ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজাকারদের তালিকা

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ২৯ মে ২০১৯

রাজাকারদের তালিকা

৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমহানির ইতিহাস এবং বহু বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের এক রক্তক্ষয়ী, জ্বালাময়ী ঘটনা পরম্পরা, যা আজও বাংলা ও বাঙালীকে শিহরিত করে। মুক্তির চেতনায় আপামর জনগোষ্ঠী নতুন উদ্যমে জেগে ওঠে। অত্যাচারী নিপীড়ন চক্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভে, বেদনায় আন্দোলিত হয়। নিষ্ঠুর পাক হানাদার বাহিনী একাই এমন মরণ কামড়ে শামিল হয়নি, সঙ্গে ছিল এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর আর আলশামসের মতো এক বিধ্বংসী গোষ্ঠীর নারকীয় কর্মকা-ও। মাত্র সাড়ে ৩ বছরের বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে এমন কুচক্রী, ষড়যন্ত্রকারী স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আসার আগেই আরও এক নৃশংস হত্যাকা- সারা বাংলাকে হতবাক করে দেয়। জাতির জনকের অনাকাক্সিক্ষত হত্যা নকশায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি নতুন করে নিজেদের আধিপত্য সংহত করলে পরবর্তী একুশ বছর দুঃসহ অভিযাত্রায় বাংলাদেশ এক চরম অন্ধকার জগতে ঢুকে পড়তে বাধ্য হয়। এমন কঠিন আর দুর্ভেদ্য পথপরিক্রমায় কিভাবে যে উজ্জীবনের শক্তি উদ্ভাসিত হয়, সেও যেন বঙ্গবন্ধু তনয়ার অকৃত্রিম দুঃসাহস আর অনমনীয় দেশাত্মবোধের অনির্বাণ দীপ্তি। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের রায়ে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে প্রথমেই নজর দিতে হয় পিতৃহত্যার বিচারিক কার্যক্রমে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী আলবদর, আলশামসের ঔদ্ধত্য আর চরম খামখেয়ালিপনাকে যথার্থভাবে প্রতিকার করতে শেখ হাসিনাকে ২০০৮ সালে আবারও জনগণের রায়ে অভিষিক্ত হয়ে দেশনায়কের আসনে বসতে হয়। বীরদর্পে এগিয়ে যাওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা পিতার আদর্শকেই শুধু লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনায় আনেননি, তার চেয়ে বেশি ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যারা গভীর ষড়যন্ত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে মানুষ হত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগের মতো ঘোরতর অন্যায়ের অংশীদার হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধেও আইনী প্রক্রিয়াকে জোরদার করেন। বিচারিক ব্যবস্থায় তাদের পাপের দ-ও কার্যকর করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় নতুন করে আবারও স্বাধীনতাবিরোধীর তালিকা সংরক্ষণের পদক্ষেপ নিচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। রাজাকার, আলবদর ও আলশামসের তালিকা সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর ‘ডিও লেটার’ দেয়া হয়। বৈঠকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় যে, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তিকে বিচারের আওতায় আনতে আইনগত কোন বাধ্যবাধকতা নেই। জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে স্থানীয় উর্ধতন সরকারী কর্মকর্তারা রাজাকারদের তালিকা সংরক্ষণের ব্যাপারে সর্বক্ষণিক নজরদারিতে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানী সরকারের বেতন-ভাতা ভোগ করে দেশের জনগণের ওপর নির্বিচারে হত্যা, জুলুম আর নির্যাতন চালায়, তাদের চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করা দেশের স্বার্থেই অত্যন্ত জরুরী। এ ছাড়া ১৯৭০ সালে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর আসন অবৈধ ও দেশদ্রোহী হিসেবে আমলে নিয়ে যারা ওই শূন্যপদে বসেছিল তাদের নামও স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে গণ্য হবে। সেই সব শূন্য আসনের সদস্যদের তালিকা সংরক্ষণেরও সুপারিশ করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। তেমন সব নির্দেশনা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এমন মহৎ কর্মপ্রকল্পে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে আরও এক নতুন মাত্রা যোগ করল। জনস্বার্থে আর দেশের কল্যাণে প্রণীত এমন কর্মপরিকল্পনা যেন তার লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে সার্বিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করবেÑ এই প্রত্যাশা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল দেশবাসীর।
×