ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

এনএসআইর সাবেক ডিজি ওয়াহিদুলের বিরুদ্ধে চার্জ শুনানি ৩০ জুলাই

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ৩০ মে ২০১৯

 এনএসআইর সাবেক ডিজি ওয়াহিদুলের বিরুদ্ধে চার্জ শুনানি ৩০ জুলাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যাসহ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মামলায় পাকিস্তান আর্মির সাবেক ক্যাপ্টেন ও এনএসআই’র সাবেক ডিজি মোঃ ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের শুনানির জন্য আগামী ৩০ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। আসামি পক্ষের আইনজীবীর সময় বাড়ানোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছে। এ সময় ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, সুলতান মাহমুদ সিমন, রেজিয়া সুলতানা চমন ও ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। আসামিপক্ষে সময়ের আবেদন করেন আইনজীবী মিজানুর রহমান ও আব্দুস সোবহান তরফদার। ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য প্রসিকিউশন পক্ষের শুনানি মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার সময় আবেদন করলে আদালত বুধবার দিন ধার্য করে। কিন্তু ওয়াহিদুল হকের পক্ষে নতুন নিয়োগ পাওয়া আরেক আইনজীবী মিজানুর রহমান মামলার প্রস্তুতির জন্য ফের সময় চেয়ে আবেদন করেন। তখন ট্রাইব্যুনাল আগামী ৩০ জুলাই শুনানির দিন নির্ধারণ করে দেন। পরে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল জনকণ্ঠকে বলেন, গত ২৯ এপ্রিল ওয়াহিদুলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশনপক্ষ। ওই দিন আসামিপক্ষের শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন রাখে। কিন্তু ওই দিন আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার সময় চাইলে ট্রাইব্যুনাল বুধবার পর্যন্ত সময় দেন। কিন্তু বুধবার অন্য এক আইনজীবী মিজানুর রহমান আসামি ওয়াহিদুল হকের পক্ষে নিয়োজিত হয়েছেন জানিয়ে শুনানির প্রস্তুতির জন্য সময়ের আবেদন করেন। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ৩০ জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে আসামি ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ওইদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর বারিধারার বাসা থেকে ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ২৫ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে হাজির করার পর ওয়াহিদুল হককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন। এই আসামির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর তদন্ত সম্পন্ন করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ পাওয়া যায়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর এ মামলার তদন্ত শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ মতিউর রহমান। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর তদন্ত সম্পন্ন হয়। মামলায় মোট ৫৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা যায়, আসামি ওয়াহিদুল হকের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। ১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ১১ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট কমিশন প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে বদলি সূত্রে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে যোগদান করেন। এরপর সেখান থেকে পাকিস্তানের মুলতান ক্যান্টনমেন্টে চলে আসেন। পরে ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট রংপুর সেনানিবাসে স্থানান্তরিত হন। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত এই রেজিমেন্টের এ্যাজ্যুটেন্ট হিসেবে রংপুর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে বদলি হয়ে আবার তিনি পাকিস্তান (পশ্চিম পাকিস্তান) চলে যান। সেখানে তিনি ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করেন। ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি দেশে ফিরে আসেন। সে সময় তাকে সেনাবাহিনী থেকে অবসর দেয়া হয়। এরপর ১৯৭৬ সালের ১ অক্টোবর ওয়াহিদুল হক বাংলাদেশ পুলিশের এএসপি হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে কুমিল্লার এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরে ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ১৯৮২ সালে নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটনে অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম রেঞ্জে তিনি ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার হিসেবে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এনএসআই’র পরিচালক ছিলেন। পরে একই সংস্থার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পান। এরপর ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি পাসপোর্ট অফিসের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০২ সাল তিনি পুনঃনিয়োগ পান। পরে ২০০৫ সালে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ওয়াহিদুল হক ১৯৭১ সালে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর রংপুর ক্যান্টনমেন্টে হত্যা-গণহত্যার ঘটনা ঘটান। পাকিস্তান আর্মির সদস্য হিসেবে সেই ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তদন্ত সংস্থায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আসে। সেই অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে ৫শ’ থেকে ৬শ’ নিরস্ত্র বাঙালী ও সাঁওতালকে ধরে এনে মেশিনগান দিয়ে তাদের হত্যার ঘটনায় তিনি জড়িত ছিলেন। এছাড়াও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
×