ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাশরাফির শেষ বিশ্বকাপের শুরু রবিবার

প্রকাশিত: ১০:৩১, ১ জুন ২০১৯

 মাশরাফির শেষ বিশ্বকাপের শুরু রবিবার

মিথুন আশরাফ ॥ দেখতে দেখতে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অন্তিম লগ্নে চলে এসেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। টি২০ থেকে অবসর আগেই নিয়েছেন। টেস্ট খেলতে পারেন না। বাকি আছে ওয়ানডে ক্রিকেটটা। তা যে আর কতদিন খেলবেন সেই নিশ্চয়তা নেই। তবে এবার যে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলবেন, এটি মাশরাফির নিজের ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ হতে চলেছে। আর মাত্র মাঝখানে একদিন। আজকের দিনটাই। মাশরাফির এই শেষ বিশ্বকাপের শুরুটা রবিবার হচ্ছে। এদিন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্য ওভাল ক্রিকেট মাঠে লড়াই করবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে তিনটায় এই ম্যাচটি শুরু হতেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপের আসল মিশনও শুরু হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে দিন যত গড়াবে মাশরাফির শেষ বিশ্বকাপের দিন ক্ষণও ফুরাতে থাকবে। এই বিশ্বকাপই মাশরাফির শেষ বিশ্বকাপ। এমনও হতে পারে মাশরাফির শেষ ওয়ানডে টুর্নামেন্টও। মাশরাফি যদি আর ওয়ানডে ক্যারিয়ারই সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে না চান! যদি বিশ্বকাপের পরই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ইতি বলে দেন! শেষ বলে দিতেওতো পারেন। ওয়ানডে থেকেও অবসর নিয়ে নিতে পারেন। তাহলেতো আর কোন টুর্নামেন্ট খেলা হবে না। সেই সঙ্গে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে আর মাশরাফিকে দেখাও যাবে না। তবে ওয়ানডে থেকে অবসর না নিলে তাহলে সামনে যে ওয়ানডে সিরিজগুলো আছে, সেগুলো খেলতে পারবেন মাশরাফি। কিন্তু টুর্নামেন্ট পেতে তাকে অনেক অপেক্ষা করতে হবে। আগামী এশিয়া কাপ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। তাতে বোঝা যাচ্ছে, এবার বিশ্বকাপই শুধু নয়, কোন টুর্নামেন্টও শেষবারের মতো খেলতে যাচ্ছেন মাশরাফি। এই শেষের শুরুটাই সবার আগে রাঙ্গাতে চান। জয় দিয়ে শুরুটা করতে চান মাশরাফি। তা করতে পারবেন? অসম্ভব কিছু না। বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ২০০৩ সালে, ২০০৭ সালে, ২০১১ সালের বিশ্বকাপে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে সুপার এইটে ঐতিহাসিক জয়টি তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। তাছাড়া ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। এ মুহূর্তে ওয়ানডে ফরমেটে বাংলাদেশ কতটা শক্তিশালী দল তাতো প্রতিপক্ষ দলগুলোর ভাল করেই জানা আছে। বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলার পর এক এক করে ৫ জুন নিউজিল্যান্ড, ৮ জুন ইংল্যান্ড, ১১ জুন শ্রীলঙ্কা, ১৭ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০ জুন অস্ট্রেলিয়া, ২৪ জুন আফগানিস্তান, ২ জুলাই ভারত আর ৫ জুলাই পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে টাইগাররা। ৯টি ম্যাচ খেলতে হবে। এই নয়টি ম্যাচ খেলার পর যদি বাংলাদেশ পয়েন্ট তালিকার সেরা চারে থাকতে পারে তাহলে আরেকটি ম্যাচ খেলবে। সেটি হবে সেমিফাইনাল ম্যাচ। আর যদি কোনভাবে ফাইনালে ওঠার বড় স্বপ্ন সফল হয় তাহলেতো মাশরাফির শেষ বিশ্বকাপটা রাঙ্গিয়েই তুলবে বাংলাদেশ। ১০ দলের বিশ্বমঞ্চের ফাইনাল হবে ১৪ জুলাই লর্ডসে। সেই ফাইনালটাও যদি জয় হয়ে যায়। তাহলেতো ইতিহাস নতুনভাবেই রচনা করবে বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে উঠলেও মাশরাফির শেষ বিশ্বকাপটা হয়ে উঠবে রঙিন। সেই রঙিন একটি বিশ্বকাপ শেষ করার ইচ্ছাই এখন সব ক্রিকেটারের। শুধু নিজেদের জন্যই নয়, দেশের জন্য এবং মাশরাফির জন্যও। বিশ্বকাপের মিশনে খেলতে নামার আগে ত্রিদেশীয় সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো দুইয়ের অধিক দলের সমন্বয়ে হওয়া কোন সিরিজ বা টুর্নামেন্টের শিরোপা ঘরে তুলেছে। মাশরাফি তার নেতৃত্বে একটি শিরোপা অবশেষে পেয়েছেন। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। তবে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিতে ৯৫ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ৩৬০ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ২৬৪ রানের বেশি করতে পারেনি মাশরাফিবাহিনী। এ ম্যাচটি বাংলাদেশকে সতর্ক করে দিয়েছে। বিশ্বকাপের আগে এমন ধাক্কা খেয়ে পাক্কা হবে দল। দলেরই তাতে উপকার হয়েছে। ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি কঠিন পথ দেখলেও সহজভাবেই ভাবছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইমপসিবল (সেমিফাইনালে খেলা) কোন কিছুই না। অবশ্যই পসিবল। তবে কঠিন। অনেক কঠিন। এর আগে ওয়ার্ল্ডকাপ যে রকম ছিল গ্রুপ স্টিজে একটা বড় দলকে হারাতে পারলে যেটা হতো, তাদের কামব্যাক করা কঠিন হয়ে যেত। লিমিটেড গেমস ছিল। এখানে নয়টা ম্যাচ। যারা প্রত্যাশা করছে সেমিফাইনাল খেলবে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর অনেক সুযোগ থাকবে। আমাদের ওই জায়গাটা খেয়াল রাখতে হবে।’ সঙ্গে নিজের শেষ বিশ্বকাপ এবার, তাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি। বলেছেন, ‘এটাই আমার শেষ বিশ্বকাপ। আলাদা করে নিজেকে তৈরি করার কিছু নেই। বিশ্বকাপে এটাও আবার একটা প্রেসার। আমার কাছে মনে হয় না আলাদা করে তৈরি হয়ে ওখানে কিছু করতে পারব। প্লেয়ার হিসেবে আমাকে পারফর্ম করতে হবে। অবশ্যই অধিনায়কত্বটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। আমার যে দায়িত্বটা আছে সেগুলো চেষ্টা করব পুরোপুরি ঠিক করার।’ মাশরাফির জন্য দলের ক্রিকেটাররাও বিশেষ কিছু করে দেখাতে চান। মুশফিকুর রহীম যেমন বলেছেন, ‘মাশরাফি ভাই যদি এরপরে আর যদি বিশ্বকাপ খেলতে না পারে এটাই আমাদের এক সঙ্গে শেষ বিশ্বকাপ। তো আমরা সবাই চাইব মাশরাফি ভাইয়ের জন্য হলেও যেন বিশেষ কিছু করতে পারি। যা কি না স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমার মনে হয়, এটা অবশ্যই অনেক বড় সুযোগ।’ তবে মাশরাফির কাছে সবকিছুর উর্ধে আসলে শুরুটা জরুরী। এ নিয়ে মাশরাফি বলেছেন, ‘গত চার বছরে আমরা ভাল করেছি। এই বিশ্বকাপে শুরুটা ভাল চাই। শুরুটা ভাল করলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। বড় ইভেন্টে এটা জরুরী। শুরুটা ভাল হলে নির্ভর করা যায় কতদূর যাওয়া যাবে। আর আমাদের প্রথম প্রতিপক্ষ কিন্তু ফাফ ডু প্লেসিসের দল।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমাদের দলে সিনিয়র-জুনিয়র খেলোয়াড়ের মিশেল আছে। তারা টপ লেভেলের ক্রিকেট খেলছে। তাদের পারফর্মেন্সও দুর্দান্ত। ক’দিন আগেই আমরা আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতেছি। এটা আমাদের বিশ্বকাপে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।’ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে উড়ে গেছে। ১০৪ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে। ওভালেই হয়েছে খেলা। এই মাঠে বাংলাদেশ এখন শুরুটা ভাল করলেই হয়। তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রবিবার মাশরাফির শেষ বিশ্বকাপের শুরুটাও জয় দিয়ে দারুণ হয়ে যায়।
×