ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ১ জুন ২০১৯

বদলে যাচ্ছে ঢাকা  দক্ষিণ সিটি

মশিউর রহমান খান ॥ নাগরিক চাহিদা আর উন্নয়ন কর্মকা-ের সমন্বয়ের মাধ্যমে চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। ঢাকাকে বিভক্তির পর নতুন এ সিটি কর্পোরেশনটির নিজস্ব উদ্যোগ আর বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ সহায়তায় গত চার বছরে ক্রমান্বয়ে বদলে যাচ্ছে নতুন এ সিটি কর্পোরেশনটি। নগরের সীমানায় নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নে নানা উন্নয়নমূলক কর্মকা- গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমেই শত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকাসহ ঢাকা দক্ষিণের পুরো চেহারাতেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। উন্নয়নের স্রোতধারায় বর্তমানে অনেকটা বদলে যাওয়া এক বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত হচ্ছে। তবে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিক চাহিদাও দ্রুততার সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন সমস্যা। আন্তর্জাতিকমানের পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরি, রাজপথ থেকে শুরু করে ছোটবড় সকল প্রকারের রাস্তা, ফুটপাথ ও অলিগলি পর্যন্ত এলইডি বাতির আলোয় আলোকিত হওয়া, প্রায় সকল সড়কে মেরামত বা সংস্কার করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনে গিনেস বুকে রেকর্ড করা, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা, সিটি কর্পোরেশনের কাজে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করা, অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার- ফেস্টুন সরিয়ে দৃশ্যমান পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার চেষ্টা করা, বাস স্টপেজ নির্মাণ করা, নির্দিষ্ট স্থানের স্থায়ী জলাবদ্ধতা সম্পূণরূপে দূর করা, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানের হকার উচ্ছেদ করাসহ সর্বশেষ ধানম-ি নিউমার্কেট এলাকায় চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করা ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের অন্যতম উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে দেখা গেছে। এছাড়া বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে যা শেষ করা হলে দক্ষিণ সিটির চেহারাই পাল্টে যেতে পারে, হতে পারে আধুনিক বাসযোগ্য ঢাকা। ৪ বছর আগে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন অবিভক্ত ঢাকার প্রথম নির্বাচিত সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের পুত্র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময় এ সিটি কর্পোরেশনের অবস্থা সৃষ্টির পর থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় চলে গেলেও বর্তমানে তার অনেকটাই বদলে গিয়েছে। তবে ভোটারদের চাহিদার শতভাগ এখনও পূরণ করতে সক্ষম হননি নির্বাচিত এ নগরপিতা। তবে মেয়রকে প্রতিনিয়ত হাজারো সমস্যা আর নানা বাধা অতিক্রম করে জনগণের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্নভাবে মাঠে কাজ করতে দেখা গেছে। অন্তহীন সমস্যার এ ঢাকা শহরের একাংশের উন্নতিকল্পে কাজ করা মেয়র জনগণের মুখোমুখি হচ্ছেন প্রতিনিয়তই। নাগরিক সেবায় দায়িত্ব গ্রহণের পর তৎকালীন সিটি কর্পোরেশনের বর্ণনাহীন খারাপ অবস্থা থেকে গত চার বছরে দিনরাত কাজ করে অনেক ক্ষেত্রেই দক্ষিণ সিটি ব্যাপক সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছে। ঠিক তেমনি কিছু ক্ষেত্রে এখনও সফল হতে পারেনি বা নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণে খানিকটা ব্যর্থ হয়েছে আবার কোন কোন ক্ষেত্রে চেষ্টা সত্ত্বেও এসব উদ্যোগ আলোর মুখ দেখতে পারেনি। যদিও কিছু উন্নয়ন ও জনবান্ধব প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে শহরে ট্রাফিক জ্যাম কমানো, বেশ কিছু স্থানে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দূর না হওয়া, নতুন যুক্ত হওয়া ৮ টি ইউনিয়নের জনগণের নাগরিক সেবা চালু না করতে পারা, জনবল সঙ্কট দূর করতে না পারা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে না পারা, ট্রাফিক সিগন্যাল কার্যকর করতে না পারা, মশক নিধন কার্যক্রম পুরোপুরি সফল না হওয়াসহ রাস্তায় পার্কিং দূর করা, নতুন বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করতে না পারাসহ বেশ কিছু উদ্যোগ ঘোষণার পরও বাস্তবায়ন করতে না পারায় প্রতিনিয়তই নাগরিকদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে মেয়রকে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও নগরীর উন্নয়নে কাজ করতে রাজধানীর সেবাদানকারী সংস্থার সমন্বয় করতে না পারা, কর্পোরেশনের রাজস্ব আয়ের পথ বৃদ্ধি করতে না পারা, ফুটপাথ ও খোলাস্থান পুরোপুরি হকারমুক্ত করা, খাল ভরাট বন্ধ ও অবৈধ দখলমুক্ত করাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ দক্ষিণ সিটি গ্রহণ করলেও পুরোপুরি আলোর মুখ দেখতে পারেনি। মেয়রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নাগরিক সচেনতা সৃষ্টি আর নাগরিকগণসহ সেবাদানকারী সংস্থার সঠিক সমন্বয় ছাড়া কোনক্রমেই রাজধানীবাসীর শত বছরের সৃষ্ট সকল সমস্যার সঠিক সমাধান সম্ভব হবে না। তবে সমস্যা দ্রুত সমাধানে চেষ্টা চলছে এবং তা ভবিষ্যতে আরও কমাতে কাজ পুরোদমে চলছে। সবার সহযোগিতা পেলে আগামী বছরে তা অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৪ বছর আগে বিল বকেয়া থাকায় নগর ভবনের বিদ্যুত সংযোগ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়। এরপর থেকেই অধিক নাগরিক সেবার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে সৃষ্টি হওয়া ঢাকা দক্ষিণের দিকে নজর দেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। সরাসরি উন্নয়নের জন্য থোক বরাদ্দ থেকে শুরু করে প্রতিটি উন্নয়ন কাজের জন্য সার্বিক সহায়তদার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে কাজে নামেন মেয়র সাঈদ খোকন। পরিবর্তন হিসেবে দেখা গেছে, এক সময়ে বিভিন্ন অসামাজিক ও মাদকের আখড়ায় পরিণত হওয়া পার্ক ও খেলার মাঠ দখলমুক্ত করে বর্তমানে উন্নয়নের নির্মাণযজ্ঞ চলছে। বর্জ্যেের ভাগাড় হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এ নগর অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে অনেকটা পরিচ্ছন্ন নগরী। আধুনিক এসটিএস নির্মাণ, কর্মস্থলে ডিজিটাল হাজিরা নিশ্চিত, লাইভ মনিটরিং, নিবিড় তদারকি এবং নানা মোটিভেশনমূলক উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে। প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বছরের বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছে শান্তিনগর ও নাজিমউদ্দিন রোডের অধিবাসীরা। নগরীর অন্যান্য এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে ৯শ’ ৬০ কিলোমিটার সারফেস ড্রেন ও পাইপ নর্দমা পরিচ্ছন্ন, নতুন ড্রেন ও ফুটপাথ নির্মাণ করা হয়েছে। জানা গেছে, নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডকে নিয়ে একটি পরিকল্পিত মডেল শহর হিসেবে গড়ে তুলবে ডিএসসিসি। সমাজের অসহায় বৃদ্ধদের জন্য সদরঘাটে বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ করা হচ্ছে। বিনামূল্যে লাশ দাফন এবং শেষ কৃত্যানুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছে। রাজস্ব আদায় ব্যবস্থা ডিজিটাল করার পাশাপাশি জন্মসনদ দান, ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের চিকুনগুনিয়াসহ অন্যান্য রোগের বিনামূল্যে বাড়িতে গিয়ে ওষুধ প্রদান কার্যক্রম চলে। অপরেিদকে ঢাকার প্রকৃতি ও সবুজ দৃষ্টিকটুভাবে ঢেকে থাকা অবৈধ বিলবোর্ড ও ব্যানার অপসারণ করে স্থাপন করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ডিজিটাল বিলবোর্ড ও এলইডি বক্স। নগরীর যানজট সহনীয় করতে স্থাপন করা হয়েছে যাত্রী ছাউনি, ট্রাফিক সাইন, গার্ড রেইল, বাস স্টপেজ, জেব্রা ক্রসিং, অনস্ট্রীট পার্কিং। সর্বশেষ এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে যেতে ১০ টাকার এয়ারকন্ডিশন যুক্ত চক্রাকার বাস সার্ভিসও চালু করেছে। এছাড়া নতুন করে মতিঝিল এলাকায় আরও একটি চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি। হকারমুক্ত গুলিস্তানের ফুটপাথে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, গত চার বছরে ডিএসসিসি তার সীমানায় আধুনিক প্রযুক্তির ৪১ হাজারের বেশি এলইডি সড়কবাতি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া নবগঠিত ১৮টি ওয়ার্ডে ১৫ হাজার এলইডি বাতি স্থাপনের কাজ চলছে। সিটি কর্পোরেশন ও সরকারের অর্থে প্রায় ৬শ’ ৭০ কিলোমিটার রাস্তা, ৬শ’ কিলোমিটারের বেশি নর্দমা, ১শ’ ৩৩ কিলোমিটার ফুটপাথ নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৬শ’ কিলোমিটার রাস্তা, ৫শ’ কিলোমিটার নর্দমা এবং ১০০ কিলোমিটার ফুটপাথ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দয়াগঞ্জে আধুনিক পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস চালু করা হয়েছে। এছাড়া ধলপুর, লালবাগ ও গণকটুলিতে ছয়তল বিশিষ্ট ৬টি নিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ৬টির কাজও চলমান রয়েছে। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে শান্তিনগর, নাজিমউদ্দিন রোড, গণকটুলী এবং বংশাল এলাকায় প্রায় চার যুগের জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন করতে সক্ষম হয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪শ’ ৯৭ কিলোমিটার উন্মুক্ত নর্দমা এবং ৫শ’ ৩৭ কিলোমিটার পাইপ ড্রেনের আবর্জনা অপসারণ করেছে বলে জানা গেছে। জলসবুজে ঢাকা প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯টি পার্কের মধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী আব্দুল খালেক সরদার পার্কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সিরাজ-উদ-দৌলা পার্ক এবং গুলিস্তান পার্কের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ১২টি খেলার মাঠের মধ্যে শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। রসুলবাগ মাঠ এবং জোড়পুকুর খেলার মাঠের উন্নয়ন কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অন্যান্য খেলার মাঠ ও পার্কগুলোর উন্নয়ন কাজ শেষ করে চলতি বছরেই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেবে বলে জানিয়েছে ডিএসসিসি। এসব পার্ক ও খেলার মাঠ চালু হলে এক নতুন দুষ্টিনন্দন রূপ লাভ করবে ডিএসসিসি। আধুনিক এসব খেলার মাঠ ও পার্কে ফুল, বিনোদনের রাইড, ওয়াকওয়ে, ব্যায়ামাগার, কপি শপ, গ্যালারি নানাবিধ বিনোদন সুবিধা রয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নগর পরিবহনগুলো ৬টি কোম্পানির আওতায় এনে ২২টি রুটে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ধানমন্ডি নিউমার্কেট-আজিমপুর রুটে চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ২৮টি আধুনিক যাত্রী ছাউনি নির্মিত হয়েছে আরও ২টির নির্মাণ কাজ চলছে। এসব যাত্রী ছাউনিতে ওয়াই-ফাই সুবিধা এবং টিকেট বিক্রি কাউন্টার অন্তর্ভুক্ত করেছে। নিরাপদে সড়ক পারাপারের লক্ষ্যে নতুন ৮টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ ও ৭টি নির্মাণাধীন রয়েছে। এছাড়া পুরনো ১৬টি ফুটওভার ব্রিজের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। যানজট নিরসনে নগরীতে ২০ কিলোমিটারের বেশি রোড মিডিয়ান নির্মাণ এবং ফুটপাথে ১৭ কিলোমিটার গার্ড রেইল স্থাপন, গার্ডদের লেন বুঝে চলার জন্য ১০ কিলোমিটার রাস্তায় রোড মার্কিং, ১শ’ ২২টি জেব্রা ক্রসিং ও ২শ’ ২০টি ট্রাফিক সাইন স্থাপন করা হয়েছে। ৭ কিলোমিটার রোড মিডিয়ানের সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। ৪০টি ট্রাফিক সিগন্যাল সচল করে এগুলোতে সোলার প্যানেল, কাউন্ট-ডাউন টাইমার ও অটো ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৯টি সিগন্যাল পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এগুলো কার্যকর হলে ট্রাফিক সিস্টেমে এক বিশেষ পরিবর্তন আসবে বলে বিশ্বাস। এছাড়া ২শ’ ২০ কিলোমিটার প্রতিবন্ধীবান্ধব ফুটপাথ নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। নগরীর ৮টি স্থানে ৫শ’ ৬০টি অনস্ট্রীট পার্কিং চালু করা হয়েছে। ১৮টি ইন্টারসেকশন উন্নয়ন এবং ১২টি নতুন ইন্টারসেকশনে ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা হয়েছে। নবসংযুক্ত ৮টি ইউনিয়নের উন্নয়নে সংস্থাটি ৭শ’ ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া এলাকার প্রায় ১শ’ ৬৮ কিলোমিটার রাস্তা, প্রায় ৯ কিলোমিটার ফুটপাথ ও ১শ’ ৭২ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণের কাজ ডিসেম্বরের মধ্যেই সমাপ্ত হবে। এছাড়া প্রায় ৫শ’ ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মান্ডা, ডেমরা, নাসিরাবাদ ও দক্ষিণগাঁও ইউনিয়নের জন্য রাস্তা, নর্দমা, ফুটপাথ, আরসিসি ব্রিজ, এপ্রোচ রোড নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করছে। এর মাধ্যমে নবসংযুক্ত ৮টি ইউনিয়ন কর্পোরেশনের উন্নয়নের মূল ধারায় যুক্ত হয়েছে। চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকায় চুড়িহাট্টায় অবৈধ কেমিক্যাল কারখানায় সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর পুরনো ঢাকার জনজীবন অধিকতর নিরাপদ করতে টাস্কফোর্স পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ প্রতিষ্ঠান সিলগালা, জরিমানা আদায়, দু’শতাধিক প্রতিষ্ঠানের পরিষেবা সংযোগ বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে কেমিক্যাল কারখানা এই স্থান থেকে সরিয়ে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ৩শ’ ১০ একর জায়গায় কেমিক্যাল পল্লী গঠনের কাজ চলছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গতি আনতে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের কর্মস্থলে হাজিরা নিশ্চিত করতে সিম ট্রাকিং সিস্টেম চালু করা হয়। পরিবেশবান্ধব করতে ২১টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের সমন্বয়ে ব্যতিক্রমধর্মী ‘নাইট শিফট’ চালু করে ফেসবুক লাইভ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজের তত্ত্বাবধান করছে ডিএসসিসি মেয়র নিজে। মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ করতে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণসহ ভূমি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সংস্থাটি জননিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ বড় বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে। এর পরিবর্তে ডিজিটালাইজড এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। সহজেই পৌরকর পরিশোধ করতে ই-রেভিনিউ চালু করেছে। এছাড়া মোবাইলের মাধ্যমে পৌরকর পরিশোধের ব্যবস্থা করেছে। বৃদ্ধ মানুষের শেষ জীবনের কথা ভেবে সদরঘাট এলাকায় একটি ৬ তলাবিশিষ্ট ভবন আধুনিকায়ন করে বৃদ্ধাশ্রম চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিয়মিত খাদ্যে ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৩টি সরকারী ও ১৯টি বেসরকারী কাঁচাবাজার ফরমালিনমুক্ত করেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া সামাজিক কাজে কম মূল্যে নাগরিকদের ব্যবহারের জন্য নতুন ৪ টি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ ও পুরনোগুলোকে সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া মন্দির নির্মাণ ও শশ্মানঘাট নির্মাণ করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১৫০০ বর্গফুট আয়তন পর্যন্ত ফ্ল্যাট-বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ, আজিমপুর ও জুরাইন কবরস্থানে দাফনের জন্য স্থান নির্দিষ্টকরণ, তাদের ও তাদের সন্তানদের জন্য কমিউনিটি সেন্টার অর্ধেক ভাড়ায় ব্যবহারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। খাল দখলমুক্তকরণ ও সংস্কারের অংশ হিসেবে মান্ডা খাল অবৈধ দখলমুক্ত ও কুতুবখালী খাল পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা জেলা প্রশাসন, ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয় করে হাজারীবাগের কালুনগর খালসহ অন্যান্য খাল উদ্ধারের অভিযান পরিচালনা করছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে আধুনিক ৫১টি পুলিশ বক্স নির্মাণসহ আরও ১৯টির কাজ চলছে বলে জানা গেছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাটের ও কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমন ও ব্যবস্থাপনার জন্য ৩টি ওয়্যার হাউজ নির্মাণ করেছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যত্রতত্র পশু জবাই বন্ধে হাজারীবাগ ও কাপ্তানবাজারে ২টি অত্যাধুনিক জবাইখানা নির্মাণ করছে। সংস্থাটি সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ডিজিটাল স্টাফ হাজিরা, ই- টেন্ডারিং, লাইভ মনিটরিং চালু করেছে। এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে নগর ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন ও নাগরিক সেবা প্রদান সংক্রান্ত কল সেন্টারও চালু করেছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জনকণ্ঠকে বলেন, চরম আর্থিক দুরবস্থায় দায়িত্ব নেয়ার পর জিরো থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা সরকারের সর্বোচ্চ সহায়তায় আমরা নতুন আধুনিক ও বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গত ৪ বছর দিনরাত কাজ করেছি। আর্থিক দুরবস্থার কারণে যে সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুত বিল বকেয়া না দিতে পারার জন্য সংযোগ বিচ্ছিন্নের উপক্রম পর্যন্ত হয়েছিল বর্তমানে এলাকাবাসী এক আলোকিত, পরিচ্ছন্ন মানবিক ঢাকা দেখতে পাচ্ছেন। ৪ বছর আগের সকল ভাঙ্গা রাস্তার ঢাকা দক্ষিণ বর্তমানে রাজপথ থেকে শুরু করে ছোটবড় অলিগলির প্রায় শতভাগ আজ চলার উপযোগী মসৃণ করে তৈরি করা হয়েছে। আমি কাজ করেছি এখন সফলতা বা ব্যর্থতা বিচারের ভার নাগরিকদের ওপরই ছেড়ে দিলাম। অপরদিকে প্রবল জনবল সঙ্কট থাকায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি সফল হতে পারিনি। এছাড়া রাজধানীর সেবাদানকারী সংস্থার সমন্বয় করতে না পারায় অনেক উন্নয়ন কাজও করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তবে নাগরিকের জীবনমান উন্নয়নে ডিএসসিসির গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এজন্য সর্বপ্রথম নাগরিকদের সহযোগিতা ও অধিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এছাড়া আর্থিক সমস্যার স্থায়ী সমাধানে নগর এলাকায় উপ-কর ব্যবস্থা চালু করা ও নগর সমন্বয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কেবল সার্বিক সমস্যার সমাধান সম্ভব।
×