ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওআইসির সহায়তা চাই ॥ রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে বসবাসের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশিত: ১০:২১, ২ জুন ২০১৯

ওআইসির সহায়তা চাই ॥ রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে বসবাসের  অধিকার  নিশ্চিত করতে  হবে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ওআইসিভুক্ত দেশের নেতৃবৃন্দকে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যেন মিয়ানমারে তাদের অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও বাস্তুসংস্থান নিয়ে বর্তমান বিশ্ব যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন তা মোকাবেলায় ওআইসিকে একটি কৌশল গড়ে তোলারও আহ্বান জানান তিনি, যাতে জোটের সদস্য দেশগুলো একে অন্যের জন্য কাজ করতে পারে। শনিবার ভোরে সৌদি আরবের মক্কার সাফা প্যালেসে ইসলামী দেশগুলোর জোট ওআইসির চতুর্দশ সম্মেলনে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। খবর বিডিনিউজের। সম্মেলনে ওআইসির এশিয়া গ্রুপের প্রতিনিধি হিসেবে দেয়া ভাষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে নিপীড়িত হওয়া এবং তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমার রাখাইন অঞ্চলে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় রোহিঙ্গাদের সম্মানের সঙ্গে প্রত্যাবর্তন এখনও অনিশ্চিত। ওআইসির ৫৭ সদস্য রাষ্ট্রের বাদশাহ, রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং প্রতিনিধিরা অংশ নেন এই সম্মেলনে। শুক্রবার রাতে শুরু হওয়া এই শীর্ষ সম্মেলনে অতিথিদের স্বাগত জানান সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। শেখ হাসিনা সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করলে বাদশাহ তাকে স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সম্মেলনের শুরুতেই বক্তব্য দেন সৌদি বাদশাহ। সংস্থার মহাসচিবের বক্তব্যের পর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা বক্তব্য দেন। গত মার্চে আবুধাবিতে ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের আইনগত অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এবং জবাবদিহি ও বিচার সম্পর্কিত প্রশ্নের বিষয়টি সামনে আনার লক্ষ্যে এই ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে যাওয়ার একটি পথ নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়াকে এতদূর নিয়ে আসার জন্য গাম্বিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা স্বেচ্ছায় তহবিল ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে মামলাটি চালু করার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে আবেদন করছি।’ সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের প্রতি বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণার বিষয়টি উল্লেখ তা মোকাবেলায় ওআইসির সক্রিয়তা প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনা। রিয়াদ সম্মেলনে নিজের দেয়া চারটি প্রস্তাব মক্কা সম্মেলনেও তুলে ধরেন তিনি। সেগুলো হলো অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা, সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ করা, মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ভেদাভেদ নিরসন ও সংলাপের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান করা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলামের আবির্ভাব হয়েছিল অন্ধকার জগতের আলোকবর্তিকা হিসেবে। কিন্তু অপব্যাখ্যার কারণে সন্ত্রাসবাদ ও সংঘাতের ভাবধারা হিসেবে ইসলামকে ভুলভাবে তুলে ধরা হচ্ছে।’ শেখ হাসিনা শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘খ্রীস্টান চার্চ আক্রমণের দুঃখভোগী পরিবারের প্রতি আমরা সহানুভূতি ও সংহতি জানিয়েছি, যে হামলায় আমার আট বছর বয়সী নাতি শেখ জায়ানও নিহত হয়।’ ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় সাহায্য-সহযোগিতাহীন মানুষ যেভাবে হত্যাকাণ্ডে শিকার হচ্ছে সে সব অসহায় মানুষের বেদনা ও যন্ত্রণার সঙ্গেও সংহতি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। ওআইসি যে লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল, তা পূরণ না হওয়ার কথাও সম্মেলনে তুলে আনেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের ফিলিস্তিনী ভাই-বোনদের জমি ও সার্বভৌমত্বের অধিকার ফিরিয়ে আনতে, উম্মাহর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা এবং মুসলিম বিশ্বের জনগণের মধ্যে একাত্মতা ও সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে ওআইসির জন্ম হয়েছিল। কিন্তু সাত দশক পরেও ফিলিস্তিনের সমস্যা এখনও বিদ্যমান এবং এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহ এখনও বিভক্ত।’ মুসলমানদের অমর্যাদা ও দুর্ভোগের অবসানের পথ নির্দেশনা তৈরি করতে সৌদি বাদশাহর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান বিশ্বে রয়েছে অর্থনীতি, বাস্তুসংস্থান ও নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ। এসব মোকাবেলায় ওআইসিকে একটি বিস্তৃত কৌশল গড়ে তুলতে হবে, যার মধ্যে সদস্য রাষ্ট্রগুলো একে অন্যের জন্য কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কৌশলগত সম্পদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি এবং যুবশক্তির বেশিরভাগই রয়েছে আমাদের হাতে। আমাদের নিজেদের সমস্যা নিজেদেরেই সমাধান করার সমক্ষতা থাকা উচিত।’ দারিদ্র্যকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অসঙ্গতি মোকাবেলার জন্য যৌথ ইসলামী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ওআইসি -২০২৫ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে হবে। ওআইসির ইনস্টিটিউশন বিশেষ করে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের নীতিমালা ও অনুশীলনগুলোকে ওআইসির এজেন্ডার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার ওপরও জোর দেন তিনি। পণ্য বাজারজাত ও পরিষেবায় ধারণা এবং উদ্ভাবন আজ ইসলামী বিশ্বের প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আওএম) উপ-মহাপরিচালক পদে প্রার্থী বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের জন্য ইসলামী দেশগুলো নেতাদের সমর্থন চান। ওআইসির চতুর্দশ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার বিকেলে জাপান থেকে সৌদি আরবে পৌঁছেন শেখ হাসিনা। সৌদি সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানা ছাড়াও রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন প্রমুখ। শনিবার সন্ধ্যায় ওমরাহ পালন করার কথা শেখ হাসিনার। এরপর রবিবার মদিনায় হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর রওজা জিয়ারত করবেন তিনি। সৌদি আরব সফর শেষে মদিনা থেকে জেদ্দা ফিরে সোমবার ভোরে ফিনল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। ফিনল্যান্ড সফর শেষে ৮ জুন দেশে ফিরবেন তিনি। ‘ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গলবার ঢাকা থেকে টোকিও পৌঁছেন শেখ হাসিনা।
×