাদ দিয়ে পুনর্মুদ্রণ করবে। ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক’ বলে তিনি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য শেষ করেন। এ কে খন্দকারের শ্রবণশক্তির সমস্যার কারণে গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তার স্ত্রী ফরিদা খন্দকার। ২০১৪ সালের আগস্টের শেষ সপ্তাহে প্রথমা প্রকাশনী থেকে বের হয় ‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’ বইটি। বইটি ঐতিহাসিক বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের অভিযোগের মধ্যেই এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ পায়। বর্তমানে ওই সংস্করণের ১৩তম মুদ্রণ রয়েছে। সেই সময় তুমুল বিতর্ক ও সমালোচনার কারণে কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন এ কে খন্দকার। এ কে খন্দকারের লিখিত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে চাইলে এ কে খন্দকার জানান, তিনি শুনতে পাচ্ছেন না। তার হয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন স্ত্রী ফরিদা খন্দকার। তিনি বলেন, বইটি প্রকাশের পরের দিনই ও (এ কে খন্দকার) এবং আমি সংশোধন করার কথা ভাবি। কিন্তু ওনারাই আমাদের তা করতে দেয়নি। বরং তারা বলেছেন, বন্দুকের গুলি একবার ছুড়লে আর তার পেছনে ছুটে লাভ কী! এরপর প্রথমা প্রকাশনীর প্রকাশক মতিউর রহমানকেও আমি ফোনে চেষ্টা করি, কিন্তু পাইনি। একবার পেয়ে বলি যে, এত বড় ভুল কীভাবে হলো? তখন তিনি বললেন, এটা তো আমি দেখি না। এর বানান, ব্যাকরণগত ভুল এগুলো দেখার জন্য আলাদা লোক আছে। এরপর আর তাকে পাইনি, আর সংশোধনও করতে পারিনি। দীর্ঘ পাঁচ বছর কেন বিষয়টি পরিষ্কার করেননি-জানতে চাইলে তিনি বলেন, বইটি প্রকাশের পর কী যে যন্ত্রণা সহ্য করেছি তা বলার মতো নয়। এজন্য আমরা চাইনি তাদের নাম বলে তাদেরকে এই যন্ত্রণায় ফেলি। এ সময় সাংবাদিকরা নাম জানতে চাইলে তিনি এ কে খন্দকারের অনুমতি নিয়ে বলেন, মঈদুল হাসান (মুক্তিযোদ্ধা ও তাজউদ্দীন আহমেদের সহকারী) এরপরে কাজী জাফরুল্লাহ...। কাজী জাফরুল্লাহকে আমি চিনতাম না, মঈদুল হাসানকে চিনতাম। এরপরে আরেকজন ওবায়েদ। আরও কে কে যেন ছিল। আমি নাম মনে করতে পারছি না। তারা কয়েকদিন ধরে আমাকে পাহারা দিয়ে রেখেছিল যেন এটা সংশোধন না করা হয়। সংবাদ সম্মেলনের পরে তিনি জানান, তিনি ভুল করে কাজী জাফরুল্লাহ বলেছেন, এটা আসলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী হবে। এত দিন পর সংবাদ সম্মেলনের কারণ কি-জানতে চাইলে ফরিদা খন্দকার বলেন, আমি চেষ্টা করেছি, কিন্তু সাংবাদিকদের সঙ্গে সখ্য না থাকায় চেষ্টা করেও তা করতে পারিনি। তিনি তার স্বামী এ কে খন্দকারের প্রসঙ্গে বলেন, বইটা সংশোধন না করাতে উনি কিন্তু মানসিক রোগী হয়ে গেছেন। সিএমএইচে চিকিৎসা নিয়েছেন একেবারে উন্মাদ হিসেবে। এখনও তার চিকিৎসা চলছে।
×