ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদযাত্রায় ছোটখাটো বিড়ম্বনা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না

প্রকাশিত: ১০:২৪, ২ জুন ২০১৯

 ঈদযাত্রায় ছোটখাটো বিড়ম্বনা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে ট্রেন যাত্রায় ছোটখাটো কিছু বিড়ম্বনা যেন পিছু ছাড়ছে না। শুক্রবার ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রার শুরুর দিনেই সাত ঘণ্টা পর্যন্ত ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় হয়েছিল। এই ঘটনায় রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন দুঃখ প্রকাশ করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শনিবার থেকে এ ধরনের সঙ্কট আর হবে না। কিন্তু সমস্যার সমাধান মেলেনি। দ্বিতীয় দিনে সময়ের ব্যবধান এত বেশি না হলেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ঘরমুখো মানুষের। প্রতিটি ট্রেনের যাত্রীকে স্টেশনের টাইম ডিসপ্লের দিকে বারবার তাকাতে দেখা যায়। ট্রেনের সময় হলেও ডিসপ্লের তালিকায় নাম যুক্ত হয়নি! তার মানে বিড়ম্বনা যে হচ্ছে; তা নিশ্চিত। অপেক্ষা দীর্ঘ সময়। ট্রেন আসে না? অনেকেই স্টেশন মাস্টার ও ম্যানেজারের রুমে গিয়ে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ কাউন্টারে গিয়েও জানার চেষ্টা করেন কখন ট্রেন আসবে। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে সকাল থেকে বিকেল অবধি বেশকিছু ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে না যাওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন যাত্রীরা। এদিকে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সড়কপথে যাত্রী ভিড় বাড়লেও আশানরূপ নয়। সোমবার থেকে সড়কপথে ঘরে ফেরা মানুষের ¯্রােত বাড়বে বলে ধারণা করছেন তারা। নৌ-পথে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আস্তে আস্তে বাড়ছে যাত্রীর চাপ। কমলাপুরে ট্রেনের সিডিউল বিড়ম্বনা ॥ ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির শুরু থেকেই রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশার কথা শোনানো হচ্ছিল এবারের ঈদ যাত্রার ট্রেনের সিডিউল ঠিক ঠাক থাকবে। কিন্তু শুরুতেই ভোগান্তি। দ্বিতীয় দিনে কিছুটা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও সঙ্কট কাটেনি। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ও খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস বিলম্বে ছেড়েছে। এরমধ্যে নীলসাগর এক্সপ্রেসের যাত্রীরাই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। ট্রেনটি সকাল ৮টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে তিন ঘণ্টা দেরিতে সাড়ে ১১টার দিকে ছেড়ে যায়। রংপুর এক্সপ্রেস সোয়া এক ঘণ্টা দেরি করে কমলাপুর ছেড়ে যায় সোয়া ১০টার দিকে। কমলাপুর স্টেশনের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুর এক্সপ্রেসের নিয়মিত যে ট্রেন সেটি নির্ধারিত সময়ের পরও কমলাপুর এসে না পৌঁছানোয় এ ট্রেনের যাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় আরেকটি ট্রেন যুক্ত করা হয়। ফলে ট্রেনের আসন বিন্যাসেও আনা হয় পরিবর্তন। আর এতে চরম বিড়ম্বনা এবং দুর্ভোগের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন যাত্রীরা। ট্রেন যাত্রী আমিনুর রহমান জানালেন, আমি টিকেট কেটেছি এসির। কিন্তু এসি বগিতে আমি আমার সিট খুঁজে পাচ্ছি না। ট্রেনে যারা আছেন, তারাও কোন সমাধান দিতে পারছেন না। এই ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশে ট্রেন ব্যবস্থাপনা, সময়সূচী কোন দিনও ঠিক হবে না। নির্ধারিত সিট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই ট্রেনের আরেক যাত্রী বাশার। তিনি বলেন, আমি কোন সিটই পাইনি। সঙ্গে আমার স্ত্রীও আছেন। কীভাবে যাব। স্টেশন ম্যানেজারকে পর্যন্ত বললাম, তারপরও কিছু হয়নি। ট্রেনটি ছাড়ার সময়ও এই যাত্রীকে ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আবুল বাশারের মতো অনেক যাত্রীকে এ অভিযোগ করতে দেখা গেছে। কমলাপুরের স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আমিনুল হক বলেন, সকাল থেকে সারাদিনে ৫২টি ট্রেন আমরা চালাব। এর মধ্যে আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন মিলে (সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ) ১৭টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটা ছাড়তে গতকাল সাত ঘণ্টা লেট হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রী মহোদয়ের আশ্বাসের ভিত্তিতে আজকে আমরা বিকল্প রেক দিয়ে চালাচ্ছি। কিছুক্ষণ আগে (সোয়া ১০টায়) ছেড়ে গেল। আসনবিন্যাসে অব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমিনুল হকও স্বীকার করেন। এ নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এই ট্রেনটিতে আমরা সাধ্যমতো আসন রিপ্লেস করেছি। দুটি এসি চেয়ারকোচ কম থাকাতে ফার্স্ট ক্লাস চেয়ারে বা ফার্স্ট ক্লাস কেবিনে সিট দিয়েছি। সবগুলো সিটই আমরা বরাদ্দ দেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিট সঙ্কুলান করতে না পারায় কিছু সিট সাধারণ শ্রেণীতে দিতে হয়েছে। রংপুর এক্সপ্রেসের সূচী পরিবর্তনের কারণ বলতে গিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, গত ৩০ মে আমরা ট্রেনটি রাইট টাইমে ছেড়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু সেতুতে যাওয়ার পর ট্রেনটির একটি কোচ ড্যামেজ হয়ে যায়। ফলে ওইখানেই প্রায় তিন-চার ঘণ্টা সময় লাগে। যেতে-আসতে দেরি হওয়ায় আজকেও সেটি ছাড়তে দেরি হয়েছে। আগামীকাল থেকে সেটা হবে না বলে আশা করছি। চিলাহাটির নীলসাগর এক্সপ্রেসের যাত্রী নীলফামারীর আবিদা সুলতানা বলেন, ৮টায় ট্রেন, সাড়ে ৭টা থেকে স্টেশনে এসে বসে আছি দুই বাচ্চাকে নিয়ে। রেলের লোকদের কাছে জানতে গেলে খালি বলে আসবে আসবে। ডিসপ্লেতে দেখাচ্ছে, ১০টা ৫০ মিনিটে আসবে, আসলেই হয়। এই ট্রেনের অসংখ্য যাত্রীকে এভাবে বসে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ১৯ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এক ঘণ্টা দেরি করে কমলাপুর থেকে ট্রেনটি ছেড়ে যায় ৮টা ২০ মিনিটে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানান ট্রেনের যাত্রী মিথিলাসহ তার বন্ধুরা। বলেন, কষ্ট করে টিকেট পেয়েছি। যাত্রা পথেও ভোগান্তি। চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেনটিও আধাঘণ্টা দেরি করে কমলাপুর ছাড়ে। সকাল সোয়া ৭টার দিকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও আধা ঘণ্টা দেরি করে ট্রেনটি পৌনে ৮টায় ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। এ ট্রেনের যাত্রী জোবায়ের জানালেন, ব্যবস্থাপনার সঙ্কটের কারণে প্রতিদিন এমন দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। সদরঘাটে বাড়ছে যাত্রী ভিড় ॥ শনিবার সকাল থেকেই যাত্রীরা সদরঘাটে আসতে থাকেন। বেলা যত এগোচ্ছিল বাড়ছিল যাত্রীর সংখ্যা। দুপুরের মধ্যে ঘাটে থাকা বেশিরভাগ লঞ্চ যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাত্রী পরিবহনের জন্য দেড় শতাধিক লঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পরিবার পরিজন নিয়ে লঞ্চের অপেক্ষায় ছিলেন সবুর মিয়া। তার বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জে। তিনি সকাল ৯টা থেকে সদরঘাটে এসে পন্টুনে বসে আছেন। কোন লঞ্চ এখনও ঘাটে আসেনি। টার্মিনালে কোকো লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মিনার। তিনি যাবেন বরিশালের হিজলায়। তিনি বলেন, লঞ্চ সন্ধ্যা ৬টায় ছাড়বে। লঞ্চ ঘাটে আইলে বিশ্রাম কইরা নেব।’ দুপুরের দিকে ঘাটে থাকা ঢাকা-বরিশালগামী সুরভী-৮ লঞ্চে গিয়ে দেখা গেল, ডেক প্রায় যাত্রীতে ভরে গেছে। ঢাকার মাতুয়াইলে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করেন মবিন। তিনি বলেন, ‘জায়গা পাই কি না পাই এজন্য সকাল সকাল লঞ্চে চাইল্যা আসছি। ঈদের সময় তো ভিড় অয়। ঘাটে থাকা ঢাকা-দেওয়ানবাড়ী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী কর্ণফুলী-১ লঞ্চে গিয়ে দেখা গেছে লঞ্চ যাত্রীপূর্ণ। সদরঘাটের বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন টার্মিনালের ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর পন্টুন থেকে বরিশালের লঞ্চ ছেড়ে যাবে। ওয়াইজঘাটের টার্মিনাল থেকে পটুয়াখালী ও গলাচিপার লঞ্চ ছেড়ে যাবে। সদরঘাট ঘুরে দেখা গেছে, টার্মিনাল ও পন্টুনে টহল দিচ্ছে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের যন্ত্রপাতি নিয়ে প্রস্তুত থাকতে দেখা গেছে। মূল টার্মিনালের ভিআইপি গেটের ডান পাশে খোলা হয়েছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম। পন্টুন কিংবা টার্মিনালে কোন হকারকে বসতে দেয়া হয়নি। ঢাকা নদীবন্দরের (সদরঘাট) যুগ্ম-পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা) আলমগীর কবির বলেন, ‘যাত্রী বেশি হলে আমরা আজকে দেড়শর বেশি লঞ্চ দিতে পারব। আমাদের সেই প্রস্তুতি রয়েছে। সামগ্রিক যে পরিস্থিতি তাতে মনে হচ্ছে না ঈদের যাত্রী আজ ওইভাবে নামবে। আমাদের মনে হয় ঈদ যাত্রীদের এবার পছন্দের তারিখ ৩ জুন। নদীপথের যাত্রীরা ঈদে বাড়ি যেতে প্রতি বছরই একটি তারিখ নির্দিষ্ট করে। মনে করছি, মূল ভিড়টা ওইদিনই হবে। তিনি আরও বলেন, এখন যে যাত্রী যাচ্ছে তা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি।’ যুগ্ম পরিচালক আরও বলেন, সদরঘাটে প্রতিবন্ধীদের চলাচলের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে এটা টেকসই করতে হবে। এবার আমরা এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখছি। কেউ অসুস্থ হলে যাতে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া যায়।
×