ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই শুরু আজ

প্রকাশিত: ১০:১৩, ৩০ মে ২০১৯

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই শুরু আজ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ লন্ডনের কেনিংটন ওভালে আয়োজক ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়ে আজ থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ১২তম আসর। কয়েকটি কারণে এবারের বিশ্বকাপ বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। দীর্ঘ ২০ বছর পর ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ডে বসতে যাচ্ছে শ্রেষ্ঠত্বের এ লড়াই। ১৯৯৯ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলস। ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩- প্রথম তিন বিশ্বকাপসহ এ নিয়ে মোট পঞ্চমবারের মতো আয়োজক তারা। অথচ শিরোপাটা রয়ে গেছে অধরা। ট্রফিটাকে প্রায় পৈত্রিক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন (মোট পাঁচবার) অস্ট্রেলিয়া শেষ মুহূর্তে এসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দারুণভাবে। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে দুর্দান্ত খেলছে ভারতও। আছে ওয়ানডেতে ক্রমশ পরাশক্তি হয়ে ওঠা বাংলাদেশ আর নিউজিল্যান্ড। অংশগ্রহণকারী অপর দলগুলো হচ্ছে- পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। ১৯৯২ সালের পর এবারই কোন গ্রুপিং ছাড়া বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে লীগ পদ্ধতিতে। অর্থাৎ অংশগ্রহণকারী দশটি দল একবার করে একে অপরের মুখোমুখি হবে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ চার দল খেলবে সেমিফাইনালে। ১৪ জুলাই ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে ফাইনালের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ব্যাটে-বলে বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের এ লড়াই। এবারের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের কথা বিশেষভাবে বলতেই হয়। আগের ১১ আসরে তিনবার ফাইনালে উঠেও যাদের শিরোপা ছোঁয়া হয়নি। ১৯৭৯, ১৯৮৭ ও ১৯৯২’র ফাইনালে তাদের হার যথাক্রমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের কাছে। এবার সেই বন্ধ্যত্ব ঘোচাতে চায় ইংলিশরা। দেশের মাটিতে খেলার সুবিধা নিয়ে ১২তম আসরে এসে এবার প্রথমবারের মতো শিরোপা ছুঁয়ে দেখতে মরিয়া তারা। আর গেল তিন বছর ধরে ওয়ানডেতে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স তাদের সেই স্বপ্নটাকে আরও উস্কে দিচ্ছে। গত বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়ার পর খোলনলচে বদলে পাওয়ার ক্রিকেটের পসরা নিয়ে নতুনরূপে আবির্ভূত হয় ইংলিশরা। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ইংল্যান্ডকে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে তুলে আনেন ইয়ন মরগান। গত বিশ্বকাপ থেকে এ পর্যন্ত- গড়ে সবচেয়ে বেশি ৩৩০-৩৫০ রান করা দল ইংল্যান্ড। সাড়ে তিন শ’ রান চেজ করেও তারা জয় তুলে নিচ্ছে অনায়াশে। দলটিকে ঘিরে প্রত্যাশার পারদ তাই আকাশ ছোঁয়া। তবে বাস্তবতা কঠিন। এমনিতে ভাল করা আর বড় মঞ্চের চাপ সামলে সেরা সাফল্য তুলে নেয়া এক জিনিস নয়। প্রস্তুতি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের পর ইয়ন মরগান সেটি নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পারছেন। বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে বলতে গেলে অস্ট্রেলিয়াকে আলাদা অবস্থানেই রাখতে হবে। আগের ১১ আসরে এ পর্যন্ত রেকর্ড সর্বাধিক পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অসিরা বিশ্বকাপ এলেই কেমন যেন গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠে। গতবার ঘরের মাটিতে প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিল তারা। মাইকেল ক্লার্কসহ একাধিক তারকার অবসরের পরও এগোচ্ছিল সঠিক পথে। কিন্তু গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বহুল আলোচিত সেই বল টেম্পারিংয়ের অপরাধে তৎকালীন অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও হার্ডহিটার ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হলে হঠাৎই সব এলোমেলো হয়ে পড়ে। তাদের নিষেধাজ্ঞার সময়ে এক পর্যায়ে ২৬ ম্যাচের মধ্যে ২২টি হেরে পায়ের তলার মাটি হারিয়ে ফেলেছিল। অসিদের জন্য স্বস্তির ব্যাপার হলো, সেই সময়টা তারা কাটিয়ে উঠেছে ঠিক বিশ্বকাপ সামনে রেখে। এ্যারন ফিঞ্চের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া ভারতকে হারিয়েছে ভারতেরই মাটিতে। এরপর আমিরাতে পাকিস্তানকে করেছে হোয়াইটওয়াশ। ঘুরে দাঁড়িয়েছে একেবারে মোক্ষম সময়ে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে স্বরূপে ফিরে এসেছেন স্মিথ-ওয়ার্নার। দাপুটে জয় পাওয়া দুটি ম্যাচের একটিতে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলকে জিতিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক স্মিথ। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ভারতের এবারের দলটিকে বলা হচ্ছে দেশটির আধুনিক সময়ের অন্যতম সেরা দল। ব্যাটিং-বোলিং, পেস-স্পিন আক্রমণ, অভিজ্ঞতার সঙ্গে তারুণ্যের কম্বিনেশন, দেশ-বিদেশে একের পর এক সাফল্য দলটিকে রেখেছে ফেবারিটের কাতারে। আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে ভারত এই মুহূর্তে দ্বিতীয় স্থানে, আয়োজক ইংল্যান্ডের পরই তাদের অবস্থান। ইংল্যান্ডে পা রেখে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দেয় কোহলিবাহিনী। র‌্যাঙ্কিংয়ে তিন নম্বরে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা বরাবরই বড় টুর্নামেন্টের এক দুর্ভাগা নাম। ফ্যাফ ডুপ্লেসিসের নেতৃত্বে এবার দলটির পেস আক্রমণ খুবই শক্তিশালী। আছেন কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিদি, ডেল স্টেইন। স্পিনে বর্ষীয়ান ইমরান তাহির ভয়ঙ্কর। র‌্যাঙ্কিংয়ের চারে থাকা কেন উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ড বরাবরই দারুণ ব্যালান্স এক দল। ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তান ছয়, আর বাংলাদেশ আছে সাত নম্বরে। পাকিস্তানকে নিয়ে আগাম মন্তব্য করা কঠিন। এই ইংল্যান্ডেই ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা উদ্যাপন করেছিল সরফরাজ আহমেদের দল। অথচ তারা বিশ্বকাপ খেলতে নামছে টানা দশ ওয়ানডে হারের তিক্ততা নিয়ে! পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভাল পারফর্মেন্স করে বিশ্বের সব দলের সমীহ আদায় করে নিয়েছে বাংলাদেশ। দলের পাঁচ সিনিয়র অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদই বড় ভরসা। সাবেক চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এবার বাছাইপর্ব খেলে বিশ্বকাপের টিকেট পেতে হয়েছে। তবে ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল, শাই হোপদের নিয়ে তাদের ব্যাটিং খুবই শক্তিশালী। প্রস্তুতি ম্যাচে চার শ’র ওপরে রান তুলে নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়েছে জেসন হোল্ডারের দল। শ্রীলঙ্কার অবস্থা তথৈবচ। মাঠ ও মাঠের বাইরে ধুঁকতে থাকা দলটি এবার অনেকটাই হিসেবের বাইরে! অথচ মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে আসা আফগানিস্তান হয়ে উঠেছে জায়ান্ট কিলার। প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানকেও হারিয়ে দিয়েছে তারা! দলের বড় ভরসা বৈচিত্র্যময় স্পিন আক্রমণ। যেখানে বড় নাম লেগস্পিনার রশিদ খান ও অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি, আছেন মুজিব উর রহমান জাদরান।
×