ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জুতার দোকানগুলো সেজেছে রকমারি সমাহারে

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ৩০ মে ২০১৯

 জুতার দোকানগুলো  সেজেছে রকমারি সমাহারে

রহিম শেখ ॥ ক’দিন বাদেই ঈদ। চলছে তুমুল কেনাকাটা। পোশাকের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক পণ্য কিনতে ধনী-গরিব সবাই এখন মহাব্যস্ত। এরমধ্যে অন্যতম নতুন জুতা। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নানা রং আর বাহারি ডিজাইনের এসব জুতা-স্যান্ডেলের খোঁজে ফ্যাশনসচেতন তরুণ-তরুণী ও শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ ছুটছেন মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিংমলে। পোশাকসহ কিছু পণ্যে বিদেশী আধিপত্য থাকলেও জুতার বাজার সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে দেশী পণ্যের একচেটিয়া দাপট। ক্রেতাদেরও পছন্দের শীর্ষে ব্র্যান্ডের জুতাগুলো। এবার প্রখর রোদ ও বর্ষা মৌসুমে ঈদ হওয়ায় বৃষ্টি, কাদা এবং আর্দ্রতার বিষয়টি মাথায় রেখে জুতার ডিজাইন করা হয়েছে। দামী ব্র্যান্ডের শোরুমের পাশাপাশি ফুটপাথের দোকানেও এসেছে জুতা-স্যান্ডেলের নতুন নতুন কালেকশন। ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানীর জুতার দোকানগুলো সেজেছে রকমারি সব জুতার সমাহারে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাহারি ডিজাইন এনেছে। ঈদ উপলক্ষে এ্যাপেক্স, ওরিয়ন, বাটা, বে-এম্পোরিয়াম, জেনিস, লেদারেক্স ও আড়ংসহ নানা ব্র্যান্ডের দোকানে রয়েছে জুতার বিশেষ সংগ্রহ। এছাড়া বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, এলিফ্যান্ট রোডের মার্কেট, নিউমার্কেট, মৌচাক, মালিবাগ, পলওয়েল মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, গুলিস্তান, সদরঘাটসহ অন্যান্য বাজারের দোকানগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জুতা। ব্রান্ডের জুতায় ভিসা ও মাস্টারসহ নানা কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহকদের কেনাকাটায় বিশেষ ছাড় দিয়েছে। ফলে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর গ্রাহকরা ব্র্যান্ডের জুতাকেই বেছে নিচ্ছেন। বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের এপেক্স শোরুমে জুতা কিনতে এসেছেন মুনিয়া। বললেন, ‘ঈদে দুই জোড়া জুতা কিনি। একটা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে অন্যটা সব সময় সহজে পরা যায় এমন। ঈদের পোশাকের সঙ্গে একটু উঁচু হিলের জুতা খুঁজছি।’ ঈদ বাজারে এবার মেয়েদের ঈদের জুতার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের হিলযুক্ত স্যান্ডেলের চাহিদা বেশি। ফ্ল্যাট হিলের বদলে নক্সাদার বিভিন্ন আকার-আকৃতির হিলযুক্ত স্যান্ডেল ও স্যু এসেছে বাজারে। বিক্রিও হচ্ছে দেদার। এ ছাড়া গ্লাস হিল, ব্যালান্স হিল আর বাকলসের জুতাগুলো ফ্যাশনে যোগ করছে ভিন্ন মাত্রা। মেয়েদের জুতায় আরো আছে নক্সাদার স্নিকার, লোফার, ব্যালেরিনা, প্লাটফর্ম হিলসহ নানা ডিজাইনের জুতা। উৎসবের জুতার নক্সায় জমকালো লুক যোগ করেছে জরির কারুকাজ, পাথর আর পুঁতি। কিছু জুতায় মখমল ফ্যাব্রিকসে এমব্রয়ডারি, কারচুপি ও স্টোনের নক্সা দেখা গেছে। এবার জুতার সোল ও এ্যাকসেসরিজে থাকছে ভিন্নতা ও নতুনত্ব। ফ্যাব্রিকস ও লেদারের পাশাপাশি সিনথেটিক, কৃত্রিম চামড়া ও পাট ইত্যাদি দিয়ে তৈরি জুতা পাওয়া যাচ্ছে। সাদা, কালো আর বাদামি রঙের পাশাপাশি এবারও এনেছে লাল, গোলাপী, কমলা, নীল, ফুশিয়া, সবুজসহ নানা রঙের জুতা। জানা গেছে, পোশাকসহ কিছু পণ্যে বিদেশী আধিপত্য থাকলেও জুতার বাজার সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে দেশী পণ্যের একচেটিয়া দাপট। ক্রেতাদেরও পছন্দের শীর্ষে ব্র্যান্ডের জুতাগুলো। ঈদ উপলক্ষে বাটা সু প্রায় একশত নতুন ডিজাইন নিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কর্মকর্তারা। একইভাবে এ্যাপেক্স, ওরিয়ন ও বে-এম্পোরিয়ামও কয়েক শতাধিক নতুন ডিজাইন নিয়ে এসেছে। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, বেচা-কেনা ততই বাড়ছে বলে জানিয়েছেন এসব কোম্পানির বিক্রয় কর্মীরা। তবে গ্রাহকরা বলছেন, মানের তুলনায় অনেক জুতার দাম বেশি। তারপরেও পছন্দের জুতা দাম দিয়ে কিনছেন। এ প্রসঙ্গে বাটা’র হেড অব রিটেইল এ এ মোঃ আরফানুল হক বলেন, আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রাহকের পছন্দ, রুচিকে মাথায় রেখেই নেয়া হয়। সবসময় চেষ্টা থাকে ক্রেতারা যাতে বাটা’য় এসে শপিংয়ের দারুণ একটি এক্সপেরিয়েন্স পান। ঈদ শপিং নিয়ে এদেশের মানুষের কেমন আগ্রহ থাকে সেটা বিবেচনা করে প্রতিবারই আমরা ভিন্নধর্মী আকর্ষণীয় ডিজাইন নিয়ে আসি। তিনি বলেন, বাটা’র উইমেন’স কালেকশনে থাকছে বিভিন্ন পার্টি এসেনসিয়ালস। ফ্ল্যাটস, ব্যালে ফ্ল্যাট, ওয়েজেস এবং হাই হিল জুতোয় এবার করা হয়েছে স্টাডস, স্টোন, লেজার কাট এবং এমব্রয়ডারি ডিজাইন। রং হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে গোল্ড, শ্যাম্পেইন, রোজ গোল্ড ও সিলভারের ম্যাট ও গ্লাসি ফিনিশড ট্রেন্ডি শেড। শতাধিক কালেকশন নিয়ে এবারের ঈদে হাজির হয়েছে এপেক্স। মেয়েদের জন্য রয়েছে ওয়েজ হিলের নিনো রসি। আছে ব্যালেরিনার কালেকশন। ফ্যাশনে নতুন মাত্রা দিতে আছে সান্দ্রা রোসার ভিন্ন ধাঁচের গ্ল্যাডিয়েটর স্যান্ডেল। এ ছাড়া আছে পিপ টো ফ্ল্যাট স্যান্ডেল। বিক্রি হচ্ছে ৭৯৯ থেকে শুরু করে ৪১৯০ টাকায়। শিশুদের জন্য এপেক্সে আছে টুইংকলারের নানা রং ও ডিজাইনের স্যান্ডেল, স্পোর্টস সু, পাম্প, লোফার। দাম ৪৯০ থেকে ১৯৯০ টাকার মধ্যে। ছেলেদের জন্য ভেনচুরিনির ফরমাল সুজ, লোফার ইত্যাদি পাওয়া যাবে। আছে মাভেরিকের বুট ও মোকাসিনের কালেকশন। ছেলেদের জুতা ও স্যান্ডেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৯০ থেকে ৯৯৯০ টাকায়। বসুন্ধরা সিটির এ্যাপেক্সের বিক্রয়কর্মী সুজাউল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, পাঞ্জাবির সঙ্গে সাধারণত স্লিপার, স্যান্ডেলই সবাই পছন্দ করছেন। অনেকে আবার বেল্টসহ বেছে নিচ্ছেন ব্যাক বেল্ট স্লিপার। ওরিয়ন ফুটওয়্যারের কর্মকর্তা মিনহাজ আহমদ বলেন, ঈদের এ সময়ে সবাই চায় নিজেকে একটু আলাদাভাবে তুলে ধরতে। সে হিসেবে ছেলে-মেয়ে-শিশুসহ সব বয়সী সবার কথা বিবেচনায় নিয়ে ওরিয়নে থাকছে চার শতাধিক নক্সার জুতার সংগ্রহ। একই সঙ্গে ওরিয়ন এনেছে ‘এথনিক ওয়্যার’ নামে ছেলেদের জন্য বিশেষ নক্সার জুতা, যা মানানসই পাঞ্জাবির সঙ্গে। জেনিস বাচ্চাদের জন্য নতুন নতুন ডিজাইনের জুতা ও স্যান্ডেল নিয়ে এসেছে এবারের ঈদে। সর্বনিম্ন ৫৯০ থেকে ১২৯০ টাকার মধ্যে পাবেন এসব জুতা। এ ছাড়া লোফার, পাঞ্জাবির সঙ্গে স্লিপার, স্যান্ডেল, মেয়েদের জন্য পার্টি সু, ব্যালেরিনা সু পাওয়া যাচ্ছে জেনিসে। পিওর লেদার ছাড়াও আড়ংয়ে আছে আর্টিফিসিয়াল লেদারের জুতা। আছে স্লিপার ও মেয়েদের জন্য সেমিহিল স্যান্ডেল। সরেজমিনে বসুন্ধরা সিটি, বায়তুল মোকাররম, নিউ মার্কেট, চাঁদনি চক, রাপা প্লাজা, মেট্রো শপিংমল, জেনেটিক প্লাজা, ফার্মগেট, এলিফ্যান্ট রোড ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিভিন্ন শো-রুম ঘুরে দেখা যায় চীন, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা জুতা-স্যান্ডেলও বিক্রি হচ্ছে কম-বেশি। বড় বড় শপিংমল আর নামীদামী বিপণি বিতানের বাইরে ফুটপাথের দোকানগুলোতেও আমদানিকৃত স্যান্ডেল-জুতার আধিক্য। এসবের দাম গড়ে আড়াই’শ থেকে পাঁচ হাজার টাকা। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও চৌরঙ্গীতে হাজার-বারো শ’ টাকায় মোটামুটি ভালমানের আমদানি করা স্যান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে। তবে দাম এক হাজার পাঁচশ থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে এমন স্যান্ডেলের চাহিদা বেশি। আমদানি করা কেডসের চাহিদাও কম নয়। এসবের দাম এক হাজার থেকে ছয়-সাত হাজার টাকা বা এরও বেশি। ফুটপাথে আমদানি করা স্যান্ডেল, জুতা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। ঈদের ভিড় সামলে একটু বেশি লাভের আশায় ফুটপাথের দোকানিরাও এক দরে পণ্য বিক্রি করছে। ঈদ সামনে রেখে বাড়তি প্রস্তুতি রয়েছে দেশীয় ব্র্যান্ডের জুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। নতুন নতুন ডিজাইনের জুতা-স্যান্ডেল বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। ব্র্যান্ডের ভালমানের স্যান্ডেল-জুতা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়।
×