ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি ঘরে ঘরে

প্রকাশিত: ১০:২৫, ২ জুন ২০১৯

ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি ঘরে ঘরে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেষ হয়ে এলো মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা। কয়েকদিন পরেই দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। ঈদ সামনে রেখে ইতোমধ্যে ঘরে ঘরে ঈদ উদ্যাপনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দে ইরক হতে রাজধানী ছাড়ছে লাখ লাখ মানুষ। ঈদ-উল-ফিতরের প্রধান অনুষঙ্গ ঈদের নামাজ। শেষ মুহূর্তে সারাদেশে সর্বাত্মক চলছে ঈদ জামাতের প্রস্তুতি। দেশের প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের প্রধান জামাতের নামাজ আদায়ের জন্য সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহ প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্নের পথে। দেশে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদ-উল-ফিতর। প্রিয়জনকে নিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। রাজধানীর প্রতিটি স্পটে এখন ঘরে ফেরা মানুষের ভিড়। অন্যবারের চেয়ে এবার স্বস্তিতেই ঘরে ফিরতে পারছে মানুষ। ঈদের আগে আর একদিন মাত্র অফিস- আদালত খোলা রয়েছে। আগামীকাল সোমবার শেষ অফিস। এর আগে আজ রবিবার রয়েছে শব-ই-কদরের ছুটি। এর সঙ্গে শুক্র-শনি সাপ্তহিক ছুটি থাকায় অনেকে গত বৃহস্পতিবার রাজধানী ছেড়ে চলে গেছে। শুক্রবার ও শনিবার ছিল ঘরে ফেরা মানুষের ভিড়। ঘরে ফেরার কারণে রাজধানী এখন প্রায় ফাকা হতে চলেছে। ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানীতেও ঈদ উদ্যাপনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। পাড়া-মহল্লায় ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে তৈরি করা হচ্ছে তোরণ। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতির সংগঠনের পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার টানাতেও দেখা গেছে। এদিকে রাজধানীতে চলছে ঈদ জামাত আয়োজনের প্রস্তুতি। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এবার প্রতিটি ওয়ার্ডে চারটি করে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে দেশের প্রধান ঈদের জামাত। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ বিভিন্ন ঈদগাহ ময়দানে একাধিক ঈদের জামাত অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঈদে রাজধানী ফাকা হয়ে গেলেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ঈদকে সামনে রেখে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা জানানো হয়েছে। এদিকে রমজানজুড়ে অব্যাহত দাবদাহ চললেও বর্তমানে আহাওয়ার বিরূপ পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে মৌসুমিবায়ু দেশের উপকূলীয় এলাকায় আসার কারণে বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গত শুক্রবার থেকে রাজধানীতে দুই দফায় বৃষ্টিতে রোজাদারদের মনে শান্তির পরশ এনে দিয়েছে। এছাড়া বৃষ্টির কারণে ঈদ যাত্রাও বেশ স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমিবায়ু আসার কারণে আগামী ১ সপ্তাহ নাগাদ সারাদেশে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে ঈদের দিনও বৃষ্টির আভাস দিয়েছে তারা। ফলে প্রচন্ড গরমের পরিবর্তে দেশবাসী স্বস্তিতেই এবারের ঈদ উদ্যাপন করতে পারবে। আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত যে অবস্থা, ততে ঈদের সময় বৃষ্টি হওয়ার আভাস আছে। ঈদের দিন ঢাকাসহ সারাদেশেই বৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা ছাড়া সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে বেশি বৃষ্টির আভাস আছে। দু’একদিনের ভেতর বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়বে উল্লেখ করেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৫ জুন অথবা ৬ জুন পালিত হবে পবিত্র ঈদ-উল- ফিতর। আগামী মঙ্গলবার চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, মঙ্গলবার দেশের আকাশে চাঁদ দেখা গেলে বুধবার পালিত হবে ঈদ-উল-ফিতর। আর চাঁদ দেখা না গেলে এবার রোজা ৩০টা পূর্ণ হবে। এদিকে ফিতরার হারও নির্ধারণ করে দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। সর্বানিম্ন ফিতরার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ টাকা। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী ফিতরা আদায় করতে পারবে। এবারের ঈদ-উল-ফিতরের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হবে। তবে আবহাওয়া প্রতিকূল অবস্থা বা অন্যকোন অনিবার্য কারণে এ সময়ে জামাত অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে হবে ঈদ জামাত। এদিকে ঈদের প্রধান জামাতের জন্য জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন আজ সকাল ১১টায় ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুতির কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঈদগাহে এবার ৯০ হাজার থেকে এক লাখ মুসল্লির জন্য নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়াও পাঁচ থেকে ছয় হাজার নারী মুসল্লির জন্য আলাদাভাবে পর্দা দিয়ে নামাজ আদায়ের বিশেষ ব্যবস্থা থাকছে। তাদের জন্য আলাদা প্রবেশ পথেরও ব্যবস্থা থাকছে। এতে অজুর পানি ছাড়াও খাওয়ার পানির জন্য ওয়াসাকে বলা হয়েছে। এছাড়া কাকরাইল, মৎস্য ভবন, জাতীয় প্রেসক্লাব, দোয়েল চত্বর ও এর আশপাশের র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত থাকবে। ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সিটি কর্পোরেশন ছাড়াও আলাদা ক্যামেরা ও কন্ট্রোল রুমের ব্যবস্থা থাকছে ঈদগাহে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় র‌্যাবের বোমা ডিসপোজাল ইউনিট এবং ডগ স্কোয়াড থাকছে। এছাড়াও ঈদগাহের চারপাশে সাদা পোশাকে গোয়েন্দারাও থাকবেন। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, বিদেশী কূটনৈতিক, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ সাধারণ মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করবেন। হিজরী বর্ষপঞ্জী অনুসারে রমজান মাসের শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদ-উল-ফিতর উৎসব পালন করা হয়। তবে কোন অবস্থাতে রমজান মাস ৩০ দিনের বেশি দীর্ঘ হবে না। ঈদের আগের রাতটিকে চলতি ভাষায় চাঁদরাত বা (চান রাইত) বলা হয়। শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদ পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি অনেক দেশে গাণিতিক হিসাবে ঈদের দিন নির্ধারিত হয়ে থাকে। তবে দেশে এখনও ঈদের দিন নির্ধারিত হয়ে থাকে দেশের কোথাও না- কোথাও চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে। ঈদের পূর্বে পুরো রমজান মাস রোজা রাখা হলেও ঈদের দিনে রোজা রাখা নিষিদ্ধ বা হারাম। ইসলামী বিধান অনুসারে ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে মুসলমানদের জন্য ফিৎরা আদায় করা ওয়াজিব। এটি এক ধরনের সাদকা বা দান হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে রোজার ভুলত্রুটি দূর করার জন্য আদায় করা হয় ফিৎরা। নিয়ম অনুযায়ী ঈদের নামাজের পূর্বেই ফিৎরা আদায় করতে হয়। তবে ভুলক্রমে ঈদের নামাজ পড়া হয়ে গেলেও ফিৎরা আদায় করা যায়।
×