ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাটকল শ্রমিকদের জন্য ১৬৯ কোটি টাকা ছাড়

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ২৮ মে ২০১৯

 পাটকল শ্রমিকদের জন্য ১৬৯ কোটি টাকা ছাড়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পাটকল শ্রমিকদের বেতন ও ভাতার জন্য জরুরী বিবেচনায় ১৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয় এ বরাদ্দের অর্থ ছাড় করেছে। এ অর্থ শ্রমিকদের এ্যাকাউন্টে চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করা এবং বেতন-ভাতা ছাড়া এ অর্থ অন্যকোন খাতে ব্যবহার করা যাবে না বলে শর্ত দেয়া হয়েছে। এদিকে সাধারণ শ্রমিকরা বলছে, ঈদের আগে অর্থ বরাদ্দ করায় সরকারকে ধন্যবাদ। তবে এটা যেন শুধু সান্ত¡না না হয়। তারা বলছে, নয় দফা দাবি আদায়ের জন্য শ্রমিকরা যে আন্দোলন করছিলেন তার মধ্যে কেবল একটি দাবি পূরণ হয়েছে। মজুরি কমিশনসহ বাকি ৮ দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় শ্রমিকরা এখনও হতাশ। এদিকে, অর্থ বরাদ্দ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আপতকালীন জরুরী বিবেচনা এবং আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে শ্রমিকদের বকেয়াসহ মজুরি ও উৎসব ভাতা পরিশোধের জন্যই এ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বকেয়া বেতন, মজুরি ও উৎসব ভাতার দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন স্থানে পাটকল শ্রমিকেরা আন্দোলন করে আসছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার এই বরাদ্দ এলো। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বরাদ্দ সংক্রান্ত চিঠিতে ছয় দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, বরাদ্দ দেয়া অর্থ বিজেএমসির কারখানাগুলোর জন্য যে খাতে দেয়া হয়েছে, এর বাইরে অন্য কোন খাতে দেয়া যাবে না। আর সুনির্দিষ্ট ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট পে-চেকের মাধ্যমে তা দিতে হবে। চিঠির শর্ত অনুযায়ী, বরাদ্দ দেয়া অর্থ ব্যয়ের সাত দিনের মধ্যে মিলভিত্তিক শ্রমিকদের তালিকাসহ বিস্তারিত বিবরণী অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে। বরাদ্দ দেয়া অর্থ ব্যয়ে সরকারী বিধিবিধান মানার জন্যও বলা হয়েছে। আর এর ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে বলেও সাবধান করে দেয়া হয়েছে। আর এ জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় বিজেএমসি ও অর্থ বিভাগের মধ্যে স্বাক্ষর করা শর্তগুলো মেনে চলার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে যে অর্থ বরাদ্দ হলো, তা ‘পরিচালন ঋণ’ হিসেবে গণ্য করা হবে বলে চিঠিতে জানানো হয়। আগামী ২০ বছরে ৫ শতাংশ সুদে প্রতি ছয় মাসের কিস্তিতে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আর এ জন্য অর্থ বিভাগের সঙ্গে বিজেএমসিকে একটি ঋণ চুক্তি করতে হবে বলেও জানানো হয়েছে। চিঠিতে শেষে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, বরাদ্দ দেয়া অর্থ কেবল শ্রমিকদের বকেয়াসহ মজুরি এবং উৎসব ভাতা হিসেবে পরিশোধ করতে হবে। লোকসানী প্রতিষ্ঠান বিজেএমসির (বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন) ওপর আস্থার অভাবেই এই প্রতিষ্ঠানের কাছে শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা দিতে ভরসা পায়নি সরকার। আর সে জন্য শ্রমিকদের মজুরির টাকা বিজেএমসির কাছে দেয়া হবে না, সরকারী কোষাগার থেকে সরাসরি শ্রমিকদের নিজস্ব এ্যাকাউন্টে জমা দেয়া হবে বলে কিছুদিন আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। প্রসঙ্গত, বকেয়া বেতন, মজুরি ও উৎসব ভাতার দাবিতে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাটকল শ্রমিকেরা আন্দোলন করে আসছিলেন। গত ৫ থেকে খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি পাটকলে কর্মবিরতি শুরু হয়ে ১৩ মে থেকে সারাদেশের ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে এ কর্মবিরতি ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে গত ২১ মে মঙ্গলবার তিনটি শর্তে পাটকল শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়। ওইদিনই সন্ধ্যায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। পরবর্তীতে খুলনার জেলা প্রশাসন, বিজেএমসি ও শ্রমিকদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে টানা ১৫ দিনের আন্দোলন স্থগিত করা হয়।
×