ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টেন্ডার ছাড়াই দেড় কোটি টাকার কাজ ভাগ বাটোয়ারা

প্রকাশিত: ০৮:২৯, ২৯ মে ২০১৯

টেন্ডার ছাড়াই দেড় কোটি টাকার কাজ ভাগ বাটোয়ারা

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় নিয়মবহির্ভূতভাবে পিপিআর ও টেন্ডার ছাড়াই এলজিইডির প্রায় দেড় কোটি টাকার কার্যাদেশ পছন্দের ঠিকাদারদের প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। চার ব্যক্তির ১০টি প্রতিষ্ঠানের নামে ৩০টি কার্যাদেশ দিয়ে লাখ লাখ টাকার সুবিধা নেয়ায় অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। আর এ ঘটনা প্রচারে শহরব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী শফিউল আলম অভিযোগ অস্বীকার করে মঙ্গলবার বলেন, পিপিআর ও টেন্ডার ছাড়াও নিয়ম মেনেই কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে এই ঘটনা তদন্ত ও কার্যাদেশ বাতিলের দাবিতে এক ঠিকাদার এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ও দুর্নীতি দমন বিভাগে অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে এলজিইডির সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, কোটেশনের মাধ্যমে কিছু ঠিকাদারকে এই কাজ দেয়া হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য ৩ থেকে ৫ লাখ টাকার মধ্যে বরাদ্দ আসে। সবমিলিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকার কাছাকাছি। এসব বরাদ্দ অনুযায়ী পিপিআর আরএফটি অনুযায়ী একক ১০ লাখ টাকা এবং এর উর্ধে শর্ত মোতাবেক বার্ষিক ৬০ লাখ টাকার বেশি হলে টেন্ডারে আসার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ পিপিআর শর্তের বাইরে যাওয়ায় টেন্ডারে না এসে ঘরে বসেই টেন্ডারের কাগজপত্র সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। কোটেশন ওপেনিং শীট অনুযায়ী গত ৩০ এপ্রিল নোটিস নাম্বার-০১/২০১৮-১৯ প্যাকেজ নাম্বার ১৭৬৭ থেকে ৩০টি দরপত্র পূরণ করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। প্রতিটি টেন্ডার ওপেনিং শীটে এই ৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঘুরে ফিরে ২০০/৪০০/৬০০ টাকা কম বেশি দেখিয়ে দর দাখিল করেছেন। অথচ এই টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিটি কোন পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে তা কর্তৃপক্ষ বলতে পারছেন না। জানা গেছে, টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, শহরের কাটিয়া এলাকার জারা এন্টারপ্রাইজ-৪টি কার্যাদেশ, কালীগঞ্জের কাকা এন্টারপ্রাইজ-৪টি কার্যাদেশ, কালীগঞ্জের আখিরুল এন্টারপ্রাইজ-৫টি কার্যাদেশ, কাটিয়ার খন্দকার এন্টারপ্রাইজ-২টি কার্যাদেশ, কালীগঞ্জের শাহেদ এন্টারপ্রাইজ-১টি কার্যাদেশ, মিল বাজারের মোল্যা এন্টারপ্রাইজ-৩টি কার্যাদেশ, বলাডাঙ্গার সিরাজুল ইসলামের ৩টি কার্যাদেশ, কাটিয়ার মুক্তি এন্টারপ্রাইজের ১টি কার্যাদেশ, বলাডাঙ্গার রোকন এন্টারপ্রাইজের ৪টি কার্যাদেশ ও একই এলাকার নেহা এন্টারপ্রাইজের ৩টি কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে সিরাজুল ইসলাম, রোকন ও নেহা একই ব্যক্তির ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, জারা ও মোল্যা এন্টারপ্রাইজ একই ব্যক্তির ২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, কাকা ও আখিরুল একই ব্যক্তির ২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং খন্দকার, শাহেদ ও মুক্তি একই ব্যক্তির ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়। এদিকে শহরের কাছারীপাড়ার মেসার্স অরিণ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এম এম মজনু জানান, এই টেন্ডারটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দরপত্র বিক্রির সুযোগ হলে সরকার কয়েক লাখ টাকার রাজস্ব পেত। একইসঙ্গে সেই সুযোগ সরকারকে না দিয়ে সমদরে ইচ্ছে মাফিক চুক্তিভিত্তিক অন্তত ২০ লাখ টাকা নিয়ে উপরোক্ত ৪ ঠিকাদারের ১০ প্রতিষ্ঠানের নামে ৩০টি কার্যাদেশ দিয়ে সদর উপজেলা প্রকৌশলী নিজেই এসব টাকা পকেটস্থ করেছেন। সরকারের এক কর্মকর্তা সরকার নির্দেশিত বিধি বিধান লঙ্ঘন করে সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার বিষয়টি তদন্তের দাবি জানান তিনি। এম এম মজনু আরও বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য তিনি ইতোমধ্যে প্রধান প্রকৌশলী এলজিইডি, চেয়ারম্যান দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দাখিল করেছেন।
×