স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অনেক অপেক্ষা, আশ্বাস এবং প্রতিশ্রুতির পর অবশেষে বহুল আলোচিত মহিলা ফুটবল লীগ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে। শেষ হবে নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। অংশ নেবে ৬ থেকে ৮টি দল। বৃহস্পতিবার এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। বাফুফে ভবনের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে আরও ছিলেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ।
কিরণ বলেন, ‘সভাপতি হিসেবে কাজী মোঃ সালাউদ্দিন দায়িত্ব নেয়ার পর বাফুফে দুইবার মহিলা লীগ আয়োজন করেছিল। তারপর থেকে দীর্ঘদিন ধরেই বাফুফে চেষ্টা করে যাচ্ছে মহিলা ফুটবল লীগটি চালু করার। বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল এখন সঠিক কক্ষপথেই আছে। আমরা অক্টোবরের শেষদিকে বিভিন্ন ক্লাব, জেলা ফুটবল সংস্থা, সার্ভিসেস সংস্থা এবং কর্পোরেট হাউসগুলোকে নিয়ে মহিলা ফুটবল লীগ আয়োজন করব। খেলা হবে ঢাকায়।’
লীগের খেলোয়াড়দের বয়স কমপক্ষে ১৫ হতে হবে। তবে এটা কোন প্রফেশনাল বা কর্পোরেট লীগ হবে না। বাফুফের অধীনে যে ১৩২টি ক্লাব ও সংস্থা আছে, তাদের আগামী শনিবার থেকেই লীগ খেলার আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেবে বাফুফে। লীগ খেলার সম্মতির কথা জানানোর সময়সীমা এক মাস।
বাফুফের এই আমন্ত্রণপত্রে লীগে অংশ নেয়ার জন্য ৫টি শর্ত পূরণ করতে হবে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক দলগুলোকে। এগুলো হলো : স্পোর্টিং, ইনফ্রাস্ট্রাকচার, পার্সোনাল এ্যান্ড এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ, লিগাল এবং ফিনান্সিয়াল। দলগুলোর হেড কোচ, সহকারী কোচ, ট্রেনিং ফ্যাসিলিটিস, ক্লাব অফিসরুম, ফুল টাইমার সিইও/সাধারণ সম্পাদক/ম্যানেজার, ফুল টাইম ক্লাব কো-অর্ডিনেটর, মিডিয়া অফিসার, বৈধ কাগজপত্র ও বার্ষিক বাজেট ও আয়ের উৎস অবশ্যই থাকতে হবে।
কিরণ জানান, ‘অনুর্ধ-১৫ বয়সের খেলোয়াড় পেতে কোন সমস্যা হবে না। কারণ আমরা নিয়মিত প্রতিবছর জেএফএ অনুর্ধ-১৪ বালিকা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে থাকি। সেখান থেকে খেলোয়াড় পাওয়া যাবে।’
জাতীয় দলের ক্যাম্পের যে ৫৪ মহিলা ফুটবলার আছে, তাদের মধ্যে যারা অনুর্ধ-১৫ বছরের, তারা এই লীগে খেলতে পারবে। তবে শর্তসাপেক্ষে। তারা ক্লাবের সঙ্গে অনুশীলন করতে পারবে না, শুধু ম্যাচের দিন ক্লাবের হয়ে খেলবে। তবে এতে করে টিম কম্বিনেশন না গড়ে ওঠার যে আশঙ্কা আছে, সেটা অবশ্য অস্বীকার করতে পারেননি কিরণ। তিনি বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের ২১ খেলোয়াড় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ জুট মিলস্ কর্পোরেশনে (বিজেএমসি) চাকরি করেন। ছয় বছর ধরে ঘরোয়া লীগ বন্ধ। ফলে বিজেএমসি তাদের ফুটবল দলটিই বন্ধ করে দিতে চায়। তাই চাকরি হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনসহ ২১ নারী ফুটবলার। এখন দেখা যাক লীগ হবার খবরে সংস্থটি তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টায় কি না। ২০১১ ও ২০১৩ সালে হয়েছিল মেয়েদের দুটি ফুটবল লীগ। ২০১১ সালে হয়েছিল একটি কর্পোরেট লীগও। এছাড়া মেয়েদের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ সর্বশেষ হয়েছে ২০১৫ সালে। ২০১১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম লীগ শুরু হয়েছিল। দুই গ্রুপে অংশ নেয়া দলগুলো ছিল- ‘ক’ গ্রুপে : শেখ জামাল ধানম-ি, ওয়ারী, আরামবাগ ও দিপালী যুব সংঘ; ‘খ’ গ্রুপে : মোহামেডান, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ও ফরাশগঞ্জ ক্লাব। বাজেট ছিল সাড়ে চার লাখ টাকা। স্পন্সর ছিল ওয়ালটন। টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ও রানার্সআপ মোহামেডানকে যথাক্রমে ৫০ ও ৩০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছিল।
২০১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মাঠে গড়িয়েছিল ‘ওয়ালটন এ্যানড্রয়েড প্রিমো ঢাকা মহানগরী মহিলা ফুটবল লীগ’-এর দ্বিতীয় আসর। সেবারও অংশ নিয়েছিল আটটি দল। চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আবাহনী, রানার্সআপ মোহামেডান। লীগের বাজেট ছিল সাড়ে ৫ লাখ টাকা। অংশ নেয়া প্রতিটি দলই পার্টিসিপেশন মানি হিসেবে ৩০ হাজার টাকা এবং লীগের চ্যাম্পিয়ন দল ৫০ হাজার টাকা, রানার্সআপ দল ৩০ হাজার টাকা করে পেয়েছিল।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: