ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারি যানবাহনের চাপে ধ্বংস হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২ জুন ২০১৯

  ভারি যানবাহনের চাপে ধ্বংস হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক

বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ ॥ সিরাজগঞ্জে গ্রামীণ সড়কগুলোতেও পণ্যবাহী ভারি যানবাহন চলাচল করছে। উন্নয়নের মহাসড়কে সড়কপথের উন্নয়নও ভারি যানবাহনের চাপে ধ্বংস হচ্ছে। গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে মালামালসহ সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৭ মেট্রিক টন ওজনের যানবাহন চলাচল করার নীতিমালা রয়েছে। এর বেশি ওজনের যান চলাচলের বিধান নেই। অথচ কেউ এ বিধান মানছেন না। বিধি-বিধান না মেনেই ভারি যানবাহন চলাচল করে সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, উপজেলা প্রশাসন, নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কারও না কারও এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় সরকারের সড়ক পথের উন্নয়ন ভেস্তে যাবে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংস্কার করা হয় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী-নলকা ফুলজোড় পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়ক। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এ সড়কটি চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ সড়কটি ছাড়াও একই অর্থবছরে মেরামত করা চাঁদপুর-ভাতহাড়িয়া হাট সড়কটির (২.২ কিলোমিটার) বিভিন্ন স্থানে খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নির্মাণ করা একই উপজেলার শিমলা আরএইচডি-রানীরহাট সড়ক, ধানগড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়-ঘুরকা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সড়ক, ভুইয়াগাঁতি-ধুবিল সড়ক, ধুবিল-আমসড়া সড়ক ও ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যেের নিমগাছী-সলঙ্গা সড়কসহ অর্ধশতাধিক পাকা সড়ক। এগুলোর এখন বেহালদশা। শুধু রায়গঞ্জ উপজেলাই নয়, সিরাজগঞ্জ সদর, তাড়াশ, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার আঞ্চলিক সড়কগুলোর অবস্থা প্রায় অভিন্ন। পাকা সড়কগুলোর সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ মাটির রাস্তাগুলোর অবস্থা আরও নাজুক। শুষ্ক মৌসুমে ধুলোয় মাখামাখি আর বৃষ্টি হলেই কাদায় পরিপূর্ণ এ সড়কগুলোতে পায়ে হেঁটে চলাই দুষ্কর হয়ে পড়ে। সম্প্রতি রায়গঞ্জের পাঙ্গাসী, ধুবিল, ধামাইনগর, সোনাখড়া, উল্লাপাড়ার সলঙ্গা, রামকৃষ্ণপুর ও হাটিকুমরুল এবং তাড়াশের মাধাইনগর, নওগাঁ, দেশীগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সরেজমিন অনুসন্ধানকালে এসব গ্রামীণ সড়কের চরম দুরবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, পানি উন্নয় বোর্ডের নদী শাসন কাজ,পুকুর জলাশয় থেকে উত্তোলিত বালু, পুকুর খনন ও জমির টপসয়েল কেটে সেই মাটি এবং ভাঁটির ইট পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত ভারি ভারি ট্রাক চলাচলের কারণেই ধ্বংস হচ্ছে এসব গ্রামীণ সড়ক। এসব বালু, মাটি ও ইট পরিবহন কাজে ১৫ থেকে ২০ টন ওজনের ড্রাম ট্রাক ব্যবহার করা হচ্ছে। যমুনা, করতোয়া, ফুলজোড়, ইছামতিসহ বিভিন্ন নদী ও জলাশয় থেকে বৈধ-অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, শস্যভা-ারখ্যাত এলাকাগুলোতে অসংখ্য পুকুর খনন ও কৃষি জমির টপসয়েল বিক্রি হচ্ছে অবাধে। এভাবে এ অঞ্চলে বালু ও মাটি বিক্রির ধুম পড়েছে। গ্রামের প্রভাবশালীদের কাছে মাটি বিক্রিই অন্যতম ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তোলিত এই মাটি স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টন ওজনের ড্রাম ট্রাক। আর মাটি খননে ব্যবহার করা হচ্ছে ভারি ভারি নানা সাইজের যন্ত্র। অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভারি ওজনের এসব যানবাহন চলাচলের কারণে ধ্বংস হচ্ছে গ্রামীণ পাকা, আধা পাকা ও কাঁচা সড়ক। অপরদিকে জেলায় দেড় শতাধিক বৈধ ও অবৈধ ভাটার মাটি এবং ইট সরবরাহ করা হচ্ছে এসব পথেই। এতে করে নানাভাবে চাপ পড়ছে গ্রামীণ সড়কগুলোর ওপর। কাঁচা রাস্তাগুলো একেবারেই চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আর পাকা সড়কগুলো সংস্কারের ৬ মাসের মধ্যেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে এবং ছোট-বড় অসংখ্য খানা-খন্দ সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে ধ্বংস হচ্ছে গ্রামীণ পরিবেশ, ক্রমশই বাড়ছে জনদুর্ভোগ। এ বিষয়ে ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার লিটন, ঘুরকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান সরকার ও ধুবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান ইমাম তালুকদার বলেন, ইউনিয়নের বেশিরভাগ সড়কই কাঁচা। টিআর ও কাবিখা এবং কর্মসৃজন প্রকল্পের বরাদ্দ দিয়ে এসব রাস্তা মেরামত করা হয়। কিন্তু মাটিবাহী বিশাল বিশাল ট্রাক এবং ইটভাঁটির ট্রাক চলাচল করে রাস্তাগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ বিষয়ে দফায় দফায় উপজেলা প্রশাসনের মাসিক মিটিংয়ে অবহিত করা হলেও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। নলকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার বলেন, ঢাকা-হাটিকুমরুল মহাসড়কের ফুলজোড় নদীর পাশের রাস্তাটির অবস্থা শোচনীয়। বছরখানেক আগে রাস্তাটি সংস্কার করে এলজিইডি। কিন্তু রাস্তার পাশে নদী থেকে উত্তোলিত বালু স্তূপ করে রাখা এবং ওই বালু পরিবহনের জন্য ভারি ট্রাক ব্যবহার করায় রাস্তাটি একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, আমাদের রাস্তা দিয়ে যানবাহন ও মালামালসহ সর্বোচ্চ মোট ৯.৭ টন ওজনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এর বেশি ওজনের যান চলাচলের বিধান নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিধি-বিধান না মেনেই ভারি যানবাহন চলাচল করে সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি আরও বলেন, রাস্তাগুলো মেইনটেইনেন্সের মেয়াদ থাকে ৪ বছর। কিন্তু অতিরিক্ত ভারি যানবাহন চলার কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা কোন পদক্ষেপ নিতে গেলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে।
×