ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আল বিদা মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ২৮ মে ২০১৯

 আল বিদা মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ রমজানুল মুবারকের আজ ২২তম দিবস। আজ যাকাত দানের নিসাব বা উপযুক্ততা সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা। কোন ব্যক্তির মৌলিক প্রয়োজন পূরণের পর কমপক্ষে যে পরিমাণ মাল তার মালিকানায় বিদ্যমান থাকলে তার ওপর যাকাত প্রদান করা ফরজ হয়, সে পরিমাণ মালকে ‘নিসাব’ বলে। বিভিন্ন মালের নিসাব বিভিন্ন ধরনের। যেমন রৌপ্যের নিসাব ‘বায়ান্ন তোলা’,স্বর্ণের সাড়ে সাত তোলা এবং নগদ টাকার নিসাব সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা বায়ান্ন তোলা রূপা বাজার দরের ‘সমপরিমাণ’। ওই মালের চল্লিশভাগের এক ভাগ অর্থাৎ শতকরা আড়াই ভাগ যাকাত হিসেবে প্রদান করতে হবে। এ হিসাবে অতিরিক্ত মালের ওপরও যাকাত ফরজ হবে। যাকাত নগদ অর্থ দ্বারাও পরিশোধ করা যায়। বছরের শুরুতে ও সমাপ্তিতে নিসাব বিদ্যমান থাকা জরুরী। মাঝখানে কোন সময় এ পরিমাণ না থাকলেও যাকাত বাধ্যতামূলক হবে। বছরের শুরুতে নিসাব পরিমাণ মাল বিদ্যমান থাকলে এবং শেষে না থাকলে বা এর বিপরীত হলে যাকাত প্রদান বাধ্যতামূলক হবে না। কোন কোম্পানি বা যৌথমূলধনী কারবারি কোম্পানি কর্তৃক অংশীদারগণকে প্রদত্ত মূলধনের অংশকে ‘শেয়ার’ বলে। শেয়ার যদি স্টক এক্সেচেঞ্জ তালিকাভুক্ত করা হয়ে থাকে তবে তার বাজারদর অন্যথায় সার্টিফিকেটে লিপিবদ্ধ মূল্য অনুযায়ী যাকাত প্রদান করতে হবে। কোম্পানি স্ব উদ্যোগে শেয়ার হোল্ডারগণের যাকাত পরিশোধ করলে তারা দায়মুক্ত হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তাদের অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন হবে (নাযরিয়াত মিলকিয়াত ২/২৯)। ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঞ্চয়ী হিসেবে রক্ষিত অর্থের যাকাত প্রদান মেয়াদ শেষে বাধ্যতামূলক হবে। প্রাইজবন্ড, বীমা পলিসি, পোস্টাল সেভিংস সার্টিফিকেট, ডিপোজিট স্কিম ও অনুরূপ নিরাপত্তামূলক তহবিলে জমাকৃত অর্থের যাকাত প্রতিবছর যথানিয়মে পরিশোধ করতে হবে। এ জাতীয় অর্থ বা সম্পদ মালিকের দখলে আছে বলে গণ্য হবে।-(ইসলামের যাকাত বিধান ১/৬১৭-৮)। চাকরিজীবীর প্রভিডেন্ট ফান্ডে সঞ্চিত অর্থ তার কর্তৃত্বে সোপর্দ না করা পর্যন্ত তার ওপর যাকাত ধার্য হবে না। কোন মালের একাধিক মালিক থাকলে এবং তাদের প্রত্যেকের অংশ পৃথকভাবে চিহ্নিত বা বন্টিত না থাকলে এ মালকে যৌথ মালিকানাভুক্ত মাল বলে। এ প্রকৃতির মালের যাকাতের ক্ষেত্রেও একক মালিকানাভুক্ত মালে যাকাত বাধ্যতামূলক শর্তাবলী প্রযোজ্য হবে। কিন্তু ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর মতে মালিকগণের যাকাত ফরজ হওয়ার যোগ্যতা বিদ্যমান থাকলে (অর্থাৎ উভয়ে বালিগ ও মুসলিম হলে) তাদের যৌথ সম্পত্তির যাকাত যৌথভাবে আদায় করা যাবে। কারণ মহানবী (স.) বলেন, যাকাত পরিশোধের ভয়ে বিচ্ছিন্ন মালকে একীভূত এবং একীভূত মালকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।’ মূল্যবান পাথর যেমন হীরক, মণিমুক্তা ইত্যাদির তৈরি অলঙ্কারের ওপর যাকাত ধার্য হবে না। এ বিষয়ে সকল মাযহাবের ফকীহগণ একমত।-(মুয়াত্তা, ইমাম মুহাম্মদ-১৮৭)। বাড়ি-ঘর, দালান- কোঠা ও যানবাহনের ওপর যাকাত ধার্য হবে না। তবে এগুলো ভাড়ায় খাটিয়ে যে আয় পাওয়া যাবে তা মালিকের অন্যান্য আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং যথানিয়মে এর ওপর যাকাত ধার্য হবে।-(ইসলামে যাকাত বিধান,(১-৫৪২)। ব্যবসায়িক পণ্যের নিসাব স্বর্ণ ও রৌপ্যের নিসাবের সমপরিমাণ অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা বায়ান্ন তোলা রৌপ্যের সমপরিমাণ ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য হলে তার প্রতি চল্লিশ টাকায় এক টাকা যাকাত ধার্য হবে। ব্যবসায়ের কেবল আবর্তনশীল মূলধনের যাকাত প্রদান করতে হবে। ব্যবসায়ের স্থাবর সম্পত্তি, যেমন দালানকোটা, জমি, যন্ত্রপাতি ইত্যাদির ওপর যাকাত ধার্য হবে না।-(ইসলাম কা কানুন মাহাসিল, পৃ. ৯৬-৭)। মসজিদ, মাদ্রাসা বা অনুরূপ জনকল্যাণমূলক কাজের উদ্দেশ্যে ওয়াকফকৃত সম্পত্তির দ্বারা ব্যবসা করা হলেও তার ওপর যাকাত ধার্য হবে না। যেসব মালের ওপর সাধারণত : যাকাত ধার্য হয় না, সেসব মাল ব্যবসায়িক পণ্য হলে তার ওপর যাকাত ধার্য হবে। যেমন: পাথর, হীরক, মণিমুক্তা, আসবাবপত্র, তৈজসপত্র, কাঠ, বই-পুস্তক, যন্ত্রপাতি, যানবাহন ইত্যাদি। যাকাতের হিসেব কালে মোট সম্পত্তি হতে ঋণের মতো স্ত্রীর মোহর ও খোরপোষ বাবদ প্রাপ্য এবং সরকারকে প্রদেয় বকেয়া ট্যাক্স বিয়োগ হবে। যাকাত দাতার যাকাত প্রদানকালে বা মাল হতে যাকাতের অংশ পৃথক করাকালে তার অভিপ্রায় থাকতে হবে যে, সে তার যাকাত পরিশোধ করছে। অভিপ্রায়হীনভাবে সমস্ত মাল দান করলেও যাকাত আদায় হবে না। এ বিষয়ে ফকিহগণের মতৈক্য রয়েছে। মহানবী (স.) বলেন, কাজের ফলাফল তার অভিপ্রায় (নিয়ত) অনুযায়ী বিচার্য। ইমাম মালিক ও ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন, অন্তরে অভিপ্রায় (নিয়ত) বিদ্যমান থাকাই যথেষ্ট।
×