ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে কোটিপতি আমানতকারী ৭৫ হাজার ৫৬৩ জন

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ২৯ মে ২০১৯

দেশে কোটিপতি আমানতকারী ৭৫ হাজার ৫৬৩ জন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত ১০ বছরে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৫৬৩ জনে। তাদের আমানতের পরিমাণ ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। এই সময়ে দেশে কোটিপতি ঋণগ্রহিতার সংখ্যা ৯১ হাজার ১৭৫ জন, আর তাদের নেয়া ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। এই সময়েও কোটিপতি আমানতকারীর তুলনায় কোটি টাকা ঋণ নেয়া ব্যক্তির সংখ্যা ছিল বেশি এবং আমানতের তুলনায় ঋণের পরিমাণও অনেক বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিলেন ১৯ হাজার ১৬৩ জন। এসব আমানতকারীর আমানতের পরিমাণ ছিল ৭৭ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। একই সময়ে দেশে কোটিপতি ঋণগ্রহিতার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ২০৬ জন। এসব ঋণগ্রহিতার ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ কোটিপতি আমানতকারীদের তুলনায় কোটি টাকা ঋণগ্রহিতার সংখ্যা ছিল যেমন বেশি, তেমনি আমানতের টাকার তুলনায় প্রদত্ত ঋণের পরিমাণও ছিল বেশি। এই প্রবণতা পরবর্তী সময়ে আরও বেড়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পর্যন্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৫৬৩ জনে। তাদের আমানতের পরিমাণ ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। এই সময়ে দেশে কোটিপতি ঋণগ্রহিতার সংখ্যা ৯১ হাজার ১৭৫ জন, আর তাদের নেয়া ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। এই সময়েও কোটিপতি আমানতকারীর তুলনায় কোটি টাকা ঋণ নেয়া ব্যক্তির সংখ্যা ছিল বেশি এবং আমানতের তুলনায় ঋণের পরিমাণও অনেক বেশি। দেশে ব্যাংক থেকে কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন এমন ঋণগ্রহিতার সংখ্যা বর্তমানে ৯১ হাজার ১৭৫ জন। এসব ঋণগ্রহিতাদের ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০০৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ বছরেই কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন ৬৫ হাজার ৯৩৯ জন। অর্থাৎ, এই সময়ে গড়ে প্রতিবছর কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন ৬ হাজার ৫৯৩ জন। আর তাদের নেয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬২৯ টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ঋণ বিতরণ বিষয়ক বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপী ঋণ। আর এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বড় ঋণগ্রহিতারাই বেশি ঋণখেলাপী হচ্ছেন। তাই বড় গ্রহিতাদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইও বেশি হওয়া দরকার। কিন্তু আমাদের দেশে হচ্ছে উল্টোটা। বড় ঋণগ্রহিতারা যত সহজে ঋণ পান, ছোট ছোট উদ্যোক্তারা তত সহজে ঋণ পাচ্ছেন না। ফলে ঋণগ্রহিতাদের ৭২ শতাংশই হয়ে পড়েছেন কোটিপতি ঋণগ্রহিতা। এটা হতে পারে না। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে কোটিপতি ঋণগ্র্রহিতার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ২০৬ জন। পাঁচ বছর পর ২০১৩ সালের ডিসেম্বর শেষে এমন ঋণগ্রহিতার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ হাজার ৯৫১ জনে। অর্থাৎ, ২০০৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ বছরে দেশে কোটিপতি ঋণগ্রহণকারী বেড়েছে ২৩ হাজার ৭৪৫ জন। এই সময়ে গড়ে প্রতিবছর কোটিপতি ঋণগ্রহিতা বেড়েছে ৪ হাজার ৭৪৯ জন করে। অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে কোটি টাকা ঋণগ্রহিতা বেড়ে দাঁড়ায় ৯১ হাজার ১৭৫ জনে। সেই হিসাবে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ বছরে কোটিপতি ঋণগ্রহিতা বেড়েছে ৪২ হাজার ২২৪ জন, যা আগের পাঁচ বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এই পাঁচ বছরে এসে কোটি টাকা ঋণগ্রহিতা বেড়েছে প্রতিবছর গড়ে ৮ হাজার ৪৪৪ জন করে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাবে দেখা যায়, কমপক্ষে এক কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন এমন ঋণগ্রহিতার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ২০৬ জন। তাদের নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। ওই সময় ঋণগ্রহিতাদের ৬২ দশমিক ৫৪ শতাংশ ছিলেন কোটি টাকা ঋণগ্রহিতা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোটি টাকা ঋণগ্রহিতার সংখ্যা ও ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটি টাকা ঋণগ্রহিতাদের ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। তখন মোট ঋণগ্রহিতার ৬৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। আর এই পাঁচ বছরে কোটি টাকা ঋণগ্রহিতাদের নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭ কোটি টাকা।, যা ২০০৮ সাল পর্যন্ত কোটি টাকা ঋণগ্রহিতাদের মোট ঋণের প্রায় দেড়গুণ।
×