ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সানডে টাইমসে প্রকাশ তিনি টোরি পার্টিকে ‘উৎকোচ’ দিয়েছেন

জঙ্গী অর্থায়নে অভিযুক্ত কর্নেল শহীদ এখন লন্ডনে

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ২৮ মে ২০১৯

 জঙ্গী অর্থায়নে অভিযুক্ত কর্নেল শহীদ এখন লন্ডনে

ফিরোজ মান্না ॥ ব্রিটেনে গোল্ডেন ভিসায় বসবাসরত সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গী কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত কর্নেল শহীদ উদ্দিন খান টোরি পার্টিকে ২০ হাজার পাউন্ড উৎকোচ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। দেশেও তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে অর্থায়ন, অবৈধ অস্ত্র বিনিময়, জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধে অভিযুক্ত। সম্প্রতি কর্নেল শহীদ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য প্রকাশ হয়েছে। তিনি টোরি পার্টির ফান্ডে ২০ হাজার পাউন্ড উৎকোচ দেয়ার পর দলটিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। রবিবার ২৬ মে ইংল্যান্ডের জাতীয় ‘দৈনিক দ্যা সানডে টাইমস’ শহিদ উদ্দিন খানের টোরি পার্টিকে উৎকোচ দেয়া সংক্রান্ত সমালোচনা ও বাংলাদেশে তার অপরাধ এবং চলমান মামলার বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির দাতাকে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী সংগঠন, অবৈধ অস্ত্র বিনিময়, জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। উইম্বলডন, দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের ৫৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ শহিদ উদ্দিন খান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্নেল। ব্রিটিশ পত্রিকা ‘সানডে টাইমস’ বলেছে মি. খান কনজারভেটিভ পার্টিকে ২০ হাজার পাউন্ড দান করেছেন। ২০০৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের রাজধানীতে বসবাস করছেন তিনি। তখন তিনি এবং তার পরিবার নিশ্চিত করার জন্য বহু কোটি পাউন্ড ব্যয় করে ‘গোল্ডেন ভিসা’ কিনেছিলেন দেশটিতে বসবাস করার জন্য। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও নৈতিক স্খলনের দায়ে বরখাস্তকৃত ওই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জঙ্গীবাদে মদদ দেয়া, জঙ্গী অর্থায়ন, অস্ত্র ব্যবসা, প্রতারণা ও অর্থ পাচারের একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শহিদ উদ্দিনের ঢাকার বাসায় অভিযান চালিয়ে কাউন্টার টেররিজম পুলিশ জিহাদী বই, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে। ২০০৯ সালে মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করে ইংল্যান্ডের গোল্ডেন ভিসা সংগ্রহ করে শহিদ উদ্দিন খান দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের উইম্বলডনে পরিবারসহ বসবাস শুরু করেন। শহিদ এই অঞ্চলের ক্ষমতাসীন এমপি এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডকে ২০ হাজার পাউন্ড উৎকোচ বা অনুদান দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে পলাতক শহিদ উদ্দিনের বিষয়ে বাংলাদেশের আদালতকে পুলিশ লিখিতভাবে জানিয়েছে, গত বছর তার বাসায় অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক, অস্ত্র, আল-কায়েদার সম্পৃক্ত জিহাদী বই এবং জাল মুদ্রা উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তারা এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদ্রাসা ও ইসলামি শিক্ষার প্রসারের আড়ালে জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগ ৫৪টি ব্যাংক এ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছে। এছাড়া তথ্য-উপাত্ত বলছে, বাংলাদেশে এক সময়ে উচ্চ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী শহিদ উদ্দিন খান এখন যুক্তরাজ্যে জঙ্গী অর্থায়নে জড়িত রয়েছেন বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে ‘বাংলা ইনসাইডার’ নামের নিউজ পোর্টালের এক প্রতিবেদনে শহিদ উদ্দিন খান জোর দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা ও সাজানো। শহিদ উদ্দিন খান বাংলাদেশ সরকারকে স্বৈরাচারী, অপহরণকারী এবং দুর্নীতিপরায়ণ বলেও বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি জঙ্গী অর্থায়ন করার মতো গুরুতর অভিযোগও অস্বীকার করেছেন। এছাড়া শহিদ উদ্দিন খান অভিযোগ করেন, গত বছর তার ঢাকার বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের নামে ভাংচুর করা হয়েছে। তার কর্মচারীদের অপহরণ করা হয়েছে। এমনকি তার আইনজীবীদেরও অপহরণ করার অভিযোগ করেছেন তিনি। যদিও তখন বাংলাদেশের গণমাধ্যমে শহিদ উদ্দিনের এমন অভিযোগ নিয়ে কোন সংবাদ প্রচার করা হয়নি। ইংল্যান্ডের জাতীয় দৈনিক দ্যা সানডে টাইমস শহিদ উদ্দিনের এই অভিযোগ একপেশে ও পক্ষপাতমূলক বলেই মনে করেছে । প্রায় দশ বছর পূর্বে শহিদ উদ্দিন খান বিনিয়োগ ভিসা ক্রয় করে পরিবারসহ বসবাস শুরু করেন। এই ভিসার বিশেষত্ব হলো, ২ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করলে ইউরোপের বাইরের যেকোন দেশের নাগরিক ইংল্যান্ডে তিন বছর ৪ মাস মেয়াদের ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়া দু’বছর পর বাড়তি আরও ১০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতে পারবেন যেকোন বিনিয়োগকারী। যদিও তথ্য-উপাত্ত বলছে, বাংলাদেশে অপরাধ করে অর্জিত অর্থ দিয়ে উইম্বলডন এলাকায় সম্পদ ক্রয় করেছেন শহিদ। জানা গেছে, চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা শহিদ উদ্দিন খানের শেহতাজ নামের এক মেয়ে রয়েছে, তিনি ২০১৭ সালে ব্যারিস্টারি পাস করেন। সম্প্রতি তার ফেসবুক পেজে শেহতাজ বাংলাদেশে কাতার ভিত্তিক আল-জাজিরা চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ার জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। বাংলাদেশ সরকার জোরপূর্বক নাগরিকদের অধিকার খর্ব করছে। সরকার জোরপূর্বকভাবে দেশটির নাগরিকদের অত্যাচার করছে এবং নাগরিকদের বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। গত ১০ বছরে ভূমি জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন শহিদ। এই অভিযোগে গত মাসে একটি জালিয়াতি মামলায় তার অনুপস্থিতিতে ৫ বছরের সাজা ঘোষণা করে আদালত। পুলিশ বলছে, শহিদ উদ্দিন খানের বাসায় অভিযান চালিয়ে ৫০টি বিস্ফোরক দ্রব্য, ২টি বন্দুক, ২টি শটগান, ৭টি জিহাদী বই যার মধ্যে একটি আল-কায়েদা নেতা আইমান আল-জাওয়াহিরির সম্পর্কিত। এছাড়া বাকি বইগুলো বাংলাদেশে তথাকথিত খলিফার সম্পর্কিত লেখা। রাজনৈতিক অনুদানের বিষয়ে দ্যা সানডে টাইমসের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শহিদ উদ্দিন খান। যদিও টোরি পার্টির অনুদানের রেজিস্টারে তার নামে অনুদানের অঙ্ক দেখালে শহিদ বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডকে তিনি পছন্দ করেন। কারণ, হ্যামন্ড তার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়। এছাড়া তার ছোট মেয়ের স্কুলের কাগজপত্র সংক্রান্ত ঝামেলায় একবার হ্যামন্ড সহায়তা করেছিলেন, যার কারণে খুশি হয়ে পার্টি ফান্ডে ২০ হাজার পাউন্ড অনুদান দিয়েছিলেন শহিদ। এদিকে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে অর্থায়ন, অবৈধ অস্ত্র বিনিময়, জালিয়াতি ও অর্থ লন্ডারিং অপরাধে অর্থ প্রদানের অভিযোগে একটি টোরি দাতাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
×