ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আল বিদা মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ৩১ মে ২০১৯

 আল বিদা মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ মাহে রমজানুল মোবারকের ২৫তম দিবস, জুমাবার। জুমাতুল বিদা। আজ মাহে রমজানের শেষ জুমা হিসেবে মসজিদে মসজিদে মাহে রমজানের বিদায় সানাই বেজে উঠবে, মু’মিন মুসলমানগণ অংশ নেবে আখেরি আনুষ্ঠানিক মোনাজাতে। জুমাতুল বিদা’ মানে পবিত্র রমজান মাসের বিদায়ের বার্তাবাহী জুমা। মু’মিন মুসলমানগণ পরম আহলাদ ও বিশেষ মর্যাদায় পালন করে থাকেন এ দিবসটি। রমজানুল মোবারক ক্রমাগত শেষ হয়ে আসলে দুইটি দিবসের প্রতি তারা বিশেষ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। একটি হলো পবিত্র শবে কদর, অপরটি হলো জুমাতুল বিদা। এমনিতেই ইসলাম ধর্মে জুমা বা জুমার দিনের গুরুত্ব অনেক বেশি। দুনিয়ার অনেক উত্থান পতন ও ঘটনার কালসাক্ষী এটি। পৃথিবী সৃষ্টি হয় এদিনে। কিয়ামতও এ’দিনে সংঘটিত হবে বলে হাদিস শরীফ থেকে জানা যায়। এ’দিনের জুমার সালাত ও খুৎবাকে গরিবের হজ বলা হয়ে থাকে। রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজানে জুমার দিবসের গুরুত্ব বহুগুণে বেড়ে যায়। কারণ, এ মাসের প্রতিটি নেক কাজের সাওয়াব অন্য এগারো মাসের তুলনায় অত্যধিক। বিশেষ করে এ মাসের সমাপনী জুমার আবেদন যে কোন জুমার তুলনায় মু’মিন মনে দাগ কাটে বেশি। এ জন্য দেখা যায়, এ’দিন জুমা’র সালাতে প্রধান প্রধান মসজিদসমূহে মুসল্লিদের ঢল নামে; রাজপথ হয় লাখো মু’মিনের জায়নামাজ। মাহে রমজানের সামাজিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে এ এক মনোমুগ্ধকর সংস্কৃতি। পবিত্র জুমাতুল বিদার মর্যাদা ও গুরুত্ব বৃদ্ধির পেছনে তিনটি কারণ মুখ্য বলে ওলামাগণ মনে করেন। প্রথমত : এ’দিন পবিত্র রমজানুল মোবারককে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানোর একটি হৃদয় কাড়া ঐতিহ্য রয়েছে। দ্বিতীয়ত : এ’দিন বিভিন্ন স্থান ও পরিস্থিতি ভেদে সাদকাতুল ফিতরের পরিমাণ ঘোষণা করা হয় এবং তৃতীয়ত : এ’দিন মসজিদে মসজিদে আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের করণীয় ও কর্তব্য সম্পর্কে ওয়াজ-নসিহত করা হয় আর এ দিবসের আমল, তাৎপর্য সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। জুমাতুল বিদার খুৎবায় থাকে মাহে রমজানের বিদায়বার্তা। মসজিদের ঈমাম বা খতিব যখন অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় তা বর্ণনা করেন তখন দিকে দিকে করুণ ও কাতর দৃশ্যের উদ্ভব হয়। রমজানের বিদায়ী সানাই শোনে মুসল্লিগণ হতবিহবল হয়ে পড়েন। ইমাম সাহেব বলতে থাকেন আস্সালামু আলাইকা ইয়া শাহরাল কোরান- ওহে কোরানের মাস তোমায় সালাম, ওহে গুনাহ মাফির মাস তোমায় সালাম বিদায়, বিদায় ওহে মাহে রমজান। খুৎবায় এমনিতর বহুবিধ যথার্থ বাক্য প্রয়োগে উপস্থিত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হৃদয়-মন আখিরাতের জবাবদিহিতার ভয়ে ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকে। এসব কিছু স্মরণে এনে মুসল্লিগণ তাওবায় অংশ নেন। কায়মনোবাক্যে অতীতের ভুলত্রুটির জন্য অনুশোচনা ব্যক্ত করেন। নিজের জন্য ও ময়-মুরব্বি আওলাদ ফরজন্দ, সর্বোপরি দেশ জাতির মঙ্গল কামনায় সকলে অভিন্ন কণ্ঠে ফরিয়াদ করেন তাই জুমাতুল বিদা বস্তুতই : ইবাদত বন্দেগির, তাওবা ইস্তিগফারের, মাহে রমজানের বিদায় বেলার আনুষ্ঠানিক আত্মোপলব্ধি ও বিশেষ মোনাজাতের।
×