ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদ বাজার

ফুটপাথে রকমারি পণ্যের পসরা, ক্রেতার ভিড়

প্রকাশিত: ১১:০৬, ২৯ মে ২০১৯

ফুটপাথে রকমারি পণ্যের পসরা, ক্রেতার ভিড়

রহিম শেখ ॥ আলোকসজ্জা নেই। নেই বাহারি পুরস্কার কিংবা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। তারপরও ক্রেতার অভাব নেই ফুটপাথে। দিনের প্রখর রোদেও থেমে নেই বেচাকেনা। রকমারি পোশাক, জুতা, টুপি, আতর থেকে শুরু করে এমন কিছু নেই যার পসরা সাজিয়ে বসেনি ফুটপাথের দোকানিরা। বাদ পড়েনি ঘর সাজানোর পণ্য, বাচ্চাদের খেলনা, পারফিউম, রূপসজ্জার সামগ্রী। পণ্য বিক্রিতে হকারদের হাঁকডাকে ক্রেতার ভিড় এখন চোখে পড়ার মতো। শুধু সড়কের দুপাশই নয়, রাজধানীর ফুটওভার ব্রিজের ওপরেও বসেছে অস্থায়ী দোকানপাট। এসব হাটের সবচেয়ে বড় ক্রেতা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষজন। রাজধানীর মতিঝিল, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, মিরপুর-১০, গুলিস্তান, গোলাপ শাহ মাজার ও নগর ভবন এলাকার ফুটপাথ ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের কেনাকাটার সবই পাওয়া যাচ্ছে এসব ফুটপাথে। হকারদের কেউ কেউ ‘দেইখ্যা লন পাঁচশ’, ‘বাইছ্যা লন পাঁচশ’, ‘এক দাম পাঁচশ’, ‘যেইটা নিবেন পাঁচশ’ টাকা এমন সুর তুলে খরিদ্দার ডাকছেন। হাল ফ্যাশনের থ্রিপিস, শার্ট-প্যান্ট থেকে আধুনিক ডিজাইনের জুতো, বিদেশী ব্র্যান্ডের প্রসাধনী ও সুগন্ধী সামগ্রী সবই পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাথ মার্কেটে। হাতের নাগালে সবকিছু থাকায় বিকিকিনিও হচ্ছে দেদার। দামও নাগালের মধ্যে। এই ফুটপাথে এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ছোটদের পোশাক। বড়দের রেডিমেড শার্ট পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪৫০ থেকে ৬৫০ টাকায়। রাজধানীর দক্ষিণ কমলাপুর এলাকায় বাস করেন শফিকুল ইসলাম। কাজ করেন মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে। মঙ্গলবার দুপুরে সন্তানদের নিয়ে ঈদের পোশাক কিনেছেন মতিঝিলের ফুটপাথ থেকে। তিনি জানান, মা-বাবার জন্য আর একদিন মার্কেটে আসবেন। যাদের আয় একটু কম তারাই মূলত আসছেন নগরীর ফুটপাথে কেনাকাটা করতে। রাজধানীর বিলাসবহুল শপিংমলগুলো যখন উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের ভিড়ে সরগরম, তখন ফুটপাথের দোকানগুলো নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের কেনাকাটায় জমজমাট হয়ে উঠছে। বিক্রেতারা বলছেন, রোজার শুরতে তেমন বেচাকেনা না হলেও এখন ভাল হচ্ছে ব্যবসা। তবে প্রখর রোদ ও মাঝে মাঝে বৃষ্টিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসা। রাজধানী মতিঝিলের ফুটপাথে মেয়েদের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন সেলিম হোসেন। তিনি জানান, তার দোকানে অনেক ধরনের দেশী-বিদেশী থ্রিপিস রয়েছে। এসব থ্রিপিসের দাম ৯০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া রয়েছে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের টপস ও ফ্রক। এ বছর ঘের ওয়ালা লম্বা পোশাকের চাহিদা বেশি। পোশাক ছাড়াও ফুটপাথের এসব দোকানে নিত্য ব্যবহার্য প্রায় সব কিছুই পাওয়া যায়। ছেলেদের পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট, বেল্ট, লুঙ্গি, টুপি, সুগন্ধী থেকে শুরু করে মেয়েদের শাড়ি, ঘড়ি, থ্রি-পিস, টু-পিস, সিঙ্গেল কামিজ, রেডিমেড কামিজ, টপস, টাইটস, গজ কাপড়, বিভিন্ন ধরনের অর্নামেন্টস, কসমেটিকস, বাচ্চাদের পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, ফ্রক, স্কার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি, বড়-ছোট সকলের জুতা, স্যান্ডেল, চশমাসহ সংসারের বাসন-কোসনও থাকে এখানে। ফলে অনেকে ঈদ উপলক্ষে সংসারের জন্য নতুন গ্লাস সেট, প্লেট, টিফিন বক্স, শো-পিসও কিনে নেন এসব দোকান থেকে। নিউ মার্কেটের সামনে ফুটপাথের একটি দোকানে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করছিলেন রাশেদ আহমেদ। তিনি জানালেন, ‘বড় শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটা করার সামর্থ্য আমাদের নেই। তাই এখান থেকেই ঈদের কেনাকাটা করি। এছাড়া এখানে কম দামে পছন্দের জিনিসও পাওয়া যায়। আর এসব জিনিসের মানও ভাল। আমি দেখেছি অনেক সময় একই জিনিস নামীদামী দোকানে কয়েকগুণ মূল্য দিয়ে বিক্রি করে। তবে ফুটপাথের পণ্যের দাম নিয়ে ভিন্নমতও আছে কারো কারো।’ পেশায় গাড়ি চালক আলী হোসেন বলেন, ‘কিছুদিন আগেও যেসব টি-শার্ট ২শ’ টাকায় কিনেছি, এখন তার দাম রাখা হচ্ছে সাড়ে ৫শ’ টাকা।’ চাঁদনি চক মার্কেটের সামনে গজ কাপড় কিনতে আসা একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হনুফা আক্তার জানান, ‘ভিতরের দোকানগুলোতে দাম বেশি। তাই বাইরের দোকাগুলো থেকে কেনাকাটা করছি। তবে এখানেও দাম বেড়ে গেছে।’ ফুটপাথের বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের ঈদ উপলক্ষে গার্মেন্টসে তৈরি নানা রঙের কাপড়ও বিক্রয় হচ্ছে ভাল। প্রতিটি প্যান্ট পিসের দাম পড়ছে ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। তবে খুব ভাল মানের কাপড় নিতে চাইলে দাম কিছুটা বেশি পড়বে। সেক্ষেত্রে ৫৫০ থেকে ৯৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে একেকটি প্যান্ট পিস। বিক্রেতারা জানান, মার্কেট ভেদে ছেলেদের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকায়, জিন্স প্যান্ট ৫৫০ থেকে সাড়ে ৯০০ টাকায়, টি-শার্ট ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, মেয়েদের থ্রি-পিস ৬৫০ থেকে হাজার/১২০০ টাকা, শাড়ি ৬৫০ থেকে ২৫০০ হাজার টাকা, বাচ্চাদের থ্রি-কোয়ার্টার জিন্স প্যান্ট ৪৫০ টাকা, গেঞ্জির সেট ২৫০ থেকে ৬০০ টাকা, ফ্রক ও টপস ৩৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, ছেলে ও মেয়ে শিশুদের জন্য হাতাকাটা গেঞ্জি ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। জামা কাপড়ের সঙ্গে ফুটপাথে পাওয়া যাচ্ছে ছোট-বড় সবার জন্য জুতাও। ছেলেদের প্রতিজোড়া জুতার দাম পড়বে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। দামী ব্র্যান্ডের আদলে ডিজাইন করা সু পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর ফুটপাথগুলোতে। দেখতে সুন্দর জুতাগুলো তৈরি করা হয় রেক্সিন ও চামড়ার মিশ্রণে। পাওয়া যাচ্ছে মেয়েদের জুতাও। মাত্র ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যেই মিলবে জুতা-সিøপার। এগুলোও তৈরি করা হয় রেক্সিন ও চামড়ার মিশ্রণে।
×