ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লাল-সবুজের দেশের বিশ্বকাপ উন্মাদনা

প্রকাশিত: ১০:১৪, ৩০ মে ২০১৯

 লাল-সবুজের দেশের বিশ্বকাপ উন্মাদনা

জাহিদুল আলম জয় ॥ কপিল দেবের নেতৃত্বে ১৯৮৩ সালে ভারত ও অর্জুনা রানাতুঙ্গার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জয় ক্রিকেট ইতিহাসের স্মরণীয় ঘটনগুলোর মধ্যে শীর্ষে। এ দু’টি বিশ্বকাপে ক্রিকেট দেখেছিল দু’টি নতুন পরাশক্তির উত্থান। ’৮৩’র বিশ্বকাপ জিতে ভারত ও ’৯৬’র বিশ্বকাপ জিতে শ্রীলঙ্কা বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিয়েছিল। ভারত, শ্রীলঙ্কার পথ অনুসরণ করে ইতোমধ্যে লাল-সবুজের দেশ ক্রিকেটে পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এখনও বিশ্বকাপ জেতা না হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চোখ ধাঁধানো ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বের সেরা দেশগুলোর একটি। এ কারণে আজ থেকে ইংল্যান্ডে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তামাম দুনিয়ার বাড়তি নজর থাকছে মাশরাফি, মুশফিক, সাকিব, তামিম, মোস্তাফিজদের দিকে। ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের রঙিন মঞ্চে খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। সেবার তারকা ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে অভিষেকেই বিশ্বকে শাসিয়ে দিয়েছিল টাইগাররা। বাঘের থাবায় ওই আসরে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তান। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধেও প্রত্যাশিত জয় পেয়েছিল বুলবুলবাহিনী। ২০ বছর আগে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ খেলার পর এখন পর্যন্ত সবগুলো আসরেই খেলেছে বাংলাদেশ। আর এখন পর্যন্ত সেরা সাফল্য এসেছে গত ২০১৫ বিশ্বকাপে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে হওয়া বিশ্বকাপে পুল এ’এর আটটি দলের মধ্য থেকে সেরা চারে জায়গা করে নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। সেমির টিকেট পাওয়ার মিশনে কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে ১০৯ রানে হেরে মিশন শেষ হয় বাংলার ছেলেদের। কিন্তু ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে হওয়া ম্যাচটি কলঙ্কিত হয়েছিল আম্পয়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে। বেশ কয়েকটি বাজে সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিল। ওই ব্যথা এখনও কাঁদায় বাংলাদেশের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীদের। চার বছর পর আবারও দুয়ারে এসেছে বিশ্বকাপ উন্মাদনা। আবারও স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে বাংলার জনগণ। স্বপ্নের পরিধি আরও বেড়েছে, কারণ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আগের চেয়ে এখন আরও বেশি পরিপক্ব, গোছালো, অপ্রতিরোধ্য। যে কোন দলকেই মুহূর্তে উড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন সৌম্য, মোসাদ্দেক, সাব্বিররা। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি টুর্নামেন্টে বীরদর্পে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ সে স্বাক্ষর আরেকবার রেখেছে। এখন ময়দানী লড়াইয়ে মুন্সিয়ানা দেখিয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সাফল্য ছিনিয়ে আনার পালা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দিয়ে আজ থেকে বিশ্বযজ্ঞ শুরু হয়ে গেলেও বাংলাদেশ মিশন শুরু করবে আগামী রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও আটটি ম্যাচ খেলবে মাশরাফির দল। এ কারণে ভুল-ত্রুটি শুধরে ভাল করার সুযোগ থাকছে টাইগারদের। বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তরা মুখিয়ে আছেন প্রিয় তারকাদের মনোমুগ্ধকর পারফর্মেন্স দেখতে। আবেগী এই জাতি ‘চ্যাম্পিয়ন’ হওয়ারও স্বপ্ন বুনছে। স্বপ্নবাজ তরুণ বায়েজিদ হোসেন তো কাউকে পাত্তাই দিচ্ছেন না, ‘আমরাই (বাংলাদেশ) এখন ক্রিকেট বিশ্বের সেরা দেশ। আমাদের দলটি সবদিক দিয়ে ব্যালেন্সড। আশা করছি এবার চ্যাম্পিয়ন হয়েই দেশে ফিরবে মাশরাফির দল’। তবে বাস্তবতাকে সামনে রেখে সনজনা এশা নামের টাইগারভক্ত বলেন, ‘এবারের ফরমেটটা অনেক কঠিন। সাফল্য পেতে হলে ধারাবাহিকতার বিকল্প নেই। তবে আমি আশাবাদী বাংলাদেশ অন্তত সেমিফাইনালে খেলবে’। মাশরাফির যোগ্য নেতৃত্বে তামিম, মুশফিক, সৌম্যরা ধারাবাহিকভাবে বহির্বিশ্বকে দেখিয়ে চলেছেন বাঘের গর্জন। নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিয়ে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, হেলাফেলার দিন শেষ! দুর্দান্ত ধারাবাহিক এখন বিশ্বকাপের রঙিন মঞ্চে সাজিয়ে তোলার পালা বাংলার সোনার ছেলেদের। তাদের ভুবনজয়ী পারফর্মেন্স দেখার অপেক্ষায় বাংলাদেশের জনগণ।
×