ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ বাহিনীতে জুনেই কাজ শুরু হবে

‘ই পুলিশ’ সিস্টেম চালুর যুগান্তকারী পদক্ষেপ

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ৩১ মে ২০১৯

 ‘ই পুলিশ’ সিস্টেম চালুর যুগান্তকারী পদক্ষেপ

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ‘ই-পুলিশ’ সিস্টেম চালুর মাধ্যমে যুগান্তকরী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। ঈদের পর জুন মাসেই ই-পুলিশ সিস্টেমে যাচ্ছে পুলিশ বাহিনী। পুলিশ বাহিনীকে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের অপরাধ দমন গতিশীল করতে পুলিশ বাহিনীতে ই-পুলিশ সিস্টেম চালু করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। পুলিশের আধুনিকায়নে উন্নত-আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাল মেলাতে ই-পুলিশ সিস্টেম চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ই-সেবা সংক্রান্ত এ্যাপ্লিকেশনগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে হোস্টিং করা সম্ভব হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশের সঙ্গে তাল মেলাতেই ই পুলিশ সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল থাকবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল থাকলে দেশের মানুষ ভাল থাকে। বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ে। অর্থনৈতিভাবে দেশ এগিয়ে যায়। এ জন্য নতুন বছরে নতুন সরকার এসেই পুলিশ বাহিনীকে আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও উন্নত করবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট, মানুষের সেবাদানের বেশি সুযোগ পাওয়া যাবে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ই-পুলিশ সিস্টেম চালু করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। আগামী জুন মাস থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। স্বরাষ্ট্্র মন্ত্রণালয়ের নেয়া এই সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ই-সেবা সংক্রান্ত এ্যাপ্লিকেশনগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে হোস্টিং করা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে ডাটা স্টোরেজের জন্যও তা ব্যবহার করা যাবে। এতে ডাটা স্টোরেজে অধিকতর দক্ষতা অর্জন এবং তা নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো সাইবার ক্রাইম। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিং, ক্রাইম প্যাটার্ন এ্যানালাইসিস ও সিসিটিভি নজরদারি প্রভৃতি ই-পুলিশিং সেবা দেয়া এবং সেবাগুলোর পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশের আইসিটি মাস্টার প্ল্যান ২০২০-এর বিষয়গুলোর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অপরাধ এবং অপরাধবিষয়ক তথ্যসহ অন্যান্য পুলিশি তথ্য এবং আইটি এ্যাপ্লিকেশনের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত, নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য হোস্টিং সুবিধা নিশ্চিতকরণ, বাংলাদেশ পুলিশের আইসিটি কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অপরিহার্য অংশ ‘কার্যকর আইসিটি অবকাঠামো’ নিশ্চিতকরণ, আইসিটি বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তথ্য এবং এ্যাপ্লিকেশন নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে কেন্দ্রীয় এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, বিভিন্ন পুলিশি এ্যাপ্লিকেশনে সাইবার হামলা বা হুমকি রোধ এবং তা কমানো, বিভিন্ন ধরনের আইসিটি অবকাঠামো এবং এ্যাপ্লিকেশন যেমন- ইআরপি, সিএমডিএস এবং ডায়াল-১০০ ইত্যাদির অধিকতর কার্যকারিতা এবং সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণসহ বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের চাহিদামাফিক আইটি উদ্যোগের জন্য ডিজিটাল কম্পিউটিং এবং স্টোরেজ সুবিধা দিতেই ই-পুলিশ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। যাতে পুলিশ বাহিনী আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে কারও থেকে পিছিয়ে না থাকে। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ একটি ক্রমবর্ধমান মোবাইল, অনলাইন এবং সাইবার পরিবেশে প্রবেশ করেছে। ক্রমবর্ধমান অপরাধের তথ্য নিরাপদভাবে পরিচালনা এবং সংরক্ষণ করা পুলিশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যমান ডাটা সেন্টারে জরুরী পুলিশি সেবা প্রদানের জন্য পুলিশ ওয়েবসাইটসহ ৩৬টি এ্যাপ্লিকেশন চালু আছে। এতে কোন অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বা সিস্টেম নেই। সিঙ্গেল ডিস্ট্রিবিউশন পাওয়ার সাপ্লাই সিস্টেম থাকায় অনেক সময় সার্ভার ডাউন থাকলে অনলাইন পুলিশি কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। বর্তমানে ডাটা সেন্টার শুধুমাত্র সাধারণ স্টোরেজ সিস্টেম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সাইবার এ্যাটাক প্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকায় পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশের কাজে ডিজিটাল সিস্টেমের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান ডাটা সেন্টারের ধারণক্ষমতা এবং ডাটা নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্যই ই-পুলিশ সিস্টেমের উদ্যোগ। সিআইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ বাহিনী হিসেবে দেখতে চায়। বিশেষ করে সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই পুলিশের পেছনে ব্যয় করাটাকে ইনভেস্ট মনে করেন। ফলে পুলিশ বাহিনীর ইত্যকার সমস্যা সমাধানে তিনি গত ১০ বছর ধরে একের পর এক উদ্যোগ নিয়ে চলেছেন। ফলে পুলিশ আজ একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, এসব উদ্যোগের ফলে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারছে- এতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল থাকলে দেশের মানুষ ভাল থাকে। বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ে। অর্থনৈতিভাবেও দেশ এগিয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজবরোধ ও মনিটরিং করতে পুলিশ সদর দফতরে এবং কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে যুক্ত করা হয়েছে সাইবার ইউনিট। সাইবার ইউনিট সদস্যরা ডিজিটাল ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা (সিআইডি) ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট ইতোমধ্যে বিশ^ প্রশ্নপত্র ফাঁস নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সিআইডি পুলিশের একের পর এক অভিযানে প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে গেছে।
×