ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আটজনের মধ্যে তিনজনই টাইগার

প্রকাশিত: ১০:১৭, ৩১ মে ২০১৯

আটজনের মধ্যে তিনজনই টাইগার

মিথুন আশরাফ ॥ ইস, মাশরাফি বিন মর্তুজার কী দুর্ভাগ্য! ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে যদি খেলতেন তাহলে টানা পাঁচ বিশ্বকাপ খেলার কৃতিত্ব গড়তেন। কিন্তু চোখের জল ফেলে ২০১১ সালের বিশ্বকাপের দল ঘোষণার দিন টিকতে না পেরে মাঠ থেকে বের হতে হয়েছিল মাশরাফিকে। সেই মাশরাফি এক বিশ্বকাপ মাঝখানে না খেলায় টানা চার কিংবা পাঁচ বিশ্বকাপ খেলার কৃতিত্ব গড়তে পারেননি। তবে এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে চার বিশ্বকাপ খেলছেন। মাশরাফি সেই কৃতিত্বে না থাকলেও বাংলাদেশের মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ঠিকই টানা চার বিশ্বকাপ খেলার গৌরবে গৌরবান্বিত হচ্ছেন। বিশ্বকাপের দলগুলোর আটজন ক্রিকেটার আছেন যারা টানা চার বিশ্বকাপ খেলছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশেরই তিনজন রয়েছেন। এবারের বিশ্বকাপ মিলিয়ে টানা চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলা আট ক্রিকেটারের মধ্যে তিনজনই টাইগার! ২০০৭, ২০১১, ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলা ক্রিকেটারদের তালিকায় বাংলাদেশের মুশফিক, সাকিব, তামিম ছাড়াও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল, নিউজিল্যান্ডের রস টেইলর, পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজ, শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা ও ভারতের মহেন্দ সিং ধোনি রয়েছেন। ক্রিকেটারদের স্বপ্নে শুরুতে থাকে জাতীয় দলের হয়ে খেলা। এরপরই বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন তৈরি হয়। একবার বিশ্বকাপ খেলতে পারলেই জীবনের সেরা প্রাপ্তি মিলে যায়। সেখানে চারটি বিশ্বকাপ খেলা কম কথা! এবারের বিশ্বকাপে ১০ দল খেলছে। ১০ দলের ১৫০ ক্রিকেটার খেলবেন। তার মধ্যে মাত্র আটজন আছেন যারা টানা চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন। আর এই তালিকায় বাংলাদেশ থেকে আছে তিনজন। অন্য কোন দেশের একাধিক খেলোয়াড় নেই এই তালিকায়। ২০০৭, ২০১১, ২০১৫ এবং ২০১৯ টানা এই চার বিশ্বকাপে নিজ দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা আট খেলোয়াড়কে নিয়ে সাজানো হয়েছে গল্প। সাকিব আল হাসান ॥ বিশ্বসেরা সাকিবকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। সাকিব জাতীয় দলে ২০০৬ সালে ডাক পাওয়ার পর ২০০৭ বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পান। সেই থেকে এখন পর্যন্ত দলকে কেবল দিয়েই যাচ্ছেন। মাঝে ২০১১ বিশ্বকাপে মাশরাফির অনুপস্থিতিতে দলের নেতৃত্বের ভারটাও সামলাতে হয় তাকে। বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এবং উইকেট শিকারি উভয়ই সাকিব। ২০১৯ বিশ্বকাপ তারজন্যও হতে যাচ্ছে টানা চতুর্থ বিশ্বকাপ। মুশফিকুর রহীম ॥ অনুর্ধ-১৯ দলে সাকিব-তামিমদের অধিনায়ক ছিলেন মুশফিক। সাকিবের সঙ্গে একইদিনে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার। এরপর থেকে উইকেটের পেছনে দায়িত্ব সামলানোর জন্য অদ্বিতীয়তে পরিণত হয়েছেন। সাকিবের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বমঞ্চে ৫০০ রান অতিক্রম করেন মুশফিক। এবারের বিশ্বকাপ তার জন্যও চতুর্থ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। তামিম ইকবাল ॥ ২০০৭ বিশ্বকাপের ঠিক আগে অন্য দুই সতীর্থের মতো জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হন তামিম। নির্ভীক মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্য অল্পদিনের মাথায় ড্যাশিং ওপেনারের খেতাব পান তামিম। গত একযুগে অর্ধ ডজন ওপেনারের পরিবর্তন হলেও নিজ জায়গায় অটল তামিম। বিশ্বকাপে ৪৮৩ রান নিয়ে সাকিব, মুশফিকের পর বাংলাদেশের হয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এই বাঁহাতি ওপেনার। সতীর্থদের মতো তিনিও খেলতে যাচ্ছেন টানা চতুর্থ বিশ্বকাপ। ক্রিস গেইল ॥ বিশ্বকাপের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান ক্রিস গেইল। জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকটা ১৯৯৯ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে। ফলে ২০০৩ বিশ্বকাপে লারা, হুপারদের দলে ছিলেন তিনিও। ২০০৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টানা পাঁচটি বিশ্বকাপ তিনি খেলতে যাচ্ছেন। তিনি অবশ্য ২০০৩ সাল থেকে টানা পাঁচ বিশ্বকাপ খেলবেন। তবে ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছেন এই বিশ্বকাপই হতে যাচ্ছে তার শেষ বিশ্বকাপ। মহেন্দ্র সিং ধোনি ॥ এই দশকের অন্যতম বড় তারকা ধোনি। নেতৃত্বের বোঝা কাঁধে নিয়ে দীর্ঘ ২৮ বছর পর ভারতকে বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ দেন ধোনি। আইসিসির সব কয়টি ইভেন্টেই ভারত জিতেছে তার অধীনে থেকে। ২০০৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক হওয়ার পর ২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন ধোনি। সেবার অবশ্য তিনি অধিনায়ক ছিলেন না, তবে পরবর্তী দুই বিশ্বকাপে ভারতকে অসাধারণ নেতৃত্ব দেন ধোনি। ২০১৫’র সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারের আগে টানা ১১ ম্যাচ বিশ্বকাপে ধোনির ভারত ছিল অপরাজিত। এবার বিশ্বকাপ তারজন্যও হতে যাচ্ছে চতুর্থ বিশ্বকাপ। এটিই হয়তো শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে ৩৭ বছর বয়সী এই উইকেটরক্ষকের। লাসিথ মালিঙ্গা ॥ ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চার বলে চার উইকেট নেয়ার রেকর্ডের মালিক মালিঙ্গা। বিশ্বকাপ তো বটেই ওডিআই ইতিহাসে আর কারও এমন কীর্তি নেই। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ভিন্নধর্মী বোলিং এ্যাকশন, গতি এবং অনায়াসে ইয়োর্কার দেয়ার ক্ষমতার জন্য ব্যাটসম্যানদের কাছে ভীতির আরেক নাম মালিঙ্গা। ২০১৬তে খারাপ সময় পার করলেও তা কাটিয়ে আবার মাঠে ফিরে আসেন মালিঙ্গা। ২০১৯ বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে তিনিও টানা চার বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছেন দেশের হয়ে। রস টেইলর ॥ ২০০৬ সালে অভিষেক হওয়ার পর থেকে নিউজিল্যান্ড দলের নিয়মিত খেলোয়াড়ে পরিণত হন টেইলর। ২০০৭ থেকে এখন পর্যন্ত সবকয়টি বিশ্বকাপেই নিউজিল্যান্ডকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। তার ক্যারিয়ার সেরা ১৩১ রানে নটআউট থাকার ইনিংসটিও আসে ২০১১ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে। ২০টি শতক এবং ৪৭টি অর্ধশতকে ভর করে আট হাজার রান করা টেইলর নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। মোহাম্মদ হাফিজ ॥ পাকিস্তানের নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডার হাফিজ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আছেন জাতীয় দলের সঙ্গে। দুঃসময়ে পাকিস্তানের অধিনায়কত্বও করেছেন এবং তিনিই পাকিস্তানের একমাত্র অধিনায়ক যিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছিলেন ২০১৬ সালে। ২০০৭ থেকে এবারের আসর পর্যন্ত টানা চার বিশ্বকাপেই পাকিস্তানের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন ‘দ্য প্রফেসর’ খ্যাত হাফিজ।
×