ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে ফের মুয়েলারের মন্তব্য

ট্রাম্পের ইমপিচের দাবি জোরালো

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ৩১ মে ২০১৯

  ট্রাম্পের ইমপিচের দাবি জোরালো

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। বুধবার বিরোধী ডেমোক্র্যাট শিবিরের চারজন প্রভাবশালী নেতা ট্রাম্পের অভিশংসন দাবি করেছেন। গত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্ত করা দেশটির বিশেষ আইনজীবী রবার্ট মুয়েলারের এক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বুধবার ডেমোক্র্যাট শিবির থেকে এই দাবি তোলা হলো। খবর বিবিসি, এএফপি ও ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইনের। একই দিন দীর্ঘ নীরবতা ভেঙ্গে রবার্ট মুয়েলার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রখ্যাত আইনজীবী বলেন, রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্তে ট্রাম্পকে বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়ার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়নি। অবশ্য এই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়ার অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মুয়েলার আরও বলেন, একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনার মতো ক্ষমতা তার হাতে ছিল না। মুয়েলারের এই মন্তব্যে কংগ্রেস শিবিরে ট্রাম্পের অভিশংসন দাবিকে আরও জোরালো করেছে। ট্রাম্পের অভিশংসন দাবির বিষয়ে মার্কিন বিচার বিভাগের নীতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুয়েলার বলেন, একজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় অপরাধের অভিযোগ আনা যায় না। এটা অসাংবিধানিক। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ট্রাম্প শিবিরের পক্ষে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দুই বছর ধরে তদন্ত করেন মুয়েলার। অবশ্য ট্রাম্পের অভিশংসন প্রক্রিয়া নিয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অন্যতম সিনিয়র নেতা ও কংগ্রেসের স্পীকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এখনই অভিশংসনের দাবি তুললে তা হিতে-বিপরীত হতে পারে। কিন্তু মুয়েলারের বুধবারের এই মন্তব্যের পর আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক শিবির থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক ২৩ প্রার্থীর মধ্যে ১০ জনই এখন ট্রাম্পের অভিশংসন চাইছেন। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় ডেমোক্র্যাটিক নেতা কোরি বুকার, ক্রিস্টেন গিলবার্ড ও পিটি বুটিগেগের পাশাপাশি সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনও রয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে নিউ জার্সির জনপ্রিয় সিনেটর কোরি বুকার বলেন, মুয়েলারের মন্তব্যের পর কংগ্রেসের ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এখনই অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরুর নৈতিক ও আইনী বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে। অপরদিকে নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর গিলবার্ড বলেন, ট্রাম্পের অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করতে এখনই রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতাদের নিয়ে শুনানি শুরু করা উচিত। একই বিষয়ে ইন্ডিয়ানার মেয়র জনপ্রিয় ডেমোক্র্যাটিক নেতা পিটি বুটিগেগ এক টুইটার বার্তায় বলেন, আমরা একটি অভিশংসন প্রক্রিয়া দেখার কাছাকাছি পৌঁছেছি। ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেন, ট্রাম্পের এখনই অভিশংসন করা উচিত। কারণ মুয়েলারের কথায় এখন আমাদের আর কোন সন্দেহ নেই। আর সংবিধান আমাদের অভিশংসনের ক্ষমতা দিয়েছে। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া এখন আমাদের সামনে আর কোন উপায় নেই। এই চারজনের মতো সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর কমলা হ্যারিসও ট্রাম্পের অভিশংসন দাবি করেন। তবে ট্রাম্পের অভিশংসন প্রক্রিয়া নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রধান ডেমোক্র্যাটিক নেতা জেরি নাডলার বলেন, কেউ আইনের উর্ধে নন। ট্রাম্প এ বিষয়ে বরাবর মিথ্যা বলেছেন। এদিকে মুয়েলারের এই মন্তব্যের পর রিপাবলিকান শিবির থেকে ফের ট্রাম্পকে নিরাপরাধ দাবি করা হয়েছে। বুধবার এক টুইটার বার্তায় খোদ ট্রাম্প বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার পক্ষে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ নেই এবং আমি নির্দোষ। আর ওই ঘটনা এখন শেষ। মার্কিন কংগ্রেসের আইন বিষয়ক কমিটির সদস্য, সিনিয়র রিপাবলিকান নেতা ডাগ কলিন্স বলেন, মুয়েলারের এই ধরনের মন্তব্যে আমাদের দেশ ফের বিভক্ত হয়ে যাবে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স বলেন, গত দুই বছর ধরে মুয়েলার এই তদন্ত প্রতিবেদনটি করেছেন। দেশ তার দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু দীর্ঘ বিরতির পর তার এই বিষয়ে কথা বলা উচিত হয়নি। উল্লেখ্য, এর আগে ট্রাম্পকে ইমপিচ করার প্রস্তাব দেন তার দলেরই এক কংগ্রেস সদস্য। মিশিগান অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য জাস্টিন এ্যামাস সম্প্রতি প্রথমবারের মতো রিপাবলিকান শিবির থেকে ট্রাম্পকে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব দেন। রবার্ট মুয়েলার প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিচার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জাস্টিন এ্যামাস এই আহ্বান জানান। জাস্টিন এ্যামাস উদারপন্থী ও নিরপেক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নের জন্য লড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ভাল বক্তা হিসেবেও তার খ্যাতি আছে। ২০১০ সালে টি-পার্টি নির্বাচনে জয়লাভ করেন এ্যামাস। মিশিগান অঙ্গরাজ্যের এই জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হাউস অব ফ্রিডম ককাসের প্রতিষ্ঠাতা। এই সংগঠন ট্রাম্পের কাজের বরাবরই সমালোচনা করে আসছে।
×