ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাগতিক ইংল্যান্ডের শুরু দাপুটে জয়ে

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ৩১ মে ২০১৯

স্বাগতিক ইংল্যান্ডের শুরু দাপুটে জয়ে

জিএম মোস্তফা ॥ জয় দিয়েই মিশন শুরু করেছে ইংল্যান্ড। ২০১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১০৪ রানের বিশাল জয় পেয়েছে স্বাগতিকরা। প্রথম ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৩১১ রান সংগ্রহ করে ইয়ন মরগানের দল। জবাবে ৩৯.৫ ওভারে মাত্র ২০৭ রান তুলতেই গুটিয়ে যায় প্রোটিয়ারা। এর ফলে হার দিয়েই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ শুরু হলো আমলা-প্লেসিসদের। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যানরা এবার রানের বন্যা বইয়ে দিবেন বলেই শোনা যাচ্ছিল টুর্নামেন্ট শুরুর আগে। কিন্তু প্রথম ম্যাচে তিন শ’র কোটা অতিক্রম করতেই ঘাম ঝরেছে স্বাগতিকদের। ৩১২ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দৈন্যদশা দেখিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরাও। শুরু থেকেই নাজেহাল ছিল প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ইংলিশ পেসার জোফরা আর্চারের বাউন্সারে কপালে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন হাসিম আমলা। তখন দলের রান মাত্র ১৪। আমলা ড্রেসিংরুমে ফিরে গেলে তার পরিবর্তে ব্যাটিংয়ে নামেন এ্যাডাম মার্করাম। ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি মার্করামও। ব্যক্তিগত ১১ রান করেই আর্চারের বলে জো রুটের হাতে তাঁলুবন্দী হন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিসকেও প্যাভিলিয়নের পথ দেখান ইংলিশ পেসার জোফরা। প্রোটিয়াদের সংগ্রহ তখন মাত্র ৪৪। বিপর্যস্ত দক্ষিণ আফ্রিকাকে তখন টেনে তোলার চেষ্টা করেন কুইন্টন ডি কক। কিন্তু ব্যক্তিগত ৬৮ রানে প্লাঙ্কেটের বলে জো রুটের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। এরপর জেপি ডুমিনি আর প্রিটোরিয়াস ছিলেন কেবল যাওয়া আসার মিছিলে। এই সময়ে ইংলিশ বোলারদের কিছুটা ভুগিয়েছেন রাসি ভ্যান ডার ডুসেন। তবে ইনিংসের ৩১তম ওভারের পঞ্চম বলে এই ডুসেনকেও মঈন আলীর হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে পাঠান আইপিএলে চমকপ্রদ পারফর্ম করা জোফরা আর্চার। আউট হওয়ার আগে ৬১ বলে ৪টি চার ও ১ ছক্কায় ৫০ রান করে যান ডুসেন। প্রোটিয়াদের প্রথম সারির ছয় ব্যাটসম্যান আউট হলে আবারও ব্যাটিংয়ে নামেন শুরুতেই আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়া হাসিম আমলা। কিন্তু দ্বিতীয়বারও হতাশ করলেন তিনি। ১৩ রানেই আউট হয়ে যান এই ওপেনার। আমলার আগে আদিল রশিদের বলে অবিশ্বাস্য এক ক্যাচে আন্দিলে ফেলুকাওকে সাজঘরে ফেরত পাঠান বেন স্টোকস। শুধু তাই নয়, প্রোটিয়াদের শেষ দুই ব্যাটসম্যান কাগিসো রাবাদা আর লুঙ্গি এনগিডির উইকেটও নেন ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। পুরস্কার হিসেবে ম্যাচসেরাও নির্বাচিত হন তিনি। তবে ইংল্যান্ডের সফল বোলার জোফরা আর্চার। বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচেই নিজের জাত চেনালেন তিনি। মাত্র ২৭ রানের বিনিময়েই দক্ষিণ আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ ৩ উইকেট দখল করেন তিনি। এছাড়া বেন স্টোকস ও লিয়াম প্লাঙ্কেট উভয়ই প্রতিপক্ষের দুটি করে উইকেট লাভ করেন। এর আগে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে টস জিতে ইংল্যান্ডকে প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান প্রোটীয় অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় স্বাগতিকরা। দলের সঙ্গে কোন রান যোগ না করেই সাজঘরে ফিরে যান জনি বেয়ারস্টো। বল হাতে নেমে প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই উইকেট তুলে নেন ইমরান তাহির। জনি বেয়ারস্টোকে দিয়ে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে প্রথম উইকেট শিকারি হন তিনি। স্পিনার ইমরান তাহিরের হাতে বল তুলে দেয়ার পর অনেকেই চমকে যান। কেননা, এর আগে বিশ্বকাপে কখনই স্পিনারকে দিয়ে প্রথম বল করাননি কোন দেশের অধিনায়ক। বেয়ারস্টো সাজঘরে ফিরে গেলেও একপাশ ঠিকই আগলে রাখেন ইংল্যান্ডের আরেক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জেসন রয়। ওয়ান ডাউনে নামা জো রুটকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে থাকেন তিনি। দুজনে মিলে গড়েন ১০৬ রানে জুটি। দলীয় ১০৭ রানে জেসন রয়কে নিজের শিকারে পরিণত করেন আন্দিলে ফেলুকায়ো। দলীয় স্কোরে ৪ রান যোগ হতেই ফের ইংলিশ ব্যাটিং লাইনে আঘাত। এবার জো রুটকে ফেরান কাগিসো রাবাদা। জেসন রয় ৫৪ আর জো রুট করেন ৫১ রান। দুই সেট ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর চতুর্থ উইকেটে জুটি বাঁধেন ইয়ন মরগান ও বেন স্টোকস। জুটিতে তারাও যোগ করেন ১০৬ রান। এরপর মরগানকে সাজঘরে ফেরত পাঠান ইমরান তাহির। তবে এই ম্যাচেই অনন্য এক কীর্তি গড়েন ইংলিশ অধিনায়ক। প্রায় শতবছরের ক্রিকেট ইতিহাস যাদের সেই ইংল্যান্ডের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ ওয়ানডে খেলা প্রথম ক্রিকেটার এখন মরগান। ইংল্যান্ডের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯৭ ম্যাচ খেলেন বর্তমানে তাদের ফিল্ডিং কোচ পল কলিংউড। এই তালিকার তিনে রয়েছেন জেমস এ্যান্ডারসন। তার খেলা ম্যাচের সংখ্যা ১৯৪। নিজের মাইলফলকের ম্যাচে ৫৭ রান করে আউট হন মরগান। এরপর স্টোকসকে রেখে একে একে মাঠ ছাড়েন জস বাটলার (১৮), মঈন আলী (৩) ও ক্রিস ওকস (১৩। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে বেন স্টোকস আউট হন দলের সর্বোচ্চ ৮৯ রানের ইনিংস খেলে। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৭৯ বলে ৯টি চারের সৌজন্যে। আর স্টোকসের সর্বোচ্চ ইনিংসের সৌজন্যেই তিন শ’র কোটা অতিক্রম করতে সক্ষম হয় ইংল্যান্ড। প্লাঙ্কেট ৯ আর ৭ রান করে অপরাজিত থাকেন জোফরা। ৬৬ রানের বিনিময়ে স্বাগতিকদের ৩ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সফল বোলার লুঙ্গি এনগিডি। এছাড়া কাগিসো রাবাদা ও ইমরান তাহির উভয়েই প্রতিপক্ষের দুটি করে উইকেট নেন। স্কোর ॥ ইংল্যান্ড ॥ ৫০ ওভারে ৩১১/৮ (বেন স্টোকস ৮৯, মরগান ৫৭, জেসন রয় ৫৪, জো রুট ৫১; লুঙ্গি এনডিগি ৩/৬৬)। দক্ষিণ আফ্রিকা ॥ ৩৯.৫ ওভারে ২০৭/১০ (ডি কক ৬৮, ডুসেন ৫০; জোফরা ৩/২৭, স্টোকস ২/১২, প্লাঙ্কেট ২/৩৭)।
×