ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৯:০২, ৩০ মে ২০১৯

 ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনা

রিফাত মাহদী ॥ দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর প্রতীক্ষিত একটি দিন ঈদ। ওইদিনটিতে মুসলমানদের মধ্যে তৈরি হয় এক আনন্দঘন পরিবেশ। ঈদের আনন্দ আপনজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে ইট-পাথরের শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে নগরবাসী। কিন্তু এই আনন্দের দিনটা কোন কোন মানুষের জীবনে বয়ে নিয়ে আসে শোকের ছায়া। প্রতিবছর ঈদে বাড়ি ফিরতে এবং বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যোগ দিতে গিয়ে সড়ক, নৌ ও রেলপথে প্রাণ হারায় শত শত মানুষ। ২০১৭ সালে ঈদ-উল-ফিতরের ঈদযাত্রায় এবং ফিরতিতে সড়ক, নৌ এবং রেলপথে নিহত হয় ৩০১ জন। ২০১৮ সালে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০৫ জনে। এর মধ্যে সড়ক পথে নিহত ৩৩৯ জন। নৌপথে ২৫ জন এবং রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩৫ জন ট্রেনের ধাক্কায় ৪ জন ও ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ২ জনসহ মোট ৪১ জন নিহত হয়েছে। এই ধরনের ঘটনাকে হত্যাযোগ্যও বলা চলে। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ সম্পৃক্ত। ঈদে যাত্রীর চাপ বাড়ে। অতিরিক্ত বাসের প্রয়োজন হওয়ায় বাসমালিকরা ফিটনেসবিহীন বাস রাস্তায় নামিয়ে দেয়। অপ্রশিক্ষিত ড্রাইভাররা এই ধরনের বাসগুলোতে ড্রাইভিং করে যারা অন্য সময় হেলপার হিসেবেই কাজ করে। ফলে দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। বেশি ট্রিপ মারার জন্য চালকরা পাল্লা দিয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। একাধারে গাড়ি চালানোর কারণে চালকরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু বিকল্প চালক না থাকায় ক্লান্তি নিয়েই আবার গাড়ি চালাতে হয়। যা দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রাস্তার খানাখন্দও একটি অন্যতম সমস্যা। অনেক সময় খাদে পড়ে গাড়ি উল্টে যায়। অন্যদিকে বাড়তি ভাড়ার নামে টিকেট কাউন্টারগুলোতে চলে নীরব চাঁদাবাজি। যার ব্যয় বহন করতে না পেরে অনেক নিম্ন আয়ের লোকেরা ঝুঁকি নিয়ে উঠে পণ্যবাহী পরিবহন কিংবা ট্রাকে। এতেও দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলও দুর্ঘটনার জন্ম দেয়। আমাদের দেশের আরেকটি বড় সমস্যা হলো সড়কের পাশে ফুটপাথ নেই। এতে পথচারীরাও দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সুষ্ঠু মনিটরিং না থাকায় এই ধরনের সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করে। যার ফলে প্রতিবছর ঈদযাত্রায় সড়কে মৃত্যুর হার বেড়েই চলছে। কোনভাবেই এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। গত বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূর পাল্লার বাসে বিকল্প চালক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও অন্য নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, পরিবহনের চালক ও হেলপারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, রাস্তার মাঝে চালকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা, সিগন্যাল দিয়ে পারাপার করা এবং সিটবেল্ট পরানো নিশ্চিত করা। উল্লেখিত সমস্যাগুলোর প্রতি সরকারের নজর দেয়া উচিত। পাশাপাশি সরকার থেকে যে নির্দেশনাগুলো দেয়া হয়েছে বাস মালিক এবং চালকদের সেগুলো মেনে চলতে হবে। সরকার এবং বাস মালিক ও চালকদের সম্মিলিত প্রয়াসেই দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×