ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে জমেছে ঈদ বাজার ॥ জনস্রোত মার্কেটমুখী

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ২৯ মে ২০১৯

চট্টগ্রামে জমেছে ঈদ বাজার ॥ জনস্রোত মার্কেটমুখী

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ঈদে একটা কিছু চাই-ই। নিজের জন্য না হলেও সন্তান ও প্রিয়জনদের জন্য কিছু না কিছু নিতেই হয়। বছরে এই একটি উৎসবের জন্য মুখিয়ে থাকে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সকল বয়সী নারী-পুরুষ। ব্যবসায়ীদেরও বাড়তি আয়ের মওকা। সেই ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমজমাট রূপ ধারণ করছে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিপণি কেন্দ্রগুলো। পরিচ্ছদের প্রতিটি মার্কেট ঘিরে এখন হাজারো মানুষের ভিড়। শুধু দিনেই নয়, ক্রেতা সমাগম এখন মধ্যরাত পর্যন্ত। ক্রেতা আকর্ষণের জন্য নান্দনিক সাজে সেজেছে শপিং মলগুলো। ২০ রমজান পার হওয়ার পর বিক্রিও দেদার। তবে বিক্রেতারা সন্তুষ্ট হলেও মূল্য নিয়ে ক্রেতাদের অসন্তুষ্টি রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর সকল মার্কেটই এখন জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। ছোট-বড় সকল বিপণি কেন্দ্রই ক্রেতা এবং কিনতে আগ্রহীদের ভিড়ে ঠাসা। নিউমার্কেট, সানমার ওশ্যান সিটি, মিমি সুপার মার্কেট, ভিআইপি টাওয়ার, আখতারুজ্জামান সেন্টার, লাকি প্লাজা, ব্যাঙ্কক-সিঙ্গাপুর মার্কেট, সেন্ট্রাল প্লাজা, টেরিবাজার, রেয়াজউদ্দিন বাজার, ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্স, তামাকুম-ি লেন, চকবাজারসহ মার্কেট এলাকাগুলো লোকে লোকারণ্য। ক’দিন আগেও যেখানে ছিল দেখাদেখি ও দর যাচাই, এখন সেখানে জমজমাট বিক্রি। ঈদ সন্নিকটে। অনেকেই যাবেন শহর ছেড়ে বেশ দূরের গ্রামের বাড়িতে। ফলে সন্তান ও প্রিয়জনের জন্য ঈদের জামা-কাপড় এবং উপহার সামগ্রী কিনে প্রস্তুত হওয়ার পালা। মাত্র ক’দিন পরেই শুরু হয়ে যাবে ঈদের ছুটি। বিশেষ করে বৃহস্পতিবারকে সামনে রেখে কেনাকাটায় উৎসবমুখর মার্কেটগুলো। মঙ্গলবার পর্যন্ত মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, এখন যারা কেনাকাটা করছেন তারা মোটামুটি মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত শ্রেণীর। মোটামুটি দামী পণ্যের বিকিকিনি বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সে কারণে অভিজাত মার্কেটগুলোতেই ভিড় বেশি। তবে ধীরে ধীরে নি¤œবিত্তের বাজারগুলোও জমে উঠেছে। দোকানিরা এখনও অনেক বেশি দাম হাঁকছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তবে বিক্রেতারাও চাইছেন ঈদের আগে যতটা সম্ভব পণ্যের মজুদ শেষ করার। কারণ ঈদে যত বেশি পণ্য অবিক্রিত থাকবে ততই পুঁজি আটকে থাকা। চট্টগ্রাম নিউমার্কেটে ঘুরে দেখা যায় নারী-শিশুসহ সকল বয়সী মানুষের সমাগম। দোকানিরা বলছেন, মূল্য বাড়েনি। আগের মতোই আছে। বস্ত্র, জুতা, স্যান্ডেল-সবই ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। অপরদিকে, ক্রেতারা সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। চট্টগ্রাম মহানগরীর টেরিবাজার পাইকারি ও খুচরা বিক্রির জন্য বিখ্যাত। এক সময় এই বিপণি কেন্দ্রটির খ্যাতি ছিল প্রধানত থান কাপড়ের জন্য। কিন্তু এখন রেডিমেড পোশাক, শাড়ি, জুতা, স্যান্ডেল, পাঞ্জাবিসহ সকল ধরনের বস্ত্রের সমাহার টেরিবাজারে। সেখানে রয়েছে অনেকগুলো বড় দোকান, যেখানে ঢুকে প্রয়োজনীয় সকল কেনাকাটা সেরে ফেলা যায়। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সুবিশাল মেগামার্ট, মনে রেখ, মোনালিসা, মাসুম ক্লথ, সানাসহ বড় বড় স্টোরগুলো। সব ধরনের, সব মানের পোশাক পরিচ্ছদ পাওয়া যাচ্ছে একই ছাদের নিচে। বেশ কয়েকটি বিশাল দোকানের প্রদর্শনী অনেকটা কলকাতার স্টোরগুলোর মতোই। নারীদের জন্য মেঝেতেই বসবার ব্যবস্থা। সুপরিসর জায়গায় অসংখ্য শাড়ি থেকে ক্রেতারা বেছে নিচ্ছেন পছন্দের শাড়িটি। একসঙ্গে অনেকগুলো মার্কেট থাকায় ক্রেতাদের অন্যতম পছন্দের জায়গা এখন টেরিবাজার। বিক্রিও বেশ। এদিকে, নিউমার্কেট ও রেয়াজউদ্দিন বাজার এলাকার ফুটপাথ, স্টেশন রোড ও জহুর হকার্স মার্কেট এখন এত বেশি মানুষের পদভারে মুখর যে, সেখানে যানবাহন চলাচলও স্থবির হয়ে পড়েছে। যশোর স্টাফ রিপোর্টার যশোর অফিস জানায়, বিদেশী পোশাকের দাপটের কাছে দেশী পোশাকও এখন কমে যায় না। যশোরের দেশী ফ্যাশন হাউসগুলো সব সময়ই বিদেশী পোশাকের সঙ্গে সমান টক্কর চালায়। এমনকি পোশাকের বুনন, নক্সায়, কাট ছাঁটে এমন বৈচিত্র্য আনেন এখানকার দেশীয় পোশাক নির্মাতারা; যা দিয়ে তারা প্রায়ই বিদেশী পোশাকের ট্রেন্ডকে টেক্কা দিয়ে দেয়। ফলে বরাবরই যশোরে দেশীয় ধারার পোশাকের প্রতি রুচিশীল ও মার্জিত বেশভূষায় অভ্যস্ত নারী-পুরুষের আলাদা রকমের ঝোঁক লক্ষ্য করা যায়। এবারের ঈদেও সেই ঝোঁক বিরাজ করছে। যশোর শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেশী ফ্যাশন হাউসে জমে ওঠা ভিড় দেখে অন্তত সেটিই মনে হয়। যশোর শহরের মুজিব সড়ক রোডে সবচে’ বেশি দেশীয় ফ্যাশনের পোশাকের দোকান। এর পাশাপাশি চৌরাস্তা, গাড়িখানা রোডসহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এসব দেশী ফ্যাশনের পোশাকের দোকান। ঈদ বাজারের হালচাল জানতে সম্প্রতি যশোরের এসব দেশী ফ্যাশন হাউসে ঘুরে দেখা হয়। এ সময় নজরে পড়ে নানান রঙের, ডিজাইনের, কাটিংয়ের বৈচিত্র্যপূর্ণ পোশাকের সমাহার। জমকালোর পাশাপাশি সিম্পল লুকের নক্সাদার কাপড় নজর কাড়ে। ফ্যাশন হাউসগুলোয় কাপড়ে সুঁইসুতোর নক্সা তোলা পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শাড়ি, সালোয়ার কামিজের অনবদ্য সব সংগ্রহ রয়েছে। ভারি কাজের পোশাকের যেমন সংগ্রহ রয়েছে, তেমনি রয়েছে হালকা কাজের। দেশীয় পোশাকের এই ফাশন হাউসে গিয়ে দেখা যায়, কারচুপি, হ্যান্ড স্টিচ, এ্যামব্রয়ডারির ভারি ও হালকা কাজের পাঞ্জাবি, ফতুয়া, থ্রি-পিস সংগ্রহ। এর পাশাপাশি সুঁই-সুতোর কাজের শাড়ি, ফ্রক প্রিন্টের শাড়ি, কুরুজের শাড়ি, যশোর স্টিচ, শ্যাডো, নক্সীকাঁথা স্টিচ, এ্যাপলিক স্টিচের শাড়ির সংগ্রহ রয়েছে। এছাড়া দেশীয় ধারার পোশাকগুলোতে সুঁইসুতোর ফোঁড় তোলা নান্দনিক সব কারুকাজ করা হয়েছে। রঙিন সুতোয় নক্সী, গিটফোঁড়, ডালফোঁড়, এ্যাপ্লিক ভরাট, গুজরাটি সেলাই তুলে বাহারি করে তোলা হয়েছে পোশাক। পোশাকে যারা পুরোদুস্তর বাঙালীপনা বজায় রাখতে চান তারাই এসব হাউসে উঁকি দিচ্ছেন। শহরের চৌরাস্তায় ফ্যাশন হাউস ফোঁড়ের স্বত্বাধিকারী মামুনুর রশিদ জানান, রোদ বৃষ্টি গরমের ভেতর এবারকার ঈদ।
×