ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রকে যুগোপযোগী করতে বাজেট বাড়াতে হবে’

প্রকাশিত: ১০:০১, ৩১ মে ২০১৯

  ‘জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রকে যুগোপযোগী করতে বাজেট বাড়াতে হবে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢেলে সাজাতে হবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রকে। প্রতিষ্ঠানটিকে যুগোপযোগী ও কার্যকর করতে বাজেট বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি করতে হবে দক্ষ জনবল। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে পাঠকসমাজ সৃষ্টি করতে ইউনিয়নভিত্তিক পাঠাগার গড়ে তুলতে হবে। শুধু বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে বইমেলার আয়োজন না করে মননশীল সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মপরিধি বাড়াতে হবে। ‘জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কাছে আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব সুপারিশ তুলে ধরেন আলোচকরা। বৃহস্পতিবার তোপখানা রোডের সিরডাপ মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদাপন জাতীয় কমিটি ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সদস্য আসাদ মান্নান। ভারপ্রাপ্ত সংস্কৃতি সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনি, পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্সের প্রকাশক কামরুল হাসান শায়কসহ বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার প্রকাশকবৃন্দ। কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, মননশীল মানুষ তৈরিতে বইয়ের বিকল্প নেই। অথচ ক্রমশ পাড়া-মহল্লায় কমছে পাঠাগার। উল্টোদিকে আবার ভাল বইয়ের সংখ্যাও কমছে। এমন প্রেক্ষাপটে ভাল বইগুলো বাছাই করে পাঠাতে হবে বিভিন্ন সরকারী লাইব্রেরিতে। এমন বহুমুখী চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করে দুর্বলতা কাটিয়ে যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রকে। প্রতিষ্ঠানটি পরিপূর্ণভাবে সচল করতে নতুন পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়নে সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। তাই শুধু অনুষ্ঠানের পরিবর্তে প্রকৃত কাজ করতে হবে। ব্যক্তি নয়, প্রতিষ্ঠানকে দৃশ্যমান করতে হবে। শ্যামল পাল বলেন, সেই অর্থে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের তেমন কার্যক্রম নেই। বই পড়া আন্দোলন জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের প্রতিষেধক হলেও সে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি গ্রন্থকেন্দ্র। সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচীতে শত-হাজার কোটি টাকার বাজেট থাকলেও বই পড়া ও কেনার জন্য বাজেট দেয়া হয় মাত্র ৩ কোটি টাকা। অথচ দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে পাঠাগার গড়ে তোলার মাধ্যমে বইকে ছড়িয়ে দিতে হবে সকলের মাঝে। সেটা না হয়ে উল্টো দেখা যায়, অনেক গ্রন্থাগার তিন মাসে একবার খোলা হয়। এসব সমস্যা সমাধানে যে দক্ষ জনবল প্রয়োজন, সেটাও নেই গ্রন্থকেন্দ্রের। আট বিভাগে বইমেলার আয়োজন ও মিটিং করেই দায়িত্ব সম্পন্ন করে প্রতিষ্ঠানটি। তাই মেধাভিত্তিক জাতি বিনির্মাণের অঙ্গীকার শুধু কথার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। ইমদাদুল হক মিলন বলেন, একসময় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় পাঠারগার ছিল। এখন সেটা নেই। শুধু তাই নয়, গ্রন্থকেন্দ্রের অধীন সারা দেশে দুই হাজার গ্রন্থসুহৃদ সমিতি ছিল। সেগুলো এখন নেই। এই সুহৃদ সমিতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। ফরিদ আহমেদ বলেন, প্রত্যাশা পূরণে গ্রন্থকেন্দ্রের যে কাঠামো ও সামর্থ্য প্রয়োজন-সেটার কোনটাই নেই। দেশের জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কোন মিল নেই। এ অবস্থা নিরসনে গ্রন্থকেন্দ্রকে অধিদফতরে উন্নীত করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ জনবল বাড়াতে হবে। পাঠচক্রসহ নিজস্ব কর্মসূচী থাকতে হবে। পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে দেশের এক হাজার পাঠাগারে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ক কর্নার গড়ে তুলতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, গ্রন্থকেন্দ্রের পথচলায় যেসব সমস্যা ও অদক্ষতার কথা উঠে এসেছে, তার কোনটার সঙ্গেই দ্বিমত পোষণ করছি না। যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার সমাধানে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে নিতে হবে গ্রন্থকেন্দ্রকে।
×