ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১০ রোহিঙ্গার খুনী ৭ সেনাকে ছেড়ে দেয় মিয়ানমার

হত্যাকারীদের গোপনে মুক্তি

প্রকাশিত: ০৯:৫০, ২৮ মে ২০১৯

হত্যাকারীদের গোপনে মুক্তি

গোপনে রাখাইনে ১০ রোহিঙ্গা হত্যায় দোষী সাব্যস্ত সাত সেনা সদস্যকে গোপনে মুক্তি দিয়েছে মিয়ানমার। পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশে ২০১৭ সালে সেনা অভিযানের সময় শিশুসহ ১০ রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যার দায়ে ১০ বছরের সাজা দেয়া হয়েছিল তাদের। কিন্তু সাত মাস না যেতেই গোপনে তাদের ছেড়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। দুই কারা কর্মকর্তা, দুই সাবেক বন্দী ও মুক্তি পাওয়া এক সৈনিকের বরাত দিয়ে সোমবার রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। ওই দুই বন্দী বলেন, গত নবেম্বরে এই সৈনিকদের মুক্তি দেয়া হয়। এর মানে - ইন দিন গ্রামে হত্যাকান্ডের দায়ে ১০ বছরের কারাদ-ের সাত মাস ভোগ না করতেই তারা ছাড়া পেলেন। ওই হত্যাকান্ডের ঘটনা উন্মোচনকারী রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের চেয়েও কম সাজাভোগ করেছেন তারা। সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ও রাষ্ট্রের গোপন তথ্য হস্তগত করার দায়ে ১৬ মাস কারাভোগ করেছেন। গত ৬ মে রাষ্ট্রীয় ক্ষমার আওতায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। রাখাইনের সিটওয়ে কারাগারের চীফ ওয়ার্ডেন উইন নেইং ও রাজধানী নেপিডোর জ্যেষ্ঠ এক কারা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন যে, দন্ডিত ওই জওয়ানরা কয়েক মাস ধরে কারাগারে নেই। নাম প্রকাশ না করে নেপিডোর ওই কর্মকর্তা বলেন, সামরিক বাহিনী তাদের সাজা কমিয়ে দিয়েছে। বিস্তারিত তথ্য দিতে অস্বীকার করে ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, তাদের কখন মুক্তি দেয়া হয়েছে তা তাদের জানা নেই, যেটা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশও করা হয়নি। এ বিষয়ে সামরিক মুখপাত্র জা মিন তুন ও তুন তুন নয়ি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। দুই বছর আগের রাখাইনে সেনা অভিযানের সময় বর্বর নিপীড়নের মুখে সাত লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ওই ঘটনায় এই সাত সৈনিক একমাত্র নিরাপত্তা সদস্য যাদের সাজা দেয়া হয়েছে বলে সামরিক বাহিনী জানিয়েছে। ওই সেনা অভিযানকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলছেন, ওই ঘটনায় গণহত্যা, দলবেঁধে ধর্ষণ ও ব্যাপক অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তবে মিয়ানমার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বৃহস্পতিবার ফোনে যোগাযোগ করা হয় দন্ডপ্রাপ্ত জিন পেইং সোয়ের সঙ্গে, যিনি সাজা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ফোনে তিনি নিশ্চিত করেন যে, সাজাপ্রাপ্ত সাতজনের মধ্যে তিনি একজন এবং বর্তমানে তিনি মুক্ত জীবনযাপন করছেন। কিন্তু তিনি এর বেশি বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমাদের চুপ থাকতে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপের হামলার জবাবে ২০১৭ সালে উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইনের শতশত গ্রামে অভিযান শুরু করা হয়। রয়টার্স ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক প্রতিবেদনে হত্যাকান্ডের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে। বৌদ্ধ ও মুসলিম গ্রামবাসী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ইন দিন গ্রাম থেকে সমগ্র মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে বিতাড়িত করতে সশস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বর্বর হিসেবে পরিচিত ৩৩তম লাইট ইনফ্যানট্রি ডিভিশনের সেনারা রোহিঙ্গাদের হত্যা, বাড়িঘরে লুটপাট এবং সবকিছু জ্বালিয়ে দেয়। বর্বর এসব সেনাকে সহযোগিতা করে আধাসামরিক পুলিশ সদস্যরা এবং উগ্রপন্থী কিছু বৌদ্ধ। ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর গ্রামের লোকজন ও সেনা সদস্যরা ১০ রোহিঙ্গাকে আটক করে। সামরিক বাহিনী জানায়, আটকরা সন্ত্রাসী। কিন্তু তাদের পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা কৃষক, বিদ্যালয়ের ছাত্র ও একজন ধর্মীয় শিক্ষক। প্রত্যক্ষদশীরা জানান, পরের দিন সকালে গ্রামের বৌদ্ধরা এসব রোহিঙ্গার কয়েকজনকে তলোয়ার দিয়ে জবাই করে। বাকিদের গুলি করে হত্যা করে সেনারা। এরপর তাদের একটি স্থানে পুঁতে রাখা হয়। রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন (৩৩) ও কিয়াও সোয়ে ও (২৯) ১০ রোহিঙ্গার কবর দেয়ার স্থানটি খুঁজে বের করেন এবং তাদের হত্যার আগের ও পরের ছবি সংগ্রহ করেন। হত্যাকান্ডের তদন্তকালে এই দুই সাংবাদিককে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে গ্রেফতার করা হয়। পরে দাফতরিক গোপনীয়তা আইনের আওতায় তাদের সাত বছরের সাজা দেয়া হয়। পরে এক পুলিশ কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন যে, সিনিয়র এক পুলিশ কর্মকর্তা দুই সাংবাদিককে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের এপ্রিলে যখন হত্যাকান্ডের বিষয়ে তদন্ত শুরু করা হয়, তখন সামরিক বাহিনী জানায়, চার কর্মকর্তা ও তিন সেনা সদস্যকে চাকরি থেকে অব্যাহতি এবং তাদের ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে তাদের নাম কিংবা হত্যাকান্ডে তাদের ভূমিকার বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। -ইয়াহু নিউজ
×