ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইংলিশদের উত্থানের গল্প শোনালেন মরগান

প্রকাশিত: ১০:০২, ২৮ মে ২০১৯

 ইংলিশদের উত্থানের গল্প শোনালেন মরগান

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টারে কোয়ালিফাই করতে পারেনি ইংল্যান্ড। ছয় ম্যাচের চারটিতে হেরে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নেয় ইংলিশরা। শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটা ছিল ‘ডু অর ডাই’। সেখানেও হেরে যায় ইয়ন মরগানের দল। ইংল্যান্ডের সম্ভাবনা যে কম সেটি ওই বিশ্বকাপের আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। একের পর এক ব্যর্থতায় শেষ মুহূর্তে এ্যালিস্টার কুককে সরিয়ে মরগানকে অধিনায়ক করা হয়েছিল। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে ইংল্যান্ড এখন বদলে যাওয়া এক নাম। ঘরের মাটিতে ১২তম বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট। অধিনায়ক মরগান বলেছেন, বাংলাদেশের কাছে হেরে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায়ের দিনই তাকে ফোন করেছিলেন সে সময়ের বোর্ড পরিচালক এ্যান্ড্রু স্ট্রস। বলেছিলেন, আজ থেকেই নতুন করে শুরু করতে হবে। এরপর থেকেই বদলে যাওয়ার শুরু। এবার তারা মাঠে নামছে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের ‘এক নাম্বার’ দল হিসেবে। মরগান বলেন, গত বিশ্বকাপটা আমাদের জন্য দুঃসহ এক স্মৃতির। যেটা শুরু হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। ওয়েলিংটনে সেদিন আমরা মাত্র ১২৩ রানে অলআউট হয়েছিলাম। পরে নিউজিল্যান্ড সেটি ১২.২ ওভারেই টপকে যায়। ওই ধাক্কা থেকে বের হয়ে আসাটা যে সহজ ছিল না। কারণ পরে আমরা শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যাই। এমনকি শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হারটা ছিল আরও কষ্টের। ওদের ২৭৫ রান চেজ করতে গিয়ে ২৬০ রানে অলআউট হয়ে আমরা হেরেছিলাম ১৫ রানে। স্ট্রস ফোন করে বলেছিলেন, আফসোস করো না। এখন থেকেই প্রস্তুত হও। দেখিয়ে দাও তোমরাও পার। আমরা নতুন করে পরিকল্পনা সাজাই। যার মূল কথা ছিল ভয়-ডরহীন ক্রিকেট। এরপর পাওয়ার ক্রিকেট খেলতে গিয়ে আমরা বেশ কিছু ম্যাচ হেরেছি, কিন্তু তার মধ্যে ভবিষ্যতে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা ছিল। ২০১৫ বিশ্বকাপ পূর্ববর্তী সময়ে আমাদের দলীয় গড় রান যেখানে ২৫০-এর নিচে ছিল সেটি এখন ৩০০-৩৩০। এটা দলীয় সমন্বয়ের ফসল। মরগান আরও যোগ করেন, এক নম্বরে উঠে আসতে সকলের ভূমিকা প্রশংসাযোগ্য। মাঠের বাইরে ম্যানেজমেন্ট পরিকল্পনা সাজিয়েছে, আমরা সেটা বাস্তবায়নের কাজ করে গেছি। এ সময়ে বল হাতে জেমস এ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রড, জেমস ট্রেডওয়েলদের অবদানের কথাও আলাদা করে বলতে হবে। যদিও সবার ব্যাটিংটাই বেশি করে চোখে পড়ছে। কারণ আমরা অনায়াসে ৩০০-৩৫০ রান করছি। অধিনায়ক হিসেবে দুই সাবেক অধিনায়ক নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম এবং অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিংয়ের কথা আলাদা করে উল্লেখ করেন মরগান, তিনি বলেন, ম্যাককুলাম ছিল আমার ভাল বন্ধু। সুযোগ পেলেই তার সঙ্গে কথা হতো। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক হিসেবেও সে ছিল অনন্য। ও আমাকে প্রায় বলতো ভাল অধিনায়ক হতে তোমার মাথাটাও কাজে লাগাতে হবে। আর তোমার জন্য বাড়তি সুবিধা যে তুমি একজন ব্যাটসম্যান। সতীর্থদের মাঝে বারুদ ছড়িয়ে দেয়ার অস্ত্র তোমার নিজেরই হাতে। আগে অথবা পরে যখনই ব্যাট কর চেষ্টা করে স্ট্রাইক রেট যেন ১২০-এর ওপরে থাকে, তবে তোমরা ৩৫০ এমনকি ৪০০ রানও করতে পারবে। বদলে যাওয়া ইংল্যান্ড এখন ঠিকই অনায়াসে ৩৫০ রান করছে। এমনকি পরে ব্যাটিং করেও। একাধিকবার ফাইনালে উঠে এখন পর্যন্ত শিরোপার ছোঁয়া হয়নি ইংল্যান্ডের। এবার ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ। নাম্বার ওয়ান হিসেবে অধরা সেই স্বপ্ন পূরণের হাতছানি। এ জন্য ‘ফেবারিটের’ চাপ সামলে সেরাটা দিতে চান মরগান। তিনি বলেন, নিজ দেশে ফেবারিটের ট্যাগ, এখন চাপমুক্ত থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমার বিশ্বাস এবার আমরা সেরা সাফল্য পাব। বিশ্বকাপ নিয়ে আমি খুবই রোমাঞ্চিত। স্বপ্নে বিভোর মরগানের কাছে চাপ জয় করে সামর্থ্যরে সেরাটা দেয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলার চাপ অবশ্যই থাকবে। তবে আমরা সেই চাপ নিতে প্রস্তুত। গত তিন বছরে আমরা অনেক পরিপক্ব হয়েছি। তাই চাপমুক্ত হয়ে দল ভাল খেলতে পারবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। তিনি আরও বলেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে প্রায় সব সিরিজেই আমাদের গায়ে ফেবারিটের তকমা ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আমরা সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিলাম। এরপর প্রত্যক সিরিজে ফেবারিট তকমা নিয়ে সাফল্য পাওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে এখন ছেলেরা ফেবারিট বা আমরাই সেরা এসব নিয়ে ভাবে না। প্রতিটি ম্যাচেই জিততে মরিয়া হয়ে মাঠে নামে। মরগান বলেন, ফেবারিট তকমার সঙ্গে সবাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বিশ্বকাপের জন্য ভালভাবে নিজেদের প্রস্তুত করা এবং ভাল পারফর্মেন্স করা। কয়েক বছরে নিজেদের খেলার কৌশল পাল্টে সাফল্য পাওয়ায় খুশি মরগান, গত কয়েক বছরে আমাদের খেলার কৌশল বিকশিত হয়েছে। আমরা অনেক পরিবর্তন করেছি। খুব আগ্রাসী খেলতাম আমরা। সেখান থেকে কিছুটা সরে এসেছি। এখন ইতিবাচক, পরিকল্পনামাফিক ও প্রাণবন্ত ক্রিকেট খেলি আমরা। আমরা যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছি কিন্তু বিশ্বকাপ ভিন্ন একটি মঞ্চ। আপনাকে বিশ্বের সেরা দলগুলোর বিপক্ষে খেলতে হবে। আমরা নিজেদের সেরা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আমরা চাইছি কালই আমাদের প্রথম ম্যাচ হয়ে যাক। এবারের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে নিয়ে যে হারে মাতামাতি হচ্ছে তাতে অনেকেই যেন দলটির হাতেই শিরোপা দেখতে পাচ্ছেন। ২০ বছর পর বিশ্বকাপ আয়োজন করেই দলটি অধরা বিশ্বকাপ জয়ের দেখা পেয়ে যাবে কি না সেটি আপাতত পরের প্রশ্ন। তবে ইংলিশ ক্রিকেটারদের নিয়ে সমর্থকদের প্রত্যাশা আর আশা কেন এত বেশি সেটি তাদের জানা আছে বলেই জানিয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক মরগান। তিনি আরও বলেন, আমাদের নিয়ে কেন এত প্রত্যাশা সেটা নিয়ে আমরা সবসময়ই কথা বলি। প্রত্যাশা এমন কিছু নয় যে গরম বাতাস থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ঘরের মাটিতে আমরা বড় ইনিংস দাঁড় করিয়েছি যা আমাদের দলকে আত্মবিশ্বাসে পূর্ণ করেছে। আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি কোন না কোন কারণেই আমাদের ওপর সবার এত প্রত্যাশা কাজ করছে।
×