ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপ জিততে পারে বাংলাদেশও

প্রকাশিত: ১০:১৫, ৩০ মে ২০১৯

 বিশ্বকাপ জিততে পারে বাংলাদেশও

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দ্বাদশ বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে আজ। শুরুতে যদিও বাংলাদেশকে মাঠে দেখা যাবে না। মাশরাফিবাহিনীকে মাঠের লড়াইয়ে দেখতে হলে রবিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সেদিন দ্য ওভাল ক্রিকেট মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লড়াই দিয়ে বিশ্বকাপের মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ। এই শুরু থেকেই জয়ের আশায় দল। এবার বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করতে চায় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে আত্মবিশ্বাস নিয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে খেলতে থেকে বিশ্বকাপও জিতে নিতে চায়। বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাই শিরোপা জেতার আশার কথা শুনিয়েছিলেন। বিশ্বকাপের সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জেতার সামর্থ্য আছে? তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্বকাপ জেতার কথা যেটা বললেন, অবশ্যই আছে। খুব কঠিন কিন্তু অসম্ভব বলব না।’ মাশরাফির মনে বিশ্বাস আছে, যদি ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়, ভাল খেলা যায়, তাহলে শিরোপাও জেতা সম্ভব। সেই শিরোপা জিততে, বিশ্বকাপের মিশন শুরু করতে এখন লন্ডনে আছে বাংলাদেশ দল। ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষে লন্ডনে বিমানবন্দরে নেমেই লেস্টারে প্রস্তুতি ক্যাম্প করেছেন বিশ্বকাপ দলের ক্রিকেটাররা। এরপর বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচের ভেন্যু কার্ডিফে গেছে বাংলাদেশ। সেখানে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচটি বৃষ্টির জন্য হয়নি। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি খেলে বুধবার লন্ডনে এসেছে পুরো দল। এখানেই ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। আজ, আগামীকাল ও শনিবার তিনদিন লন্ডনে প্রস্তুতি নিয়ে রবিবার বিশ্বকাপের মিশনে নামবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের শহর লন্ডনে তিনদিন অনুশীলন করার সুযোগ পাচ্ছে মাশরাফিবাহিনী। এবার বিশ্বকাপের যে ফরমেট, সব দলের জন্যই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা কঠিন। যে দল সেটি পারবে তারাই সফল হবে। আজ শুরু হয়ে ফাইনাল ম্যাচ পর্যন্ত বিশ্বকাপ চলবে ১৪ জুলাই পর্যন্ত। যদি ১৪ জুলাই ফাইনালের দিন বৃষ্টি হয়, খেলা না হয় কিংবা যতটা হয়, বাকিটা ‘রিজার্ভ ডে’ ১৫ জুলাইতে হবে। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের আগে ৯ ও ১১ জুলাই যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ৬ জুলাই লীগপর্ব শেষ হবে। ১০ দলের বিশ্বকাপ এবার। স্বাগতিক ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তান বিশ্বকাপে আছে। ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসে হবে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো। প্রতিটি দল পরস্পরের বিপক্ষে লড়াই করবে। একেক দলের সেই হিসেবে ৯টি করে ম্যাচ খেলতে হবে। ৪৬ দিনের টুর্নামেন্টে মোট ৪৮ ম্যাচ হবে। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল বাদে লীগপর্বে হবে ৪৫ ম্যাচ। ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসের ১১টি ভেন্যুতে এই ৪৫ ম্যাচ শেষে সেমিফাইনালে খেলার চার দল বের হবে। যে চারটি দল পয়েন্ট তালিকায় সেরা চারে থাকবে তারাই খেলবে সেমিফাইনালে। শেষ চারে পয়েন্ট তালিকার এক ও চার নম্বর দল প্রথম সেমিফাইনালে এবং দুই ও তিন নম্বর দল দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে। শিরোপা জেতার স্বপ্ন সফল করতে হলে বাংলাদেশকে শুরুতে লীগপর্বের গন্ডি অতিক্রম করতে হবে। সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করতে হবে। সেমিফাইনালে খেলে জিতলেই ফাইনালে উঠে যাবে। ফাইনালে জিতলেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত মিলবে। ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলবে। কিন্তু এত সহজ? বাংলাদেশ ১৯৯৯ সাল থেকে বিশ্বকাপ খেলে। সেই থেকে ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১১ ও ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ খেলেছে। এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ। একবারও ফাইনালে খেলতে পারেনি। সেমিফাইনালেও খেলার সুযোগ মিলেনি। তবে গত আসরেই বাংলাদেশ চমক জাগিয়েছে। কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে। এখন ওয়ানডেতে বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী দল হয়ে উঠেছে। যদিও বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের কাছে নাকানি-চুবানি খেয়েছে দল। ৩৬০ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ২৬৪ রানের বেশি করতে পারেনি। হেরেছেও ৯৫ রানে। তবে এই ম্যাচে হার-জিতের চেয়ে নিজেদের দুর্বলতাগুলো দেখে নেয়াই আসল ছিল। তা দেখে নিয়েছেও বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগে এমন একটি ম্যাচ বাংলাদেশকে সতর্কও করে দিল। যা বাংলাদেশের জন্যই ভাল হলো। বড় মঞ্চে এখন বড় দলই হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে এবার বাংলাদেশকে এক এক করে ২ জুন লন্ডনের ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকা, ৫ জুন নিউজিল্যান্ড, ৮ জুন কার্ডিফে স্বাগতিক ইংল্যান্ড, ১১ জুন ব্রিস্টলে শ্রীলঙ্কা, ১৭ জুন টন্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০ জুন নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়া, ২৪ জুন সাউদাম্পটনে আফগানিস্তান, ২ জুলাই বার্মিংহামে ভারত ও ৫ জুলাই লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে হবে। সব দলকেই এর আগে বাংলাদেশ হারিয়েছে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডকে হারানোর টার্গেটের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভারতকে কোনভাবে হারানো গেলেই সেমিফাইনালে খেলা হয়ে যেতে পারে। আর সেমিফাইনালে উঠলে যে কোন কিছুই হতে পারে। এক ম্যাচ জিতে ফাইনালেও খেলা হয়ে যেতে পারে। আর ফাইনালে উঠলে শিরোপাও ধরা দিতে পারে। সেই শিরোপা সত্যিই জিততে পারে বাংলাদেশও। সেটি যে নিছক বলার জন্য বলা নয়, সেটি বিশ্বসেরা ওয়ানডে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান খুব গুরুত্বের সঙ্গে বলেছেন। জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ আছে। প্রকৃতই এবার আমাদের টুর্নামেন্ট (বিশ্বকাপ) জয়ের সুযোগ আছে বলে মনে করি। তবে অবশ্যই আমাদের ধারাবাহিক পারফর্ম করতে হবে। তা করতে পারলে নকআউট পর্বে উঠতে পারব এবং সেখান থেকে এগিয়ে যাওয়া যাবে। এবার আমরা ভাল করব সে ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। দলে কয়েকজন খেলোয়াড় আছে যারা তিন-চারটি বিশ্বকাপে খেলেছে। এটা ভাল বিষয়। কারণ কি করা উচিত তা বুঝতে পারব। আমি আত্মবিশ্বাসী।’ সাকিব বিশ্বসেরা ওয়ানডে অলরাউন্ডার। তিনি যা বলেন বুঝেই বলেন। নিছক কোন কথা তিনি বলতে রাজি নন। এবার সাকিব বিশ্বকাপ জেতার কথা বলছেন। সব হিসেব করেই বলেছেন। আর এবারতো শুধু সাকিব নয়, শেষবারের মতো ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলতে নামার জন্য আর দুইদিন অপেক্ষায় থাকা অধিনায়ক মাশরাফিও বলেছেন। তাতে ভাল করেই বোঝা যাচ্ছে বিশ্বকাপ এবার জিততে পারে বাংলাদেশও।
×