ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বান্দরবানে বাড়বে সংঘাত

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ৩০ মে ২০১৯

  বান্দরবানে বাড়বে সংঘাত

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ২৯ মে ॥ তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে সম্প্রীতি ও শান্তির জেলা হিসাবে পরিচিত বান্দরবানে আঞ্চলিক দলগুলো আধিপত্য ধরে রাখা ও বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুন, অপহরণ ও চাঁদাবাজি বেড়ে যাওয়ার কারনে শংকিত স্থানীয়রা, আর এরই মধ্যে আরও ৩টি আঞ্চলিক সংগঠন সক্রিয় হচ্ছে। জানা গেছে, বান্দরবানে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রম থাকলেও বর্তমানে জেএসএস (এমএস লারমা), ইউপিডিএফ (গণতন্ত্র) ও মারমা যুবকদের নিয়ে গড়া মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি) তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছে। এ ব্যাপারে জেএসএস (এম এন লারমা) জেলা সভাপতি জয় বাহাদুর বলেন, আমরা বান্দরবানে আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে নতুন কমিটি ঘোষণা করে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে কাজ করব। আরও জানা গেছে, রাজনৈতিক মাঠ করতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা, অপহরণ করছে জেএসএস, এমন দাবি আওয়ামী লীগের, অন্যদিকে এই দাবি অস্বীকার করে জেএসএস। চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে একে অপরের নেতাকর্মীকে হত্যা করছে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো। জেলায় আগে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর মধ্যে জেএসএস, ইউপিডিএফের কার্যক্রম থাকলে এবার জেএসএস (এমএন লারমা), ইউপিডিএফ (গণতন্ত্র) ও মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি) তাদের কার্যক্রমের বিস্তার বান্দরবানে করবে বলে জানা গেছে। ফলে অন্য দুই পার্বত্য জেলার মতো বান্দরবানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হতে পারে। এ ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক জলি মং মার্মা বলেন, এই তিন সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হলে সম্প্রীতির বান্দরবানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে এবং সংঘাত আরও বাড়বে। আরও জানা গেছে, জেএসএস ও ইউপিডিএফ তাদের নেতাকর্মীদের রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি থেকে নিয়ে এসে বান্দরবানের মারমাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি ও খুন, অপহরণ এবং অন্য ১০টি আদিবাসী সম্প্রদায়কে সুবিধাবঞ্চিত করছে বলে অভিযোগ করে মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি)। পার্বত্য জেলার মারমা অধ্যুষিত বান্দরবান থেকে জেএসএস ও ইউপিডিএফ নেতাকর্মীদের তাড়াতে সক্রিয় কার্যক্রম শুরু করছে মারমা যুবকদের নিয়ে গড়া মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি)। ফলে সামনে আরও সংঘাত বাড়বে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসলাম বেবী বলেন, সন্ত্রাসীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা হোক। তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী কাছে আবেদন করছি। আরও জানা গেছে, জেলা সদরের রাজবিলা ও কুহালং ইউনিয়ন থেকে গত ১৭ দিনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ৪ জন নিহত ও ১ জন অপহরণের শিকার এবং চাঁদাবাজি বেড়ে যাওয়ার কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকে বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নে পুলিশ বিশেষ অভিযানে নামে। গত ৭ মে সন্ত্রাসীরা জনসংহতি সমিতির কর্মী বিনয় তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করে। একই দিন অপহরণ করা হয় পুরাধন তঞ্চঙ্গ্যা নামের অপর কর্মীকে। ৯ মে সন্ত্রাসীরা জনসংহতি সমিতির সমর্থক জয়মনি তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করে। ১৯ মে বান্দরবানের রাজবিলায় আওয়ামী লীগের সমর্থক ক্য চিং থোয়াই মারমাকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করা হয়। গত ২২ মে বান্দরবান পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর চথোয়াই মং মার্মাকে অপহরণ করে হত্যা করে, ঘটনার তিনদিন পর তার গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জেএসএসের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক কেএসমং মারমা, জেলা জেএসএস সভাপতি উছোমং মারমা, সাধারণ সম্পাদক, ক্যবামং মারমাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন, প্রতিরোধ করুন যাতে বান্দরবানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সংঘটিত করার সাহস না পায়। এদিকে বান্দরবান সদরের রাজবিলা ইউনিয়নের ২ ও ৩নং রাবার বাগান, বুড়িপাড়া ও কুহালং ইউনিয়নের উজি হেডম্যান পাড়া, চড়ুই পাড়া, হেব্রণ পাড়াসহ বিভিন্ন বাড়ী ও দুগর্ম পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এবং সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। এসময় পুলিশ এলাকার যুবক যুবতীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে এবং সন্ত্রাসীদের কোন তথ্য থাকলে পুলিশকে জানানোর আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বান্দরবানে আশ্রয় হবে না এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
×