ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের কয়েক লাখ আওতায় এসেছে

ফেসবুক ৩শ’ কোটি ভুয়া এ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে

প্রকাশিত: ১১:১০, ২৯ মে ২০১৯

ফেসবুক ৩শ’ কোটি ভুয়া এ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে

ফিরোজ মান্না ॥ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বিশ্ব জুড়ে দুই দফায় ৩শ’ কোটির বেশি ভুয়া এ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে। দ্বিতীয় দফায়ও বাংলাদেশের কয়েক লাখ ভুয়া এ্যাকাউন্ট বন্ধের আওতায় এসেছে। এ মাসে প্রকাশিত ফেসবুকের প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। তারা বলেছে, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এই এ্যাকাউন্টগুলো সরিয়ে দেয়া হয়। এই হিসেবে প্রথম দফার তুলনায় দ্বিগুণের বেশি বলে উল্লেখ করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে প্রতি মাসে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৪০ কোটি। তবে এই সংখ্যার মধ্যেও প্রায় ৫ শতাংশই ভুয়া এ্যাকাউন্ট রয়েছে। এই এ্যাকাউন্টও সরিয়ে দেয়া হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এবারের প্রতিবেদনে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছে, নিপীড়নমূলক ও ভুয়া এ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ভুয়া এ্যাকাউন্ট খোলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা বন্ধ করা হচ্ছে। তবে এর মধ্যেও অনেক ভুয়া এ্যাকাউন্ট পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রায় ১২ কোটি ভুয়া এ্যাকাউন্ট এখনও থাকতে পারে। প্রতি মাসে সচল ২৪০ কোটি এ্যাকাউন্টের ৫ শতাংশ হতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, প্রথম দফায় বাংলাদেশের ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক কোটি ৮০ লাখ। কিন্তু ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে শুধু রাজধানী ঢাকায় সামাজিক এই যোগাযোগ মাধ্যমে আইডি’র সংখ্যা আড়াই কোটির ওপরে। অর্থাৎ বসতির থেকে ৭০ লাখ আইডি বেশি! এই হিসেবে কমপক্ষে ৭০ লাখ ভুয়া ও একাধিক আইডি থাকার কথা বলছেন আইটি বিশেষজ্ঞরা। যার সূত্র ধরেই ভূয়া এ্যাকাউন্ট বন্ধে শুদ্ধি অভিযান চলমান রেখেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। তবে বাংলাদেশে ভুয়া লাইক ও কমেন্ট সবচেয়ে বেশি আসে ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি আরব থেকে। ভুয়া ফেসবুক এ্যাকাউন্ট বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন দেশের আইটি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এতে সাইবার অপরাধ কমবে। কমবে সামাজিক অস্থিরতাও। পাশাপাশ উগ্র মৌলবাদীদের অপপ্রচার ও নারীদের উত্ত্যক্ত অনেকাংশে বন্ধ হবে। সেইসঙ্গে যারা ফেসবুক ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেবে তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। তাদের পরামর্শ, যদি সম্ভব হয় সকল আইডির বিপরীতে মোবাইল নম্বর বা জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর নিশ্চিত করা হোক। বিটিআরসি জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে অনেক ভুয়া আইডি (এ্যাকাউন্ট) বা পেজ বন্ধ হলেও এখনও লাখ লাখ ভুয়া আইডি রয়ে গেছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভুয়া এ্যাকাউন্ট ঠেকানোর কার্যকর উপায় হিসেবে উন্নত ব্যবস্থা হিসেবে ‘স্প্যাম অপারেশন’ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ অন্য কয়েকটি দেশ থেকে আসা ভুয়া লাইক ও মন্তব্য ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। ফেসবুক দাবি করেছে, তারা অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত বিশাল একটি গ্রুপকে শনাক্ত করতে পেরেছে। তাদের মাধ্যমে প্রচারিত ভুয়া লাইক সরিয়ে ফেলেছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের এই অভিযানে ভুয়া এ্যাকাউন্ট সরানোয় যেসব পেজে ১০ হাজারের বেশি লাইক আছে, তাতে ৩ শতাংশ লাইক কমে যাবে। সূত্র জানিয়েছে, ফেসবুকের অভিযানের পর ভুয়া আইডির সংখ্যা কমে যাওয়ায় ফেসবুক পেজে লাইকের সংখ্যাও কমে গেছে। ফেসবুক শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে তারা ভুয়া এ্যাকাউন্ট পরিচালনার একটি আন্তর্জাতিক চক্রের কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করেছে, যারা বাংলাদেশকেও তাদের প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করত। লাইক কেনা-বেচা বা অটোলাইক বাণিজ্য করে এমন বহু মানুষ বাংলাদেশে রয়েছে, যাদের বিজ্ঞাপনী কমেন্ট বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টেই পাওয়া যায়। ফেসবুকে অনেক ই-কমার্স পাতা কিংবা সেলেব্রিটিরা তাদের লাইকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এদের সাহায্য নেয় বলে খবর মিলেছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, ফেসবুকের এ উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। দেরিতে হলেও ফেসবুক স্বীকার করেছে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় মানুষের পরিচিতি নিশ্চিত না করে কোনো কাজ করতে দেয়া উচিত হবে না। কারণ এই জগতকে মৌলবাদী শক্তি উগ্র জঙ্গী গোষ্ঠী নানাভাবে ব্যবহার করে সমাজে নানা বিশৃঙ্খা তৈরি করছে। সমাজে নানা ঘটনা ঘটেছে ফেসবুককে ব্যবহার করে। তিন কারণে ফেসবুক আইডি বন্ধ বা নিষ্ক্রিয় হতে পারে। এগুলো হলো ফেসবুকের ওয়েবসাইট রক্ষণাবেক্ষণ, ভুলভাবে এ্যাকাউন্ট চালানো ও এ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা। এই তিনটি বিষয় ঠিক থাকলে তাহলে কোন আইডি বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বন্ধ হয়ে যাওয়া আইডি উদ্ধারের জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের আগে আইডি বন্ধের কারণ জানতে হবে। আইডি উদ্ধারের বিষয়টি সঠিকভাবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে জানালে ওই আইডি উদ্ধার হবে। সূত্র জানিয়েছে, ফেসবুক সম্প্রতি একটি শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ফেক বা ভুয়া এ্যাকাউন্ট একে একে বাতিল করছে। এক হিসাবে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফেসবুক ব্যবহারকারীর শহর। ফেক আইডির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অন্যতম অবস্থানে রয়েছে।
×