ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভালবাসা ও ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ৩০ মে ২০১৯

 ভালবাসা ও ভোগান্তি

অমিত দাস ॥ গভীর ভালবেসে এই প্রচন্ড গরমে হাজার হাজার শহুরে নাগরিক কাতারে কাতারে ছুটে যাবে গাঁয়। শহরশূন্য করে আসছে ঈদ উপলক্ষে। দূরত্বকে দূরে ঠেলে পথের ক্লান্তি ভুলে গায়ের রোগযন্ত্রণা উপেক্ষা করে শত কষ্টকে কষ্ট না ভেবে হাসি মুখে কেন মানুষ এমনভাবে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছে। কেবল পরিবারের আপন মানুষদের সঙ্গে মিলেমিশে ঈদের আনন্দটুকু উপভোগ করার জন্য এক পারিবারিক মিলন উৎসবে সামিল হওয়ার জন্য মানুষের এই উন্মাদনা। এই আবেগ এই আনন্দাশা কার না আছে। মায়ের মুখ বাবার মুখ বোনের মুখ প্রিয় পুত্র-কন্যার মুখ নাতি-নাতনির মুখ প্রবাসী স্বামীর মুখ এতদিন পরে এক জায়গায় একসঙ্গে এতসব পরিচিত মুখ দেখে কাছের মানুষকে কাছে পেয়ে কার মনের গহীন দেশে এক অনাবিল আনন্দের নদী প্রবাহিত না হবে। তাই তো দেখি যতদূরেই থাকুক না কেন পরিবারের শহুরে বসবাসকারী মানুষগুলো গাঁয়েই ফিরে আসে বছরে একবার বা দুবার আনন্দের ফেরিওয়ালা হয়ে। ভাবতেই কী ভাললাগে ভাইয়া বাড়ি আসবে নতুন জামা-কাপড় নিয়ে। কিন্তু ভালবাসা গ্রহণ করা কিংবা ভালবাসা দান করা উভয়টি যে বেশ ভাগ্যের বিষয়। সকলেরই যে একই দুর্ভাবনা দুশ্চিন্তা কি করে বাড়ি যাওয়া যায়? সবাই যে গাঁয়ের যাত্রী? এত নিরাপদ রাস্তা কোথায়? এত গাড়ি কোথায় এত লঞ্চ কোথায় যে একই সময়ে একসঙ্গে এত যাত্রীকে নির্বিঘ্নে নির্ঝঞ্ঝাটে নিরাপদে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিতে পারে? সবার মনে একটাই ভয় ভাড়া যতই হোক একটা টিকেট জুটবে তো এই আশঙ্কায় বাড়ি যাওয়ার আনন্দের মাঝেও অনেকেই বেশ আতঙ্কিত টিকেট নিয়ে আছে টালবাহানা আছে কালোবাজারি আছে কপট কর্তাব্যক্তির কারসাজি আছে সার্ভার পাওয়া যায় না নামক যন্ত্রের যন্ত্রণা। তাই তো টিভির খবরে পত্রিকার পাতায় দেখি টিকেটের জন্য তীর্থের কাকের মতো গরমের দুর্ভোগ সহ্য করে দীর্ঘ কাফেলায় দীর্ঘক্ষণ দন্ডায়মান থাকতে হাজারো টিকেট প্রত্যাশীকে। সদরঘাট সায়েদাবাদ চট্টগ্রামের বড়তলী রেলস্টেশনে এত লোকের ভিড় কেন? এত মানুষ কত কাজ ফেলে কেন কমলাপুরে জড়ো হয়েছে কেন? ঠেলাঠেলি হাতাহাতি উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় রীতিমতো যাত্রীর যুদ্ধ বেধে যাওয়া যেন হই-হট্টগোল- কারণ একটাই কার আগে কে টিকেট নেবে? এই যে ভালবাসা এই যে আপনজনদের দেখতে যাওয়া এত পথকষ্ট এই যে পথভ্রমণ তাও তো শঙ্কামুক্ত নয় বিপত্তিহীন নয় কোথায় স্থলপথে বাস যানজটে আটকা পড়ে? কোথায় বাসদুর্ঘটনা ঘটে? রাত-বিরাতে কোথায় ছিনতাইকারী সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়? কোথায় কোন মাঝ নদীতে লঞ্চ ডুবে যায়? সলিল সমাধি ঘটে। এতসব দুর্ভাবনায় সাধারণ মানুষ যাত্রীরা একেবারে হয়রান হয়ে পড়েন হতাশ হয়ে যান আসলে এই সংসারে সমস্যার কোন শেষ নেই তাই বলে কি ঈদে বাড়ি যাবে না যাত্রীরা? যাবেই যেতে যে হবেই সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় বাসমালিক সমিতির কর্তাব্যক্তিরা দেশদরদী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি একটু সহানুভূতি নিয়ে ঈদভ্রমণে আমজনতার নানাবিধ সুবিধা-অসুবিধার দিকে দৃষ্টি দেন তাহলেই ঈদযাত্রীরা অনেক দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবেন বলে আমি মনে করি। যাত্রীভাইবোনদের বলব আসুন আমার আপনার সহযাত্রীর সুবিধা-অসুবিধাগুলোর দিকে একটু নজর দেই একটু মহানুভবতা অনুভব করি পাশাপাশি প্রিয় জনকণ্ঠের মাধ্যমে রাষ্ট্রের জনসেবকদের প্রতি আমার আকুল আবেদন এই ঈদে ঈদযাত্রীদের যাত্রীসেবার দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন কারণ এটাই যে মানবাত্মার অনন্তমহিমা যতক্ষণ দেহে জীবন আছে ততক্ষণ জনসেবা করে যাও। চন্দ্রনাথ ডিগ্রী কলেজ, নেত্রকোনা থেকে
×