ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কেমন আছেন নৌকা গ্রামের কারিগররা?

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ১ জুন ২০১৯

কেমন আছেন নৌকা গ্রামের কারিগররা?

রূপগঞ্জের অজোপাড়া গাঁয়ের পল্লীতে গড়ে উঠেছে নৌকার গ্রাম। আর এ নৌকার গ্রামকে ঘিরে বালু নদীর তীর ঘেঁষে জমে উঠেছে ব্যতিক্রমী নৌকার হাট। একদিকে নদী, আর তিন দিকে বর্ষার পানি এলাকা দুটিকে বিস্তীর্ণ ব-দ্বীপে পরিণত করেছে। নৌকা তৈরির এ গ্রাম দুটির অদূরেই বালু নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট। বর্ষা এলেই রূপগঞ্জের নয়ামাটি ও পিরুলিয়া এলাকায় নৌকা তৈরির ধুম পড়ে যায়। কারিগররা হয়ে পড়ে মহাব্যস্ত। কায়েতপাড়া নৌকার হাটটিতে এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে নৌকা বেচাকেনার রমরমা ব্যবসা। প্রতি বৃহস্পতিবার বসে নৌকার হাট। চনপাড়া-নগরপাড়া সড়কের অদূরেই নৌকার গ্রাম। এলাকা দুটি পানিতে ডুবে আছে। গ্রামগুলো পানির ওপরে মাথাতুলে দাঁড়িয়ে আছে দ্বীপের মতো। আষাঢ় থেকে ভাদ্র- মাত্র তিন মাসের মৌসুমি ব্যবসা। চাহিদা যথেষ্ট, তাই কারিগরদের ব্যবস্থাও বেশি। নৌকার কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের পিরুলিয়া ও নয়ামাটি এলাকার কারিগররা স্বাধীনতারও আগে থেকে নৌকা তৈরি করে আসছে। কারও-কারও মতে, এ এলাকার নৌকা তৈরির ইতিহাস প্রায় শতাব্দী প্রাচীন। পিরুলিয়া এলাকার অশতীপরবৃদ্ধ অঞ্জনকুমার দাস বলেন, আমার জন্মের আগে থেইক্যা বাপ-দাদারা গয়না (নৌকা) বানাইয়া আইতাছে হুনছি। কারিগররা বলেন, নৌকা তৈরির গ্রাম পিরুলিয়া ও নয়ামাটি বললেই সবাই চেনে। তবে এ এলাকা দুটি গ্রামের ৯০ ভাগই মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের। হিন্দুরাই দীর্ঘদিন ধরে নৌকা তৈরি করে আসছে। আশির দশকের পর নৌকা ব্যবসায়ী কমে যায়। অনেকে ভারত চলে যাওয়ায় এখনও দেড়শ’ পরিবার টিকে রয়েছে কোনমতে। পিরুলিয়া এলাকার কারিগর নারায়ণ সরকার বলেন, আগে ব্যবসা ভালাই আছিল। অহন কাঠের দাম আর লোয়ার (লোহা) দাম বাইরা যাওনে লাভ কম অয়। কয়েকজন কারিগর বলেন, পিরুলিয়া ও নয়ামাটি এলাকার নৌকা তৈরির কারিগররা এখন ভালই আছেন। নৌকা বিক্রি করে তারা সংসার চালাচ্ছেন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। বছর শেষে মোটামুটি লাভের মুখও দেখছেন। কথাগুলো একবাক্যে বললেন পিরুলিয়া এলাকার সত্যেন দাস। তার ছেলে লেখাপড়া করছে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। নয়ামাটি এলাকার রমেশ দাস বলেন, কই খারাপ তো নাইগো দাদা। মোডা ভাত- আর মোডা কাপড় পরবার পারি। এইডাই সুখ। কারিগর চন্দন সরকার, প্রদীপ সরকার ও হরিপদ সরকার বলেন, নৌকা তৈরির কারিগরদের অবস্থা এখন কিছুটা ভাটা পড়েছে। ৯০-এর দশকের পর যান্ত্রিক সভ্যতা ফিরে আসায় নৌকার কদর কিছুটা কমে যায়। প্রতিবছর বর্ষায় নৌকা তৈরির ধুম চলে। তবে বন্যা হলে ব্যবসা ভাল হয় বলে জানালেন সুনীল দাস। তিনি বলেন, ৮৮ আর ৯৮ সালের বন্যায় অনেক টেহা লাভ অইছিল। নয়ামাটি এলাকার নৌকার কারিগর রবি দাস বলেন, কাডের দাম বাইরা যাওনে লাভটা কম হয়। নইলে ব্যবসা খারাপ না। আর স্টেলের নৌকার কারণে কিছুডা লছ অইতাছে। তারপরেও খারাপ নেই। ডাইল-ভাত খাইবার পারি। জানা গেছে, স্টিলের একটি নৌকা তৈরি করতে খরচ পড়ে ৯/১০ হাজার টাকা। আর একটি কাঠের নৌকা তৈরিতে খরচ পড়ে ৬/৭ হাজার টাকা। কথাগুলো বললেন নৌকার কারিগর তাপস দাস। নৌকার হাটের কথা : বালু নদীর তীর ঘেঁষেই কায়েতপাড়া বাজারে নৌকার হাট। বর্ষা মাসজুড়েই এ হাট জমে। ঢাকার নিম্ন ঞ্চলসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা নৌকা কিনতে আসেন। দামে সস্তা হওয়ায় এখানকার নৌকার কদরও বেশি। নৌকার হাট শুরু হয় নৌকা তৈরির গ্রামগুলোর কারিগরদের ঘিরেই। প্রতি বৃহস্পতিবার এ হাট জমে ওঠে। বৃহস্পতিবার এ হাটে কয়েক হাজার নৌকা ওঠে। ওঠে নৌকার বৈঠাও। গজারি কাঠের একটি নৌকার দাম পড়ে ২০/৩০ হাজার টাকা। আর কোষা ৭/৮ হাজার টাকা। বৈঠাগুলো ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকায় বিক্রি হয়। নৌকা বিক্রেতা সুবল চন্দ্র দাস বলেন, দাদু ব্যবসা ভালই, তয় পানি বেশি অইলে লাভ অয়। ঢাকার ত্রিমোহনী থেকে নৌকা কিনতে আসা ওমরআলী বলেন, এ হাটে সস্তায় নৌকা পাওয়া যায়। -মীর আব্দুল আলীম, রূপগঞ্জ থেকে
×