ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফিদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর লড়াই

প্রকাশিত: ১০:০০, ২৮ মে ২০১৯

মাশরাফিদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর লড়াই

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ভারতকে হারাতে পারলেই অনেক কিছুর সমাধান মিলে যাবে। বাংলাদেশ দলের জন্য একটি মানসিক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারত। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোয় গিয়ে এই ভারতের কাছে হেরেই বিদায়ঘণ্টা বেজেছে বাংলাদেশের। ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপ, ২০১৬ টি২০ এশিয়া কাপের ফাইনাল, ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল, ২০১৮ সালে নিদাহাস টি২০ ট্রফির ফাইনাল এবং ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ ফাইনাল শুধুই দুঃসহ স্মৃতি। গত ৪টি ওয়ানডেতে ভারতের কাছে পরাজয় হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ টানার আরেকটি সুযোগ। বিশ্বকাপের মূল লড়াইয়ে মুখোমুখি হওয়ার আগে আজ আইসিসি নির্ধারিত প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। যদিও এটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া ম্যাচ নয়, তবে মানসিক বাধা কাটিয়ে ওঠার জন্য জয় পাওয়াটা অপরিহার্য বাংলাদেশ দলের জন্য। তাছাড়া মূল লড়াইয়ে নামার আগে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচ হওয়াতে ভাল ফলাফল অবশ্যই ক্রিকেটারদের বাড়তি অনুপ্রেরণা দেবে। উভয় দলের শেষ প্রস্তুতি ম্যাচ এটি। ম্যাচটি কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন্সে বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ভারতের সঙ্গে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের রেকর্ড তেমন একটা ভাল নয়। ৩৬টি ম্যাচ খেলেছে দু’দল। মাত্র ৫ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ, ২৯ জয় ভারতের। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত ও আরেকটিতে ফলাফল পর্যন্ত পৌঁছেনি। সর্বশেষ ৪ বছর আগে টানা দুই ম্যাচ ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ দল। এরপর টানা চারটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়ানডে হেরেছে মাশরাফির দল। বিশেষ করে এই চারটির মধ্যে ছিল ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল, গত বছর এশিয়া কাপ ফাইনাল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ দু’টি ম্যাচে নামার আগে তুঙ্গে ছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু ভারতের কাছে গিয়ে আর পেরে ওঠেনি। আর দলটির সঙ্গে সাক্ষাতও ঘটেছে একেবারে মহাগুরুত্বপূর্ণ ও ডু অর ডাই ম্যাচে। গত চার/পাঁচ বছর ধরে এশিয়া মহাদেশে তাই ভারতের চরম প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ দল। না জিততে পারলেও এখন আর ভারতীয়দের জন্য আতঙ্ক তৈরি করার মতো দল শুধু টাইগাররাই আছে সেটি পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ দল। সেখান থেকেই দু’দলের ক্রিকেটীয় শত্রুতার সূত্রপাত। সেই ম্যাচে বিতর্কিত ও সমালোচিত আম্পায়ারিংয়ে পিষ্ট হয়ে বাংলাদেশ দল হেরে বিদায় নিয়েছিল। অথচ গ্রুপপর্বে দুর্ধর্ষ ছিল টাইগাররা। ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে সেমিতে উঠেছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু এবারও ভারতের কাছে স্নায়ুচাপের ম্যাচে পরাজয়। গত বছর এশিয়া কাপ ফাইনালে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতীয়দের আতঙ্কিত করা দল শেষ পর্যন্ত উত্তেজনায় বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি। এরপরও শেষ বল পর্যন্ত শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের ভারতকে খেলতে হয়েছিল নাটকীয় জয় তুলে নিতে। বড় তিনটি ওয়ানডে ম্যাচের মর্মবেদনা নিয়ে আজ সোফিয়া গার্ডেন্সে ভারতের সঙ্গে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। এই মাঠেই ক্রিকেটের মহাপরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবার হারিয়েছিল টাইগাররা। সেই মাঠে গত রবিবার আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচ পাকিস্তানের বিপক্ষে হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তা হয়নি। এবার ভারতের বিপক্ষে সেখানেই নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। কিছুদিন আগে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম শিরোপা জিতে এসেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে হয়তো ভারত খেলেনি বলেই সেটি সম্ভবপর হয়েছে! এবার ভারতের বিপক্ষে মানসিক বাধা কাটিয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ। প্রস্তুতি ম্যাচ হলেও এই ম্যাচ জিততে পারলে বিশ্বকাপের মূল লড়াইয়ে নামার আগে আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বেড়ে যাবে বাংলাদেশ দলের। কারণ গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে ও বড় মঞ্চে বারবারই ভারত চরম দুঃখ উপহার দিয়েছে। প্রস্তুতি ম্যাচ হলেও তাই এই ম্যাচে জিততে পারলে মানসিকভাবে অনেকখানি ভারমুক্ত হতে পারবে বাংলাদেশ দল। কোচ স্টিভ রোডসও জয় চেয়েছেন। আর কিছুদিন আগে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল জেতানোর নায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও জানিয়েছিলেন, ভারতকে হারাতে চান। সেটি অবশ্য বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে। কিন্তু এর আগেই যদি আজ কোহলিদের হারিয়ে দিতে পারেন মাশরাফিরা, তাহলে মানসিক দৃঢ়তা আরও সবল হবে। ইংল্যান্ডের মাটিতে এখন পর্যন্ত কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি। এ কারণেও এ ম্যাচটি বিশ্বকাপে নামার আগে মহাগুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ দলের জন্য। ভারত প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাপকভাবে ভরাডুবির শিকার হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের বোলাররা রীতিমতো নাজেহাল করেছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। তাই এবার তাদেরও শেষ পরীক্ষা। বরাবরের মতো এবারও বাংলাদেশকে হারাতেই উন্মুখ থাকবে তারা। আর এ জয়টি বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে অবতীর্ণ হওয়ার আগে কোহলিরা মনেপ্রাণেই চাইবেন মানসিকভাবে চাঙ্গা গয়ে ওঠার জন্য। তবে তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশী ক্রিকেটারদেরও ব্যক্তিগত কিছু চ্যালেঞ্জ থাকছে। দলগত আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর পাশাপাশি বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের পরীক্ষার মঞ্চ এই ম্যাচ। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ইনজুরি সমস্যায় বোলিং করতে পারছিলেন না, আজ থেকেই তিনি হয়তো বোলিং শুরু করবেন। প্রস্তুতি ম্যাচেই সেটি করতে পারলে তারজন্য মূল ম্যাচে বোলিংয়ে যাওয়াটা সহজ হবে। আবু জায়েদ রাহী, মোসাদ্দেক, সাব্বির রহমান, রুবেল হোসেন ও লিটন দাসদের জন্য আরও বড় পরীক্ষা। তারা ভাল করতে পারলে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই একাদশে সুযোগ মিলে যেতে পারে। কারণ এই মুহূর্তে সব ক্রিকেটারই ফর্মে থাকায় একাদশে ঠাঁই পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। তাই সবাই চাইবেন এ ম্যাচে দারুণ কিছু করে নির্বাচক, অধিনায়ক, কোচ, টিম ম্যানেজমেন্টের নজর কাড়তে।
×