ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে পাকিস্তান বিধ্বস্ত

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১ জুন ২০১৯

 ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে পাকিস্তান বিধ্বস্ত

জাহিদুল আলম জয় ॥ রীতিমতো যাকে বলে লন্ডভন্ড। বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে চলমান বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই উড়ে গেছে ১৯৯২ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। লজ্জার রেকর্ড গড়া ম্যাচে উইন্ডিজের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে আনপ্রেডিক্টেবল পাকিরা। শুক্রবার নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে সরফরাজ আহমেদের দলকে বলে-কয়ে ৭ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে উড়ন্ত শুরু করেছে উইন্ডিজ। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই যাচ্ছেতাই অবস্থা হয় পাকিস্তানের। এক ইনিংস ৫০ ওভারের। কিন্তু ২১.৪ ওভারেই মাত্র ১০৫ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিরা। এগারোজন মিলে কোনরকমে একশ রানের কোটা পূরণ করতে সক্ষম হয় বাবর-ফখর-ওয়াহাবরা! ১০৬ রানের অতিসহজ লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ক্যারিবীয়রা। মারকুটে ওপেনার ক্রিস গেইলের হাফ সেঞ্চুরি (৫০) ও নিকোলাস পুরানের অপরাজিত ৩৪ রানে ভর করে মাত্র ১৩.৪ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত (১০৮ রান) করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অসাধারণ এই জয়ে ২৭ রানে ৪ উ্ইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন উইন্ডিজ পেসার ওশানে থমাস। মজার বিষয়, পাকিদের লজ্জার ব্যর্থতার কারণে খেলা শেষ হতে এক ইনিংসেরও সময় লাগেনি। দু’দল মিলে ১০০ ওভারের মধ্যে খেলেছে মাত্র ৩৫.২ ওভার। অর্থাৎ এক ইনিংস শেষ হতে যে সময় লাগে তারচেয়েও কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা আগে ম্যাচ শেষ হয়ে যায়। টানা ১০ ওয়ানডেতে হারের লজ্জা নিয়ে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে মাঠে নামে পাকিরা। ঘুরে দাঁড়ানো দূরে থাক, ন্যূনতম প্রতিরোধই গড়তে পারেনি তারা। যে কারণে টানা হারের রেকর্ডটা ১১ ম্যাচে নিয়ে গেছে ওয়াসিম-ওয়াকারের উত্তরসূরিরা। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই খাবি খেতে থাকেন পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে শেলডন কটরেলের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন ইমাম উল হক (২)। দুই ওভার পর আন্দ্রে রাসেলের বাউন্সারে নাকাল হন আরেক ওপেনার ফখর জামান। আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত অবশ্য বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলছিলেন ফখর। ১৬ বলে দুটি চার আর এক ছক্কায় ২২ রান করা এই ব্যাটসম্যানের হেলমেটে বল লেগে সেটা পড়ে স্ট্যাম্পের ওপর। ফলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। পাকিস্তান তৃতীয় উইকেটটিও হারায় রাসেলের গতিতে। ১৪৫ কিলোমিটার গতির বলটিতে শট খেলতে একটু দেরি হয়ে যায় হারিস সোহেলের। ব্যাটে ছোঁয়া লেগে সেটি চলে যায় উইকেটরক্ষক শাই হোপের হাতে। ১১ বলে ৮ রান করেন হারিস। তখন পাকিদের দলীয় রান ৩ উইকেটে ৪৫। বরাবরের মতো ওয়ান ডাউনে নামা বাবর আজম একপ্রান্ত ধরে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনিও। ওশানে থমাসের অফ সাইডে বেরিয়ে যাওয়া একটি বলে ড্রাইভ করে উইকেটের পেছনে হোপের দুর্দান্ত ক্যাচ হয়ে ফেরেন তিনি। তার আগে ৩৩ বলে বাবর করেন ২২ রান। ৬২ রানে ৪ উইকেট হারানো পাকিরা এরপর আর কোন প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে তারা। বাকি সময়ে একে একে পাকিদের কোমর ভাঙ্গেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন হোল্ডার ও থমাস। ২০ নম্বর ওভারে শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হাফিজ ২৪ বলে ১৬ রান করে থমাসের শিকার হন। তখন পাকিস্তানের রান ৯ উইকেটে ৮৩ রান। দশম উইকেটে মোহাম্মদ আমিরকে নিয়ে ওয়াহাব রিয়াজ ১৩ বলে গড়েন ২২ রানের জুটি। এ কারণেই তারা কোনরকমে এক শ’ রানের কোটা পেরোতে পারে। ১১ বলে একটি চার আর দুই ছক্কায় ১৮ রান করা ওয়াহাবকে বোল্ড করে পাকিস্তানের ইনিংসের ইতি টানেন বিধ্বংসী থমাস। অর্থাৎ ২১.৪ ওভারে ১০৫ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে বল হাতে সবচেয়ে সফল থমাস। ২৭ রানে ৪ উইকেট নেন এই পেসার। ৪২ রানে ৩ উইকেট নেন অধিনায়ক হোল্ডার। এছাড়া আন্দ্রে রাসেল মাত্র ৪ রান খরচায় নেন মূল্যবান ২ উইকেট। এটি বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহ পাকিস্তানের। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৭৪ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ইমরান খানের পাকিস্তান। সেটিই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। এর আগে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর ছিল ১৩২। ২০০৭ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩২ রানে অলআউট হয়ে ৩ উইকেটে হেরেছিল পাকিরা। এছাড়া ১৯৯৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে শেন ওয়ার্নের স্পিন ঘূর্ণিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ১৩২ রানে আউট হয়েছিল তারা। সহজ লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে অনুমিতভাবেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিস গেইল ও শাই হোপ ইনিংস গোড়াপত্তন করতে নামেন। পঞ্চম ওভারে দলীয় ৩৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা। সাজঘরে ফেরেন হোপ (১১)। সপ্তম ওভারে দলীয় ৪৬ রানে আউট হন ওয়ান ডাউনে নামা ড্যারেন ব্রাভো (০)। এগারোতম ওভারে অর্ধশতক পূরণ করে আউট হন গেইল। তখন ক্যারিবীয়দের রান ৩ উইকেটে ৭৭। এরপর সিমরন হেটমায়ারকে সঙ্গে নিয়ে বাকি কাজটা সারেন পুরান। অর্থাৎ ১৩.৪ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১০৮ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পুরান অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে। পাকিরা ব্যর্থ হলেও বল হাতে উজ্জ্বল ছিলেন পেসার মোহাম্মদ আমির। শতভাগ ফিট না হলেও ক্যারিবীয়দের তিনটি উইকেটই তিনি কব্জা করেন। ৬ ওভারে ২৬ রান খরচায় উইকেটগুলো পান আমির। দুর্দান্ত জয়ের ম্যাচে গৌরবময় রেকর্ডের মালিক হয়েছেন উইন্ডিজ ওপেনার ক্রিস গেইল। পাকি বোলার হাসান আলির করা তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্সকে ছাড়িয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ছয় মারার রেকর্ড গড়েছেন। বিশ্বকাপে ২২ ইনিংসে ৩৭ ছক্কা হাঁকিয়ে এতদিন এই তালিকার শীর্ষে ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। ২৬ ইনিংসে ৩৯ ছক্কা হাঁকিয়ে এখন এক নম্বরে গেইল। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাঁকানোর তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক রিকি পন্টিং। তিনি ৪২ ইনিংসে মেরেছেন ৩১ ছক্কা। চতুর্থ স্থানে থাকা নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ২৭ ইনিংসে ছক্কা হাঁকিয়েছেন ২৯টি। ২৩ ইনিংসে ২৮ ছক্কা মেরে পঞ্চম স্থানে আছেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান ওপেনার হার্শেল গিবস। স্কোর ॥ পাকিস্তান ॥ ১০৫/১০; ২১.৪ ওভার (ইমাম ২, ফখর ২২, বাবর ২২, হারিস ৮, সরফরাজ ৮, হাফিজ ১৬, ওয়াসিম ১, শাদাব ০, হাসান ১, ওয়াহাব ১৮, আমির ৩*; হোল্ডার ৩/৪২, রাসেল ২/৪, থমাস ৪/২৭)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ॥ ১০৮/৩; ১৩.৪ ওভার (গেইল ৫০, হোপ ১১, ব্রাভো ০, পুরান ৩৪*, হেটমায়ার ৭*; আমির ৩/২৬, হাসান ০/৩৯)। ম্যাচসেরা ॥ ওশানে থমাস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
×