ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সীমিত পর্যায়ে চাল রফতানির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ২৮ মে ২০১৯

 সীমিত পর্যায়ে চাল রফতানির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

তপন বিশ্বাস ॥ এবার সীমিত পর্যায়ে চাল রফতানির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। আমন- বোরোসহ মোটা চাল রফতানির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজার খোঁজার নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জান গেছে। এছাড়া দ্রুত বিচার আইনের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ছে। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) আইন, ২০১৯ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা । পাশাপাশি মন্ত্রিসভা কাস্টমস আইন, ২০১৯-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা বৈঠকের শুরুতে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিগত তিন বছর আউশ-আমন-বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে দেশে খাদ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকিমুক্ত রেখে চাল রফতানি করা যায়। তার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং খাদ্যমন্ত্রী সাধান চন্দ্র মজুমদার। এতে বাজারদর বাড়বে এবং কৃষকও উপকৃত হবে। তবে কৃষক ও ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা করে রফতানি করা হবে। চাল রফতানির সিদ্ধান্ত নেয়া হলে বেসরকারী পর্যায়ে যে কেউ রফতানি করতে পারবেন। এতে কোন মিল মালিক হওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। লাইসেন্স থকালেও রফতানির সুযোগ পাবেন বলে সূত্র জানিয়েছে। সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বোরো চাল রফতানির চিন্তাভাবনা করছে সরকার। ধান কাটা শেষ হলে আগামী ২০ দিনের মধ্যে চাল রফতানির অনুমতি দেয়া হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র কারণে সারাদেশে ৩৮ কোটি ৫৪ লাখ দুই হাজার ৫০০ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর প্রভাবে ৩৫ জেলার প্রায় ৬৩ হাজার ৬৩ হেক্টর জমির ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আছে ধান, ভুট্টা, সবজি, পাট ও পান। দেশের চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত থাকায় ৫ থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন বোরো চাল রফতানির চিন্তা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বোরো ধান কাটা হয়ে গেলে সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব এবার ৫-১০ লাখ টন চাল রফতানি করা যায় কিনা। এই চাল রফতানি করলে কোন অসুবিধা হবে না। আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে যেতে পারব, দেশের ভাবমূর্তিও বাড়বে। তবে চাল রফতানির পর কোন কারণে সঙ্কট দেখা দিলে আমদানিও করা যাবে। ুবর্তমানে ধান উদ্বৃত্ত রয়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বোরো সঠিকভাবে ঘরে তুলতে পারলে আরও উদ্বৃত্ত হবে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে উদ্বৃত্ত ধান রফতানি করতে পারব। দেশে চাহিদার তুলনায় চালের মজুদ বেশি এমন তথ্য তুলে ধরে গত ১৮ এপ্রিল বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে চাল রফতানির প্রস্তাব দিয়েছেন চালকল মালিকরা। চাল রফতানি না করলে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবে বলেও যুক্তি দিয়েছেন তারা। তাদের এ প্রস্তাবে সম্মতি না দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি তখন বলেন, দেশে ধান-চালের উৎপাদন ও চাহিদা সম্পর্কে কৃষি ও খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। দ্রুত বিচার আইন দ্রুত বিচার আইনের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ছে। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) আইন, ২০১৯ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ অনুমোদনের কথা জানান। তিনি বলেন, এটার (দ্রুত বিচার আইন) একটা মেয়াদ থাকে, সেই মেয়াদ চলতি বছরের এপ্রিলে শেষ হয়ে গেছে। এজন্য মেয়াদ আরও ৫ বছর বাড়ানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দ্রুত বিচার আইন ২০০২ সালে করা হয়। আইনে বলা হয়েছিল, আইনটি আগামী ১৭ বছর পর্যন্ত চলবে। সেই ১৭ বছর শেষ হয়েছে ২০১৯ সালে। এখন ১৭-এর জায়গায় সংশোধন করে ২২ স্থাপন করা হচ্ছে। ২০০২ সাল থেকে ২২ বছর শেষ হবে ২০২৪ সালে। অর্থাৎ এখন এ আইনটি ২০২৪ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জানা গেছে, ২০০২ সালে দ্রুত বিচার আইনটি প্রথম কার্যকর করা হয়। তখন বলা হয়েছিল, ২ বছর পর্যন্ত এটি বলবৎ থাকবে। পরে বিভিন্ন সময় কার্যকারিতার মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০০৪, ২০০৬, ২০১২ সালে এ আইনের কার্যকারিতার মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালে মেয়াদ ৫ বছর বাড়ানো হয়েছিল। সেই মেয়াদ গত ৭ এপ্রিল শেষ হয়। চাঁদাবাজি, যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা, যানবাহনের ক্ষতি সাধন করা, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট করা, ছিনতাই, দস্যুতা, ত্রাস ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, দরপত্র ক্রয়-বিক্রয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ গুরুতর অপরাধ দ্রুততার সঙ্গে বিচারের জন্য আইনটি করা হয়েছে। বারবার কেন এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখনও এটার কার্যকারিতা রয়েছে। অনেক স্পর্শকাতর মামলা আছে যার দ্রুত বিচার হওয়া দরকার। এছাড়া একই বৈঠকে কাস্টমস আইন, ২০১৯-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি ১৯৭৯ সালের আইন। এটি ২০১৮ সালে সংসদে দিয়েছিল সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। কিন্তু ওখানে পাস হওয়ার আগেই সংসদ শেষ হয়ে যায়। এজন্য ওটা বাতিল হয়ে যায়। একই আইন আবার নতুনভাবে নিয়ে আসা হয়েছে। এতে নতুন কিছু নেই। ২০১৮ সালে যেটা চূড়ান্ত করা হয়েছে সেটা আবার নতুনভাবে উত্থাপিত হয়েছে ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
×