ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১২৫ জনকে আসামি করে চার্জশীট চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ৩১ মে ২০১৯

 ১২৫ জনকে আসামি করে চার্জশীট চূড়ান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ দেড় বছর তদন্ত শেষে অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বহুল আলোচিত প্রশ্নপত্র ফাঁস মামলার চার্জশীট প্রস্তুত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। চার্জশীট দাখিলের অনুমতিও দেয়া হয়েছে। কয়েক হাজার পৃষ্ঠার চার্জশীট দ্রুতই আদালতে দাখিল করার প্রস্তুতি চলছে। চার্জশীটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ শিক্ষার্থীসহ ১২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আরও অনেকের তথ্য যাচাইয়ের কাজ চলছে। পলাতকদের নাম ঠিকানা সঠিক পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশীট দাখিল করা হবে। আসামিদের প্রায় ২০ কোটি টাকার নগদ ও স্থাবর অস্থাবর সম্পদ থাকার তথ্য মিলেছে। সেসব সম্পদ বাজেয়াফত করার প্রক্রিয়া চলছে। আসামিদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলারও তদন্ত করছে সিআইডি। বৃহস্পতিবার সকালে মালিবাগ সিআইডি সদর দফতরে এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাঃ শফিকুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি শাহ আলম ও ইমতিয়াজ আহমেদ, বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম ও সিআইডির লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া সেলের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার শারমিন জাহানসহ উর্ধতন সিআইডি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সিআইডি প্রধান জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁস জাতির জন্য একটি অভিশাপ। সেই অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি চৌকস দল গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছিল। শেষ পর্যন্ত দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। ২০১৭ সাল থেকে চালানো টানা অভিযানে মূলহোতাসহ ৪৭ জন গ্রেফতার হয়। এদের মধ্যে ৪৬ জনই আদালতে অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছে। দেশব্যাপী আলোচিত এই ঘটনা শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর মধ্য রাতে। ওইদিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি আবাসিক হলে অভিযান চালায় সিআইডি। গ্রেফতার করা হয় মামুন ও রানা নামে দুই শিক্ষার্থীকে। তাদের দেয়া তথ্য মোতাবেক, পরদিনই পরীক্ষার হল থেকে গ্রেফতার করা হয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী রাফিকে। এ ঘটনায় ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর শাহবাগ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। তদন্তে একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য মোতাবেক, চক্রটি পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রিন্টিং প্রেস থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র টাকার বিনিময়ে ফাঁস করত। ২০১৫ ও ২০১৬ পর পর দুই বছর ফাঁস করা প্রশ্ন নিয়ে সাভারের পল্লী বিদ্যুত এলাকার একটি বাসায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের রীতিমতো ক্লাস নেয়া হতো। সেখানে পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের উত্তর শেখানো হতো। এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড নাটোর জেলার ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান এছামী। তার সহযোগী হিসেবে ছিল প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুর, তার আত্মীয় সাইফুল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বনি ও মারুফসহ ২৮ জন। পরে এই ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়েই মূলত প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রটির মূল উৎপাটন করা সম্ভব হয়। মূলত দুইভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হতো। একটি চক্র প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। অন্যটি পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে দ্রুত তা সমাধান করে। এরপর শিক্ষার্থীর কানে থাকা ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীকে প্রশ্নের উত্তর সরবরাহ করা হতো। ডিজিটাল প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের মাস্টারমাইন্ড বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস। এ চক্রের অন্যতম আরেক মূলহোতা ইব্রাহীম, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান হাফিজ ও তাজুল ইসলাম। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা সত্যিই খুবই প্রশংসনীয়। গণমাধ্যম পাশে না থাকলে হয়ত এর কোনদিনই নাগাল পাওয়া যেত না। সিআইডিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত মনিটরিংয়ের কারণে সম্প্রতি প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটছে না। তিনি বলছেন, চক্রের মূলহোতাদের অঢেল অবৈধ অর্থ-সম্পদ থাকার তথ্য মিলেছে। এখন পর্যন্ত তদন্তে নগদ ও সম্পদ মিলিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াফত করতে ইতোমধ্যেই উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মানিলন্ডারিং মামলাও দায়ের করা হয়েছে সিআইডির তরফ থেকে। এ মামলারও তদন্ত করছে সিআইডি। সিআইডি প্রধান বলছেন, আসামিদের অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তারা খাতা কলমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে আছে। তবে তারা পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেবে সিআইডি। পাশাপাশি তাদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে অভিযুক্ত ছাত্রদের নামের তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর পাঠানো হয়েছে। চক্রটি এতটাই শক্তিশীল যে, তারা এমবিবিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গেও জড়িত ছিল। আসামিদের মধ্যে অনেকেই জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, জাতীয় ও ড্যাফোডিলসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তবে সরাসরি কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ মেলেনি।
×