ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কীটনাশক ছাড়াই লিচুর পোকা নিয়ন্ত্রণে সফলতা

প্রকাশিত: ১০:০৪, ২ জুন ২০১৯

 কীটনাশক ছাড়াই  লিচুর পোকা  নিয়ন্ত্রণে  সফলতা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ লিচু ছিদ্রকারী পোকা নিয়ন্ত্রণে এবার সফলতা পেয়েছেন রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী। ড. জিএম মোরশেদুল বারী ডলার নামের এ বিজ্ঞানী কোন ধরনের কীটনাশক ছাড়াই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছেন লিচুর প্রধান এ বালাই। এ কারণে সম্ভব হয়েছে নিরাপদ লিচু উৎপাদন। দুই বছরের গবেষণা শেষে এই প্রযুক্তি পৌঁছেছে চাষী পর্যায়ে। সাশ্রয় হওয়ায় এ জৈব বালাই ব্যবস্থাপনা সাড়া ফেলেছে স্থানীয় লিচু চাষীদের মাঝে। নতুন এ প্রযুক্তি নিয়ে কথা হয় বিজ্ঞানী ড. জিএম মোরশেদুল বারী ডলারের সঙ্গে। তিনি বলেন, মূলত ফলের বাড়ন্ত অবস্থায় পূর্ণ বয়স্ক পোকা বোঁটার কাছে খোসার নিচে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে কিড়া বের হয়ে বোঁটার কাছে ফলের শাশ ও বীজ খেতে থাকে। বোঁটার কাছে করাতের গুড়ার মতো পোকার মল জমে স্থানটি কালো হয়ে যায়। ফলের গুটি পচে যায়, অপরিপক্ব ও পরিপক্ব ফল ঝরে যায়। ফেব্রুয়ারি-মে মাসে গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ পোকার আক্রমণ দেখা যায়। ডিম থেকে বেরিয়ে লার্ভা গাছের নরম ও কচি অংশ যেমন বিকাশমান ডগা, পত্রবৃন্ত প্রভৃতিতে ছিদ্র করে। আক্রান্ত ডগা ফ্যাকাসে ও ঢলে পড়া ভাব দেখায় এবং ধীরে ধীরে শুকিয়ে মরে যায়। ড. ডলার বলেন, তার এ গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ক্ষতিকর কীটনাশক মুক্ত লিচু উৎপাদন করা। দুই বছর ধরে তিনি জৈব বালাই ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করেছেন। কীটনাশক ছাড়াই ফল ছিদ্রকারী পোকা নিয়ন্ত্রণে প্রায় শতভাগ সফলও হয়েছেন তিনি। চাষী পর্যায়ে এ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করা গেলে শতভাগ নিরাপদ লিচু উৎপাদন সম্ভব হবে। এ বালাই ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ডলার বলেন, ফল মটরদানা আকারের হওয়ার পর গাছ পুরোটাই ‘নেটিং’ করে দিতে হবে। এতে বাইরে থেকে ক্ষতিকর পোকা-মাকড় প্রবেশ করতে পারবে না। এর আগে গাছে নিমের তেল বা নিমের বীজ সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি গাছে স্প্রে করতে হবে। ফল সংগ্রহের আগের ২০ দিনে কোনভাবেই কীটনাশক প্রয়োগ করা যাবে না। ওই সময় জৈব বালাইনাশক স্পিনোসেড ১০ দিন পরপর দুই দফা প্রয়োগ করতে হবে। এর আগে ইমিডাক্লোরোপিড প্রয়োগ করা যেতে পারে। এতেই শতভাগ নিয়ন্ত্রণে আসবে ফল ছিদ্রকারী পোকা। এ পদ্ধতির বাইরে কেবল নেটিং করেও পোকা প্রতিরোধ সম্ভব। এ পদ্ধতিও ছিল গবেষণায়। তবে কেবল নেটিং-এ সফলতার হার কিছুটা কম। তাছাড়া বিরূপ আবহাওয়ায় আক্রমণ ঘটতে পারে এনথ্রাকনোজ। এ ক্ষেত্রে মুকুল ফোটার আগে এবং ফল পুষ্ট হওয়ার সময় ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। নেট খুলে ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পর আবারও নেটিং করে দিতে হবে। জেলার চারঘাট উপজেলার অনুপমপুরের সোহেল রানার লিচু বাগানে এ প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেছে ফল গবেষণা কেন্দ্র। সম্প্রতি এ বাগান ঘুরে এসেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের একদল বিজ্ঞানী। এ প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে স্থানীয় লিচু চাষীদেরও। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. দেবাশীষ সরকার বলেন, জৈব রোগ বালাই ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা ক্ষতিকর কীটনাশক থেকে মুক্তি দিতে পারে। বাগানে সময় মতো সার, সেচ এবং পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন এই বিজ্ঞানী।
×