ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্ঘটনার আশঙ্কা

কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের মাঝে বিদ্যুত খুঁটি রেখেই শেষ হচ্ছে কাজ

প্রকাশিত: ১০:০১, ২ জুন ২০১৯

  কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের মাঝে বিদ্যুত খুঁটি রেখেই শেষ হচ্ছে কাজ

এমএ রকিব, কুষ্টিয়া থেকে ॥ কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কে কুষ্টিয়া থেকে খোকসা পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার এলাকায় সড়কের বুকে অসংখ্য বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই শেষ হতে যাচ্ছে সড়ক পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার কাজ। রাস্তার মাঝে বিদ্যুতের এসব খুঁটি অপসারিত না হওয়ায় সড়কটিতে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে এ সড়ক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকলেও সড়কের মাঝের খুঁটি সরাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কিংবা বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড কার্যত ব্যবস্থা নেয়নি। সড়ক বিভাগ বলছে, তিন বছর আগে বিদ্যুত বিভাগের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু রাস্তার মাঝখানে এসব খুঁটি এখনও রয়েই গেছে। তবে বিদ্যুত বিভাগ ওজোপাডিকো তাদের অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করলেও কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুত সমিতি খুঁটিগুলো সম্পূর্ণরূপে অপসারণে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছে। সূত্র জানায়, ১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের কুষ্টিয়া থেকে খোকসা পর্যন্ত ২৮ কিমি সড়ক পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয় গত বছরের মার্চ থেকে। বর্তমানে ১৮ ফুট প্রশস্ত সড়কটি দুই পাশে আরও ৩ ফুট করে ৬ ফুট প্রশস্ত করার পাশাপাশি মাঝের ১৮ ফুট শুধু উপরের অংশ সিলকোট করা হচ্ছে। সড়কটি প্রশস্তকরণের ফলে রাস্তার পাশে থাকা বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুত সমিতির ১১ এবং ৩৩ কেভিসহ সহ¯্রাধিক বিদ্যুতের খুঁটি এখন সড়কের মাঝে চলে এসেছে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ এই বিদ্যুতের পোলগুলো সড়কের মাঝে রেখেই অবশেষে সড়ক পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শেষ হতে যাচ্ছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুমারখালী ও খোকসা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কের মাঝে বিদ্যুতের এসব পোল এখনও দাঁড়িয়ে আছে। খুঁটিগুলোর বেশিরভাগই পল্লী বিদ্যুতের আওতায়। এর মধ্যে বেশ কিছু খুঁটি রয়েছে চরম ঝুঁকির মধ্যে। দ্রুত এসব খুঁটি সরানো না হলে যে কোন সময় মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়রা এসব খুঁটি দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। কুমারখালীর স্কুল শিক্ষক শাহীনুর রহমান জানান, রাস্তার মাঝে বিদ্যুতের পোল থাকায় জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে এ সড়কে যাত্রী সাধারণ চলাচল করছে। এতে যে কোন সময় বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তিনি অবিলম্বে রাস্তার মাঝ থেকে এসব খুঁটি অপসারণের দাবি জানান। সূত্র মতে, রাস্তা থেকে এসব বৈদ্যুতিক খুঁটি সরাতে ১৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (ওজোপাডিকো) সাড়ে ৬ কোটি ও পল্লী বিদ্যুতের খরচ হচ্ছে পৌনে ৭ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে সিংহভাগ টাকা তাদের পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি টাকা চলতি অর্থবছরে দেয়া হতে পারে। সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, খুঁটিগুলো সরানোর জন্য টাকা পরিশোধ করা হলেও সরানোর কোন উদ্যোগ নেই। এই সড়কে দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় কয়েকশ’ বাস-ট্রাক চলাচল করে। এতে যে কোন মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সড়ক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, সড়ক নির্মাণের পর খুঁটি সরালে সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জহরুল কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আবুল হাশেম জানান, কুমারখালী উপজেলার আওতাধীন সড়ক নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ করার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু সড়ক থেকে এখনও বিদ্যুতের খুঁটি সরানো হয়নি। পরবর্তী সময়ে খুঁটি সরাতে গেলে সড়ক আবার খোঁড়া হবে। এতে সড়কের ক্ষতি হবে। তাছাড়া দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা তো রয়েছেই। সড়ক বিভাগ কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, নির্মাণাধীন সড়কের ২৮ কিলোমিটারের মধ্যে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লীবিদ্যুত সমিতির ৭ শতাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটির অধিকাংশই পড়েছে রাস্তার মাঝে, যা আমাদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ ওজোপাডিকো তাদের অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানালেও কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুত সমিতি তাদের খুঁটিগুলো সম্পূর্ণ সরাতে আরও সময় লাগবে বলে জানায়। ওজোপাডিকো কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী দাবি করেন, কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কে তাদের সব ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটি অপসারণ করে নিরাপদ দূরত্বে স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অপরদিকে পল্লীবিদ্যুত সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক জানান, রাস্তার মাঝ থেকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৬০/৭০ খুঁটি ইতোমধ্যে অপসারণ করা হয়েছে। বাকি খুঁটিগুলোও দ্রুততার সঙ্গে সরিয়ে নেয়া হবে।
×