ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফিটিং হাউসগুলোয় একদন্ড ফুরসত নেই

প্রকাশিত: ১০:১৯, ১ জুন ২০১৯

 ফিটিং হাউসগুলোয় একদন্ড ফুরসত নেই

সমুদ্র হক ॥ দূর অতীতের খলিফা, পরবর্তী অধ্যায়ে দর্জি ও বর্তমানের টেইলারিং হাউসের সঙ্গে হালে যুক্ত হয়েছে ফিটিং হাউস। এরা আধা দর্জি। পরিচিতি ফিটিং মাস্টার। ঈদের আগে তাদের একদন্ড ফুরসত নেই। মধ্যরাত অবধি বৈদ্যুতিক অটো সুইং মেশিনের খচাং খচাং শব্দ। চলছে তৈরি পোশাক ফিটিংয়ের কাজ। সমুখে ঈদ। ধেয়ে আসছে দ্রুত। ক্ষণ গণনা শুরু। প্রতিটি বাড়িতে কেনাকাটার ধুম। সময় ছুটছে স্রোতের মতো। পছন্দের কাপড় কিনে দর্জি বাড়িতে (টেইলারিং হাউস) বানাবার সময়ও কমে আসছে। তৈরি পোশাক কিনতে ছুটছে মানুষ। ব্রান্ডের তাপানুকূল শোরুমগুলোতে উচ্চ ও উচ্চ মধ্যবিত্ত ঘরের তরুণ-তরুণীদের ভিড়। বেশিরভাগ শোরুমের সঙ্গে যুক্ত আছে ফিটিং দর্জি। তৈরি পোশাক অনেক সময় ছেলে-মেয়েদের শরীরে হয় ঢিলেঢালা না হয় আটোসাটো (টাইট) হয়। ফিটিং মাস্টার সেই পোশাককে শরীরে মানানসই করে দেন। শোরুম সংযুক্ত ফিটিং দর্জি ব্রান্ড প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ পাওয়া। এর বাইরে যারা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বৈদ্যুতিক অটো সুইং মেশিন কিনে ফিটিংয়ের কাজ করছে অনেকে। শোরুমের বাইরে যারা নিউমার্কেট ও আধুনিক মার্কেট থেকে তৈরি পোশাক কিনছেন তাদের অধিকাংশকেই ফিটিং হাউসে যেতে হচ্ছে। আবার হকার্স মার্কেট থেকে তৈরি পোশাক কিনলে এগুলো বেশিরভাগ ক্রেতার শরীরেই ফিটিং হয় না। বিদ্যুতচালিত অটো সুইং মেশিন জাপান ও চীনের তৈরি। সেলাই এতটাই নিখুঁত যে বোঝা যাবে না পোশাকটি আগে কেমন ছিল। ফিটিং মাস্টার শরীরের গঠন অনুযায়ী পোশাক কেটে সেট করে দেন। ফিটিং মাস্টার রাজু আলম বললেন, অটো মেশিনগুলোতে ওভার লক, ফ্যাট লক, সিঙ্গল লক আছে। যা দিয়ে সিঙ্গল ও ডাবল নিখুঁত সেলাই হয়। জানালেন ফিটিংয়ে খাটুনি বেশি। মূল পোশাকের যেন কোন খুঁত না হয় সেদিকে তীক্ষ্ন লক্ষ্য রাখতে হয়। তৈরি পোশাকের প্রসারে কাজ বেড়েছে ফিটিং হাউসগুলোর। নিকট অতীতে ঈদের সময়ে টেইলারিং হাউসের কদর ছিল বেশি। দিন পাল্টেছে। ঈদ উৎসবে রেডিমেড পোশাক বেশি। তরুণ-তরুণীদের পছন্দ বাহারি পোশাক। বড়দেরও পোশাক বানিয়ে নেয়ার চেয়ে রেডিমেডই বেশি পছন্দ। ফিট না হলে ফিটিং হাউস তো আছেই। মেয়েদের পোশাকের বেলাতেও তাই। সেই পোশাক ভারতীয় নায়িকা দীপিকা পাড়ুকনের পদ্মাবতী হোক আর দেশী প্রতিষ্ঠানের লং কটি, তাগা হোক। সালোয়ার কামিজ, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা যাই হোক ফিটিং হাউসগুলোর ফিটিং করা পোশাক দেখে মনেই হবে না এগুলো ব্রান্ডের নয়। যারা এই কাজগুলো করে তারাও এক ধরনের দর্জি। টেলারিং হাউসের অনেক শ্রমিক এখন ফিটিং হাউসের মালিক। যাদের কাজ খুব ভাল তাদের কদরও বেশি। ফিটিং করে নিতে খরচ হয় পোশাকের ধরন অনুযায়ী ১শ’ টাকা থেকে ৩শ’ টাকা। দামী পোশাক হলে আরও কিছুটা বেশি। এভাবেই গড়ে উঠেছে ফিটিং শিল্প। অন্য মৌসুমে তাদের কাজ কম। ঈদ মৌসুম শুরু হলেই তাদের পোয়াবারো অবস্থা।
×